আইনপেশায় নবীনদের উৎসাহিত করতে এবং আদালতে নবীন আইনজীবীদের উপস্থিতি বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে প্রতিবেশি দেশ ভারতের ন্যায় মাসিক ভাতা প্রদান করা উচিৎ বলে মনে করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ফারজানা সুলতানা। নবীন আইনজীবীরা যাতে এই রাজকীয় ও সম্মানজনক পেশায় প্রবেশ করে নিজেকে নিবেদিত করার অনুপ্রেরণা পায় সেজন্য এ ভাতা ‘অনুপ্রেরণা ভাতা’ (Inspiration Allowance) বা সম্মানজনক অন্যকোন নামে চালু করা যেতে পারে বলেও তিনি প্রস্তাব করেন।
সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে তাঁর এক স্ট্যাটাসে তিনি লিখেছেন, ‘আইনপেশায় মোটামুটি নিজের একটা অবস্থান গড়তে প্রায় ৫ থেকে ৭ বছর লেগে যায়।
বাংলাদেশের প্রায় সব বাবা-মা ই একটা সন্তানকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করা পর্যন্ত তাদের সামর্থ্য অনুসারে আর্থিক খরচ সহ সব ধরণের সহযোগীতা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করে থাকে।
স্নাতকোত্তর পাস করার পর প্রায় প্রত্যেক বাবা-মা ই চায় তাদের সন্তান একটা পেশাগত পরিচয় লাভ করুক,আত্ননির্ভরশীল হোক। মেয়েদের ক্ষেত্রে এই চিন্তা শিথিল হলেও ছেলেদের ক্ষেত্রে অধিকাংশই না।
অন্যান্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাস করে যখন কোন ছেলে বা মেয়ে বিসিএস ক্যাডার, বেসরকারি বিভিন্ন সেক্টর যেমন বেসরকারি ব্যাংক, বীমা, বহুজাতীয় বিভিন্ন কোম্পানি, গার্মেন্টস, আইটি ফার্ম ইত্যাদিতে নির্ধারিত বেতনের একটা চাকুরী করে সেখানে আইনের ছাত্র- ছাত্রীরা তাদের পেশাগত পরিচয় (আইনজীবী) লাভ করার পরও অন্তত ৫ বছর পর্যন্ত বলতে পারেনা যে- “মাসে আমি ২০,০০০/ বা ৩০,০০০/ টাকা উপার্জন করি”!! যদি না তার নিজের পরিবারের কেউ আইনজীবী থাকে!
স্কুল বা কলেজ বন্ধু যখন একান্ত আলাপচারীতায় বলে চাকুরীতে যোগদানের প্রথম মাস থেকেই ৩০,০০০/ টাকা বেতন পাচ্ছে,বাড়ি ভাড়া ও যাতায়াত সুবিধা পাচ্ছে, বছরে ২টি উৎসব বোনাস, বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ পাচ্ছে সেখানে নবীন আইনজীবী তার বন্ধুর কথা মনোযোগ সহকারে শুনে তাকে অভিনন্দন দিয়ে আলাপচারীতাকে অন্যদিকে মোড় নিয়ে নেয় বা অজুহাত দিয়ে ঐদিন তার বন্ধুর কাছ থেকে কৌশলে বিদায় নিয়ে নেয়!!
তাই আইনে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে এবং আইনজীবী হিসাবে নিম্ন আদালতে তালিকাভুক্ত হওয়ার ৫ বছর পর্যন্ত কোন একজন বিজ্ঞ আইনজীবীকেও আর যাতে হতাশ না হতে হয়, আইনপেশা থেকে ঝরে না পড়তে হয় এই ব্যাপারে-
আশা করি সারা বাংলাদেশের আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচিত সদস্যগণ আইন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংসদে এই বিল তুলে পাস করিয়ে নবীন আইনজীবীদের যারা নিম্ন আদালতে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্তির দিন হতে ৫ বছর অতিক্রান্ত করবে যদিও ঐ আইনজীবীরা এর মধ্যে হাইকোর্ট বিভাগে আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হয়ে যায় তাদেরকে মাসিক ৫০০০ টাকা করে ভাতা দিবে।
আর আইন পেশা যেহেতু একটি রাজকীয় পেশা তাই এই ভাতাকে যাতে কোনদিক থেকেই নেতিবাচক চোখে না দেখা হয় বরং সম্মানের চোখে দেখা হয় তাই এর একটা সম্মানজনক নাম দেওয়া উচিৎ। উদাহরণ স্বরুপ- নবীন আইনজীবীরা যাতে এই রাজকীয় ও সম্মানজনক আইনপেশায় প্রবেশ করে নিজেকে নিবেদিত করার অনুপ্রেরণা পায় ও এই অনুপ্রেরণা নিয়ে এই পেশায় এগিয়ে যায় তাই এর নাম দেওয়া যেতে পারে অনুপ্রেরণা ভাতা (Inspiration Allowance) বা সম্মানজনক অন্যকোন নাম।
আসছে মে মাসের ১৪ তারিখ বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচন। এই নির্বাচনে আমার জুনিয়র আইনজীবী ভাই-বোনের কাছে অনুরোধ থাকবে তারা যেন গ্রুপ করে (একটি নির্দিষ্ট আইনজীবী সমিতির ব্যানারে অর্থাৎ তাদের মাদার বারের ব্যানারে) বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ‘সচিব’ বা ‘চেয়ারম্যান’ এর বরাবরে তাদের দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি লিপি তুলে ধরে। আর তারা যদি তাদের অধিকার আদায়ে অঙ্গিকারবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ থাকে বার কাউন্সিলের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাওয়া প্রার্থীগণ (যিনি যেই দলের ব্যানারেই নির্বাচন করুক না কেন) নবীন আইনজীবীদের এই দাবি আমলে নিবেন!
নবীন আইনজীবীদের রাজনৈতিক মতাদর্শ একে অন্যের থেকে ভিন্ন হলেও যার যার রাজনৈতিক মতাদর্শের প্রার্থীগণের কাছে গ্রুপ করে তাদের স্ব-স্ব দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে ধরলে কোন দলের প্রার্থীগণই তাদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে না নিয়ে পারবেনা!
ভারত একটি জনবহুল ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ দেশ হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় বার কাউন্সিল এবং এর প্রায় অধিকাংশ অঙ্গরাজ্য সরকার নবীন আইনজীবীদের এই ফি দিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্র ভারত। আমরা প্রায় সবকিছুতেই ভারতকে অনুসরণ করি। তাহলে এই ব্যাপারে কেন নয়???’