নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ঘুষ গ্রহণকারী আলোচিত সেই সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
আজ রোববার (২৫ মার্চ) দুপুরে ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) খান মো. আব্দুল মান্নান তাকে বরখাস্ত করেন।
সেই বরখাস্তের চিঠি দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠানো হয়। ওই চিঠি পাওয়ার পর পরই তা বন্দর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সাব রেজিস্ট্রার সাবিকুন নাহার জানান, আড়াইহাহার উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলের সরকারি অফিসে বসে টেবিলে ড্রয়ার খুলে ঘুষ নিয়ে ফাইল সই করার ভিডিও চিত্র সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিও নিয়ে গণমাধ্যমেও সংবাদ প্রকাশের পর তাকে আড়াইহাজারের অতিরিক্ত দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার ও বন্দর উপজেলা সাব রেজিস্ট্রারের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন,‘রবিবার সকালে সাব রেজিস্টার এসহাক আলী মণ্ডলকে আড়াইহাজার থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। তার পরিবর্তে রূপগঞ্জের সাব-রেজিস্টার রেজাউল করিম বকশিকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলকে ঘুষ গ্রহণের বিষয়টি নিয়ে শোকজ করা হয়েছে। আগামী ২৮ মার্চের মধ্যে সেই শোকজের জবাব দিতে বলা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এখন তার বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
জেলা রেজিস্ট্রার জানান,‘রবিবার দুপুরে ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ রেজিস্ট্রেশন (আইজিআর) খান মো.আব্দুল মান্নান আড়াইহাজারে সরেজমিন পরিদর্শন আসেন এবং দলিল লেখকসহ উপজেলা রেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে এছহাক আলী মণ্ডলের ঘুষ নেওয়ার বিষয়টির প্রথমিক সত্যতা পান। তারপরই তাকে আড়াইহাজার থেকে প্রত্যাহার ও বন্দর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসারের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।’
আড়াইহার উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ভূইয়া জানান, আড়াইহাজার জেলার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা। তাঁত সমৃদ্ধ এই উপজেলায় প্রতিদিনই জমি বেচাকেনা হয়। কিন্তু নিয়মিত সাব-রেজিস্ট্রার না বসার কারণে ক্রেতা বিক্রেতাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। এজন্য আড়াইহাজারে একজন স্থায়ী সাব রেজিস্ট্রার দেওয়ার জন্য আইজিআর এর কাছে দাবি করা হয়েছে। তিনি তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন।
প্রসঙ্গত, সরকারি অফিসে বসে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার সাব-রেজিস্ট্রার এছহাক আলী মণ্ডলের ঘুষ গ্রহণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, টেবিলের ওপর কম্পিউটার। রয়েছে মুঠোফোন ও ফাইলের স্তুপ। প্রতিটি ফাইলে স্বাক্ষর করার আগে টাকা গুনে ড্রয়ারে রাখেন সাব রেজিস্ট্রার। পাশ থেকে একজন ফাইল এগিয়ে দিচ্ছেন। এর মধ্যে একজন টাকা কম দেওয়ায় টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছেন। পরে আবার তার চাহিদা মত টাকা দিলে তা ড্রয়ারে রাখছেন। ড্রয়ারে টাকার অনেকগুলো নোট জমার পর নিজ হাতে তিনি প্যান্টের পকেটে গুজে রাখছেন।
এছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার ঘুষ ছাড়া কোনও কাজ করেন না এমন প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার থেকে আড়াইহাজারে দেড় শতাধিক দলিল লেখক একযোগে কর্মবিরতি পালন করে। সাব-রেজিস্ট্রারকে প্রত্যাহার এবং একজন স্থায়ী সাব রেজিস্টারের পোস্টিং চেয়ে বিক্ষোভ করেন সমিতির সদস্যরা। রবিবার দুপুরে আইজিআর সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তাদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে, দলিল লেখকরা কর্মবিরতি স্থগিত করেন।
দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুরুল আমিন ভূইয়া ঘুষ গ্রহণকারী দুর্নীতিবাজ সাব-রেজিস্ট্রারের দৃষ্টান্তমূলিক শাস্তির দাবি করেন।