মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীদের জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করে সরকারের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট ‘উত্থাপিত হয়নি’ মর্মে খারিজ করে এই প্রশ্ন রাখে আদালত। এ সময় জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না, সেটি মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ কোরআনের কোথায় এ কথা আছে, সেটি জানতে চেয়েছে হাইকোর্ট।
আজ মঙ্গলবার (২৭ মার্চ) বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি মো. আতাউর রহমান খানের গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক হলেও কওমি ও আলিয়া মাদ্রাসায় এই চর্চা নেই। এ নিয়ে দেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আছে। তবে সরকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জাতীয় সংগীত গাওয়া বাধ্যতামূলক করে আদেশ জারি করেছে।
গত সপ্তাহে কুড়িগ্রামের সুখদেব ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ নুরুল ইসলাম মিয়া ও ঢাকার কদমতলা মাদ্রাসার দুই শিক্ষার্থীর অভিভাবক এই আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন। শুনানির সময় হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে শতাধিক মাদ্রাসা শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।
আদালতে রিটকারীদের পক্ষে শুনানি করেন তৈমুর আলম খন্দকার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
তৈমুর আলম খন্দকারকে বিচারপতি বলেন, ‘আপনি দেখান পবিত্র কোরআনের কোথায় আছে জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না? পবিত্র কোরআনের কোথাও নেই যে জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না।’
বিচারপতি বলেন, ‘আগে তো মাদ্রাসার সিলেবাসে (পাঠ্যক্রম) অংক, ইংরেজি বিজ্ঞান বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। যুগের চাহিদা অনুযায়ী সে বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ইসলাম ধর্ম ডে বাই ডে উন্নত হচ্ছে। প্রকারন্তরে মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করার জন্যই এ রিট করা হয়েছে।’
বিচারপতি বলেন, ‘স্কুলের শিক্ষার্থীরা জাতীয় সংগীত গাইবে আর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা গাইবে না, এটা তো হতে পারে না। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরা দেশের বাইরে গেলে যখন বিদেশিরা জাতীয় সংগীতের বিষয় জানতে চাইবে তখন শিক্ষার্থীরা কী জবাব দেবে?’।
বিচারপতি আরও বলেন, ‘ব্রিটিশ আমলে আমরা (মুসলমানরা) ইংরেজি না শিখে পিছিয়ে পড়েছিলাম। মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের পিছিয়ে দিতে এ ধরণের রিট করা হয়েছে।’
মাদ্রাসায় জাতীয় সংগীত না গাওয়ার পেছনে ধর্মীয় বাধার অযুহাত দেয়া হয়। যদিও ভারতের মাদ্রাসাগুলোতে সে দেশের জাতীয় সংগীত গাওয়া হয়। সেখানের ধর্মীয় আলেমরা এতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা ছিল কলঙ্কজনক। তারা বাঙালি নিধনে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সহায়তা করেছে। আর এই বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মভিত্তিক দলগুলোর নেতারা মাদ্রাসায় প্রভাব বিস্তার করেন, তাদের নীতি নির্ধারণ করেন। আর মাদ্রাসা নিয়ন্ত্রণকারীরা শিক্ষার্থীদের শেখাচ্ছেন জাতীয় সংগীত গাওয়া যাবে না।