অ্যান গ্রিন শোষণের শিকার নারীদের এক প্রতিনিধি। নারীদের ১৬৫০ সালের সময়টা মোটেও খুব একটা অনুকূলে ছিল না। তা বোঝার জন্য অ্যান গ্রিনের ঘটনাটাই যথেষ্ট। তিনি ছিলেন গরিব পরিবারের সন্তান। জীবিকার তাগিদে একটি ইংরেজ পরিবারের গৃহপরিচারিকার কাজ নিয়েছিলেন। শুরুতে সব ঠিকঠাক চলছিল। কিন্তু একদিন বাড়ির মালিকের নাতির কুদৃষ্টি পড়ে অ্যান গ্রিনের ওপর। সেই বাসার মালিকের নাতি কর্তৃক তিনি গর্ভবতী হয়ে পড়েন। কিন্তু তার বাচ্চাটি মারা যায়। কেউ জেনে গেলে মানসম্মান যাবে এই ভেবে তিনি মৃত বাচ্চাটি লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা করেন। কিন্তু বিধিবাম। তিনি ধরা পড়ে যান। শিশু হত্যার দায়ে তাকে অভিযুক্ত করা হয় এবং ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়। তাকে নির্ধারিত সময়ে ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়। একসময় জল্লাদ ফাঁসি কার্যকর করে। এর পর তাকে নিচে নামিয়ে আনা হলে তৎকালীন ডাক্তাররা যখন তাকে পরীক্ষা করতে গেলেন, অবাক বিস্ময়ে হতবাক তারা আবিষ্কার করলেন তখনো অ্যান গ্রিনের নাড়ির স্পন্দন পাওয়া যাচ্ছে। তারা তত্ক্ষণাৎ সবরকমের চেষ্টা শুরু করলেন অ্যানকে বাঁচিয়ে তোলার জন্য। একসময় তারা তামাক পাতার ধোঁয়া নাকে দিলে অ্যান চেতনা ফিরে পেয়েছিলেন। তারপর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠলেন তিনি। তার এই মৃত্যু থেকে ফিরে আসার ঘটনায় অভিভূত হয়ে সবাই ভাবল, অ্যান নিশ্চিতভাবে ঈশ্বরের চোখে নির্দোষ! তাই তারাও তাকে ক্ষমা করে দেন। অ্যান পরবর্তীতে বিয়ে করেন এবং নিজ স্বামী ও বাচ্চাদের নিয়ে সংসারও করেন।
জোলায়খা কাদখোদাকে বলা যেতে পারে ভাগ্যবান। আবার বলা যেতে পারে দুর্ভাগ্যবান। কারণ যে পরিমাণ শারীরিক যন্ত্রণার শিকার তিনি হয়েছিলেন তা সত্যিই খুব কষ্টকর। ইরানের ২০ বছর বয়সী জোলায়খা ব্যাভিচারে লিপ্ত হয়ে পড়েন। যা ইরানে খুবই গর্হিত অপরাধ বলে বিবেচিত। তিনি ধরা পড়ে যান।
পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালের ১১ আগস্ট, ইরানের ২০ বছর বয়সী জোলায়খাকে ব্যাভিচারের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয় আদালত। সেই দেশের আইন অনুযায়ী ঘোষণা করা হয় পাথর নিক্ষেপ করে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হবে। এরপর মাটিতে গর্ত করে তার দেহের অর্ধেকটা ভরাট করে দেওয়া হয় নিয়ম অনুযায়ী। তারপর নির্দিষ্ট সময়ে গ্রামবাসী তার দিকে পাথর নিক্ষেপ শুরু করে। একসময় তাকে মৃত মনে করে গ্রামবাসীরা পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করে দেয়। যখন তার দেহটাকে গর্ত থেকে তোলা হয় তখন দেখা যায় জোলায়খা ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে তখনো বেঁচে আছেন এবং নিশ্বাস নিচ্ছেন। সঙ্গে সঙ্গেই দ্রুত তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। চিকিৎসার মাধ্যমে একসময় তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়েও যান। শত শত পাথরের আঘাতেও সে মারা যাননি। এই ঘটনার পরের বছর তাকে তৎকালীন প্রশাসন থেকে রাজক্ষমা দিয়ে দেওয়া হয়। এখন সে নতুন প্রাণ পেয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করছেন।
এই ঘটনা ইরানজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল।
ওয়েনসেসলাও মোগুয়েলের ঘটনাটি ব্যাখ্যাতীত। ধরুন একজন মানুষকে খোলা ময়দানে নিয়ে গিয়ে তার ওপর ব্রাশ ফায়ার করা হয়েছে তখন কী হওয়ার কথা! নিশ্চয়ই লোকটির ক্ষত বিক্ষত দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকতে দেখা যাবে। কিন্তু মোগুয়েলের জীবনের ঘটনাটা ঠিক এর উল্টো।
মেক্সিকান বিপ্লবে মোগুয়েলের ভূমিকা থাকার দরুন কোনো বিচার ছাড়াই তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। তার মৃত্যুদণ্ড আবার যেমন-তেমনভাবে কার্যকর করার নির্দেশ দেওয়া হয়নি পুরো একটি ফায়ারিং স্কোয়াডকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার জন্য! পরপর ৯টি গুলি করা হয় তাকে! যার একটি আবার খুব কাছ থেকে তার মাথায় করা হয়। কী ভাবছেন মোগুয়েলের সঙ্গে এরপর কী ঘটেছিল। জি আশ্চর্যজনক ঘটনা হলেও এটি সত্যি যে তিনি এতগুলো গুলি খাওয়া সত্ত্বেও বেঁচে ছিলেন। কারণ কোনো গুলিই তার শরীরের এমন কোনো অঙ্গ ভেদ করেনি যে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুবরণ করবেন। যেমন মস্তিষ্ক কিংবা হৃৎপিণ্ড। তিনি পালিয়ে গিয়ে পরবর্তীতে চিকিৎসকের কাছে নিজের চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তিনি রিপলিস বিলিভ ইট অর নট-এ কাছ থেকে গুলি করার ফলে তার মুখের সৃষ্ট বিকৃতিরূপও দেখিয়েছিলেন। ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছিল সে সময়ে। এরকম একটি ঘটনা সত্যিই বিস্ময়কর। অনেকেই তার শরীরে গুলিবিদ্ধ স্থানগুলো পরীক্ষা করে দেখে ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন।
ইতিহাসে উইলি ফ্রান্সিসের বিচার সবচেয়ে বেশি কলঙ্কিত। ১৯৪৬ সালে মাত্র ১৬ বছর বয়সী ফ্রান্সিসের বিরুদ্ধে সেইন্ট মার্টিনভিল, লুইজিয়ানার এক ওষুধের দোকানদারকে হত্যা করার মিথ্যা অভিযোগ গঠন করা হয়। পুলিশ উইলিকে সেই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার ১৫০ মাইল দূর থেকে আটক করে। ফ্রান্সিস ছিল এক কৃষ্ণাঙ্গ গরিব পরিবারের ত্রয়োদশ সন্তান। আসলে সেদিন সে একটি সুটকেস হাতে বোনের বাসায় বেড়াতে যাচ্ছিল। একজন কৃষ্ণাঙ্গ ছেলের হাতে সুটকেস দেখে পুলিশ তাকে সন্দেহ করে এবং জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। ফ্রান্সিস ছিল তোতলা এবং তার তোতলানো দেখে পুলিশ সন্দেহ করে। পুলিশ তাকে একপ্রকার অন্যায়ভাবে তার মুখ থেকে জোরপূর্বক হত্যার স্বীকারোক্তি বের করে। কিশোর ফ্রান্সিস পুলিশের ভয়ে তাদের কথামতো এক ব্যক্তিকে হত্যা এবং ডাকাতির কথাও স্বীকার করে। ফলে তাকে বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। তাকে যখন বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসানো হয় মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার জন্য, তখন প্রথমবার সেটি ঠিকমতো কাজ করেনি। চেয়ারটিতে ত্রুটি থাকায় সুইচ চালু করার পর ফ্রান্সিস প্রবল শারীরিক যন্ত্রণা ভোগ করে কিন্তু তার মৃত্যু হচ্ছিল না। উপস্থিত ব্যক্তিরা শুনতে পায় ফ্রান্সিসের বিকৃত চিৎকার। মৃত্যু না হওয়ায় মৃত্যুদণ্ডের কার্যক্রম তখন স্থগিত করে দেওয়া হয় এবং ফ্রান্সিস আপিল জানায় তার রায়ের বিরুদ্ধে। তবুও এর এক বছর পরেই মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার উদ্দেশে তাকে আবার বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসানো হয় এবং তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। ফ্রান্সিসের পিতা দরিদ্র ছিলেন তাই ভালো উকিলেরও ব্যবস্থা করতে পারেননি ফ্রান্সিসের জন্য। কোনোমতে যে উকিল ঠিক করেছিলেন ফি তিনি শোধ করতে প্রথমে তার বাসায় কাজও করতে চেয়েছিলেন। পরে তিনি নিজের ফলানো শাকসবজি ফ্রি হিসেবে দিয়েছিলেন উকিলকে।
রমেল ব্রুম ছিলেন সেক্স ফ্রিক একজন। তার অপরাধ গুরুতর। ২০০৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রমেল ব্রুমকে ১৪ বছর বয়সী ট্রিনা মিডলটনকে প্রথমে অপহরণ করেন। এরপর তাকে ধর্ষণ করেন। কিন্তু এতেই খান্ত হন না রমেল ব্রুম। নিজের অপরাধ ঢাকার জন্য শেষ পর্যন্ত ট্রিনাকে মিডলটনকে খুন করেন রমেল ব্রুম। তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং আদালতে খুনের অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। প্রাণঘাতী ইনজেকশনের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করার হুকুম দেওয়া হয়। নির্দিষ্ট দিনে তাকে বেঁধে ফেলা হয় শক্তভাবে। তারপর কর্মরত জল্লাদরা তাকে ইনজেকশন দেওয়ার কাজ শুরু করেন। কিন্তু বিস্ময়কর ঘটনা ঘটে তখন। অনেক চেষ্টা করেও তারা সুস্থ সবল রমেল ব্রুমের শিরাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তারা সর্বমোট ১৮ বার ইনজেকশন ফুটিয়েছেন রমেল ব্রুমের শরীরের নানা জায়গায়। কিন্তু ব্যবহারযোগ্য কোনো শিরাই খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
পুরো দুই ঘণ্টা ধরে তারা একই চেষ্টা করে গেছেন। অবশেষে এত ইনজেকশন দেওয়ার ফলে সৃষ্ট প্রচণ্ড যন্ত্রণায় রমেল ব্রুম চিৎকার শুরু করে এবং কান্নায় জর্জরিত হয়। এর ফলে জল্লাদরা তাদের মৃত্যুদণ্ডের কার্যক্রম থামিয়ে দিতে বাধ্য হন। পরবর্তীতে তাকে ডাক্তারি পরীক্ষা করে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে রমেল ব্রুম আপিলের জন্য কারাগারে অপেক্ষা করছেন।
জোসেফ স্যামুয়েল আরেক ঘটনার জন্ম দেন। ফাঁসির দড়ি যার জন্য কার্যকর হয় না। অথচ এই জোসেফের বিরুদ্ধেও অভিযোগ গুরুতর। ইংল্যান্ডে এক নারীর বাসায় ডাকাতি করার অপরাধে তাকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছিল। ডাকাতি করার জন্য মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়নি আসলে। ডাকাতি করার সময় জোসেফের ডাকাত দল একজন পুলিশ অফিসারকে হত্যা করে ফেলেছিল। যার পেছনে জোসেফেরও হাত ছিল বলে ধরা হয়। যদিও জোসেফ বলেছিল, সেই পুলিশ হত্যায় তার কোনো ভূমিকাই ছিল না। কিন্তু অবিশ্বাস্য যে ব্যাপারটি ঘটেছিল, তা হলো জোসেফ তিনবার তার ফাঁসির কার্যক্রম থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন। প্রথমে ফাঁসির দড়ি ছিঁড়ে গিয়েছিল, দ্বিতীয়বার দড়ির প্যাঁচ আপনাআপনি খুলে গেলে তার পা মঞ্চ স্পর্শ করে। এসব দেখে উপস্থিত জনতা দাবি করে জোসেফ নির্দোষ বলেই ঈশ্বরের ইচ্ছায় এমন হচ্ছে। জনতার এমন প্রতিবাদ দেখে উপস্থিত জল্লাদরা দ্রুত আবার জোসেফের গলায় দড়ি পরায়। কিন্তু এবারও দড়িটা ছিঁড়ে যায়। এই অদ্ভুত ঘটনা লক্ষ্য করে এবং জনতার রোষানল থেকে বাঁচতে তার মৃত্যুদণ্ডাদেশ স্থগিত করে দেওয়া হয়।
ইতিহাসের রহস্যময় পুরুষ রাশিয়ান রাশপুতিন। তাকে কোনো আদালত মৃত্যুদণ্ড দেয়নি কখনো তবুও এই তালিকায় আছেন তার কথিত আধ্যাতিক ক্ষমতার কারণে। কিন্তু তিনি তার আধ্যাতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিলেন বলেই সবাই মনে করে। অনেকে দাবি করেন ভবিষ্যৎ দেখার ক্ষমতাও নাকি ছিল এই রহস্য পুরুষের। তার বেশ কিছু শিষ্যও ছিল। রাজদরবারে নিজের প্রভাব বিস্তারে সক্ষম রাশপুতিন সারাক্ষণ মদ আর নারীতেই ডুবে থাকতেন। তিনি রোগ সারানোর ক্ষমতাসহ বহু অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন। জারের স্ত্রীকে নানা কুমন্ত্রণা দিতেন রাশপুতিন। উচ্ছৃঙ্খল জীবন-যাপন পদ্ধতি, অতিরিক্ত মাত্রায় এলকোহল সেবন, নারীদের প্রতি অশালীন আচরণ প্রভৃতি কারণে রাশপুতিনের প্রচুর শত্রু তৈরি হয়। পরবর্তীতে তাকে মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন শত্রুরা। তাকে খুন করার উদ্দেশে সাতজন মানুষকে মেরে ফেলতে পারে এমন পরিমাণে বিষ খাইয়ে রাশপুতিনকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয় কিন্তু তিনি বেঁচে যান। মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য তাকে গুলি করা হয় একের পর এক। তবুও বেঁচে যান তিনি। বরফ শীতল নদীতে তাকে ফেলে দেওয়া হলে পরবর্তীতে ঠাণ্ডায় জমে তার মৃত্যু হয়।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন