অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন দ্রুত বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করেছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। সংগঠনটি বলছে, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের আবেদন নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ধীর গতি অব্যাহত থাকলে ভুক্তভোগী আবেদনকারীদের সুরাহা পেতে আরও অর্ধশত বছর অপেক্ষা করতে হবে।
জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে গতকাল শনিবার (১৪ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশ গুপ্ত।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত বছরের ২৩ নভেম্বর হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়েছে, পাকিস্তান আমলে ধর্মীয় বৈষম্যমূলক শত্রু সম্পত্তি আইন করা হয়। ১৯৭৪ সালে এসে নাম পরিবর্তন করে অর্পিত সম্পত্তি আইন নামে এটি চালু রাখা হয়। এই আইন চলমান থাকায় দেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের একতরফা অবর্ণনীয় অত্যাচার, হয়রানি ও সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন করা হয়।
রানা দাশ গুপ্ত বলেন, সরকারি হিসাব অনুযায়ী, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনের বিধান অনুসারে, ‘ক’ তফসিলভুক্ত সম্পত্তি প্রত্যর্পণের জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন জমা পড়েছে ১ লাখ ৬২ হাজার। এর মধ্যে গত ৫ বছরে নিষ্পত্তি হয়েছে আনুমানিক ১০ হাজার।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ট্রাইব্যুনাল ও আপিল ট্রাইব্যুনালে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির পরও জেলা প্রশাসকেরা হাইকোর্টে রিট করার কথা বলে বছরের পর বছর ডিক্রি জারি বাস্তবায়ন করেননি। চলতি বছরের ৩ এপ্রিল আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে এক পরিপত্র জারি করা হয়। তাতে বলা হয়, অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আপিল ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আর কোনো প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ নেই। তাই হাইকোর্ট বিভাগে রিট করতে সলিসিটার অনুবিভাগে কোনো প্রস্তাব না পাঠাতে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।
তবে এই পরিপত্র জারির ২২ দিনের মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে এক চিঠি পাঠানো হয়। তাতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ওই পরিপত্রের বিষয়টির আইনি দিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে।
পরিষদ মনে করে, পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তির যথাযথ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে মহল বাধা সৃষ্টি করছে, সেই চক্রান্তকারী মহল অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণে ভূমির মালিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বাধা দিচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তি আইন দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে ২৭ জুলাই সারা দেশে ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘু এবং আদিবাসী সংগঠনের সমন্বয়ে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ঘোষণা দিয়েছে পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিষদের সভাপতি হিউবার্ট গোমেজ, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, বাসুদেব ধর, নির্মল রোজারিও, যুগ্ম সম্পাদক হেমন্ত আই কোরাইয়া প্রমুখ। প্রথম আলো