পদোন্নতি দিয়ে জেলা জজের শূন্য পদ পূরণ করার পরও বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা জজের প্রায় অর্ধশত পদ শূন্য রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই বিপুলসংখ্যক পদ শূন্য থাকায় বিচারকাজে গতিশীলতা আসছে না। প্রায় ৩৪ লাখ মামলা কচ্ছপ গতিতে চলায় বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ কমছে না।
অবশ্য আইন সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক জানিয়েছেন, শিগগির যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতি দিয়ে শূন্য পদ পূরণ করা হবে।
জানা যায়, সংবিধানের ১৫২ অনুচ্ছেদে প্রদত্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী, জেলা বিচারক বলতে জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজকে বোঝানো হয়। এ দুই ধরনের বিচারকের বিচারিক এখতিয়ারও প্রায় একই রকম। জেলা জজের প্রধানত আপিল মামলার বিচার এবং মামলা পর্যালোচনা করার এখতিয়ার আছে; ক্ষেত্রবিশেষে রয়েছে মৌলিক এখতিয়ারও। অতিরিক্ত জেলা জজের এখতিয়ারও সমবিস্তৃত। জেলা জজ কর্তৃক অর্পিত বিচারিক দায়িত্ব পালন করেন অতিরিক্ত জেলা জজ। হত্যা মামলা, শিশু আদালতের মামলা, দেওয়ানি মামলাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিচার করে থাকেন এসব বিচারক। এ কারণে অতিরিক্ত জেলা জজের পদও বিচার বিভাগে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রায় দু-মাস আগে অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে এক দফা পদোন্নতি দেওয়া হয়। এর পর ১১০ জন জেলা জজকে বিভিন্ন জেলায় নতুনভাবে সৃষ্ট ৪১টি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালসহ শূন্য পদে পদায়ন করা হয়। অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে পদোন্নতির মাধ্যমে জেলা জজ হিসেবে পদায়ন করায় অতিরিক্ত জেলা জজ পদে এখন শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। যুগ্ম জেলা জজদের পদোন্নতির মাধ্যমে এ শূন্যতা পূরণ করা যেতে পারে। কিন্তু সেই উদ্যোগ এখনো শুরু হয়নি। এদিকে যুগ্ম জেলা জজের বেশ কয়েকটি পদ শূন্য হয়েছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত জেলা জজ হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হলে আরও অনেক শূন্য পদের সৃষ্টি হবে। তাই অতিরিক্ত জেলা জজের পাশাপাশি যুগ্ম জেলা জজ পদেও পদোন্নতির বিষয়টি একই সঙ্গে শুরু করা উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রসঙ্গত, বিচার বিভাগে দিন দিন মামলার জট বেড়েই চলছে। বর্তমানে প্রায় ৩৪ লাখ মামলা বিচারাধীন। কিন্তু সে তুলনায় বিচারকের সংখ্যা খুবই কম। আমেরিকায় প্রতি ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫, ইংল্যান্ডে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ ও ভারতে ১৮ জন বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে রয়েছেন মাত্র ১০ জন। জনসংখ্যা ও মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারকের সংখ্যা বাড়ানো এখন সময়ের দাবি। সেটা না হলেও যতগুলো পদ আছে, অন্তত সেগুলোয় পদায়ন করা প্রয়োজন। নয়তো বিচারকাজে দেরি হবে; বাড়তে থাকবে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ। কারণ প্রচলিত আছে যে, জাস্টিস ডিলেইড, জাস্টিস ডিনায়েড অর্থাৎ বিলম্বিত বিচার মানে বিচারবঞ্চিত হওয়া। আমাদের সময়