লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় হামলাকারী ফয়জুল হাসানকে প্রধান করে তার মা-বাবা, ভাই-মামাসহ ৬ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে পুলিশ।
আজ বৃহস্পতিবার (২৬ জুলাই) দুপুরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম মহানগর হাকিম প্রথম আদালতে চার্জশিটটি জমা দেন।
চার্জশিট দাখিলের কথা জানিয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানান, অভিযুক্তরা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ২০০৯ সালের সন্ত্রাসবিরোধী আইনের ৮, ১১, ১২ ও ১৩ ধারায় চার্জশিট দাখিল করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
চার্জশিটে বলা হয়, হামলাকারী ফয়জুল হাসান ওয়াজ শুনে ও বিভিন্ন পন্থীদের লেখা বই পড়ে জিহাদে প্রভাবিত হন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালান। তবে ফয়জুলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বা স্থানীয় কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি।
চার্জশিটে আরও উল্লেখ করা হয়, ২০১৬ সালের মাঝামাঝিতে ফয়েজকে তার বন্ধু সোহাগ একটি ৮ জিবি মেমোরি কার্ড দেয়। ওই মেমোরি কার্ড থেকে জঙ্গি নেতা জসিম উদ্দিন রাহমানী, তামিম উদ্দিন আদনানী এবং ওলিপুরী হুজুরের ওয়াজ শুনে ফয়জুল জিহাদের ব্যাপারে প্রভাবিত হয়। এছাড়া জসিম উদ্দিন রাহমানীর লেখা পড়ে এবং তিতুমির মিডিয়ার ভিডিও দেখে সে ধারণা করে ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল নাস্তিক।
দাওয়াহ-ইলাল্লাহ নামক ওয়েবসাইটে ফয়জুল জাফর ইকবালের ‘ভুতের বাচ্চা সোলায়মান’ বইয়ের ছবি দেখেন এবং সেখানে বিভিন্ন কমেন্ট থেকে ধারণা করেন নবী সোলায়মান (রা.) কে কটাক্ষ করে বইটি লেখা হয়েছে। এসব দেখে এক বছর আগে তিনি জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। সে লক্ষ্যে নগরের আল হারামা মার্কেটের নিচতলার একটি দোকান থেকে ছুরি কিনে জাফর ইকবালকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকেন।
অভিযোগপত্রে ফয়জুল হাসান ফয়েজ ছাড়াও ফয়েজুলের বাবা হাফেজ মাওলানা আতিকুর রহমান, মা মোছাম্মৎ মিনারা বেগম, ফয়জুলের বড় ভাই এনামুল হাসান, মামা কৃষকলীগ নেতা মো. ফজলুর রহমান এবং ফয়জুলের বন্ধু মো. সোহাগ মিয়াকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, মামলার প্রধান আসামি ফয়জুল হাসান নিজেই জাফর ইকবালকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। ৩-৪ মাস থেকেই তিনি জাফর ইকবালকে হত্যার সুযোগ খুঁজতে থাকেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও এই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কথা স্বীকার করেন ফয়জুল।
গত ৩ মার্চ বিকেল ৪টার দিকে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে যান। হামলার আগে তিনি ওই স্থানে এক ঘণ্টা রোবোটিকস প্রতিযোগিতা দেখেন। ৫টা ১০ মিনিটের দিকে জাফর ইকবালের পেছনে গিয়ে দাঁড়ান ও সুযোগ খুঁজতে থাকেন। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ফয়জুল জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালান।
হামলার পরপরই ফয়জুল হাসানকে হাতেনাতে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন শিক্ষার্থীরা।
এই ঘটনায় ওই দিনই শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন বাদী হয়ে সিলেট নগর পুলিশের জালালাবাদ থানায় হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলায় ঘটনাস্থলের বিভিন্ন স্থিরচিত্র, সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, মুঠোফোনের কল তালিকা ও অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশ্লেষণ করে পুলিশ ছয়জনকে চিহ্নিত করে।