প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, বিচারক সংকটের কারণে দেশের অধস্তন আদালতে মামলার জট ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। তিনি বলেন, বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই আমাদের তুলনায় অনেক বেশি বিচারক রয়েছে। বাংলাদেশে ১ হাজার ৬৪৭ জন বিচারকের সামনে ৩৪ লাখ মামলার জট রয়েছে। তিনি আরও বলেন, জাস্টিস অডিট সিস্টেম দেশের বিচার বিভাগের গতিশীলতা আরও বাড়াবে। মামলাজটের পেছনের কারণ চিহ্নিত করতে সহায়তা করবে।
বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট বাংলাদেশ’-এর ওয়েবসাইট উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গতকাল রোববার বিকেলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আইন মন্ত্রণালয় এবং জার্মান সহযোগিতা সংস্থা জিআইজেড যৌথভাবে এ ওয়েবসাইট নির্মাণ করে। অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে আইনমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি যৌথভাবে ‘ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট বাংলাদেশ’-এর ওয়েবসাইট উদ্বোধন করেন।
প্রধান বিচারপতি বলেন, বাংলাদেশে প্রতি এক মিলিয়ন মানুষের জন্য ১০ বিচারক আছে। যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে আছে ১০৭ জন, কানাডায় ৭৫ জন, ইংল্যান্ডে ৫১ জন, অস্ট্রেলিয়াতে ৪১ জন এবং ইন্ডিয়াতে ১৮ জন। পাশ্ববর্তী দেশ ইন্ডিয়াতে ৩০ মিলিয়ন মামলা বিচারাধীন এবং বিচারক প্রায় ২৩ হাজার। আমাদের দেশে ৩ দশমিক ৪ মিলিয়ন মামলার বিপরীতে বিচারকের সংখ্যা মাত্র ১ হাজার ৬৪৭ জন। ইন্ডিয়াতে গড়ে একজন বিচারকের ওপর ১ হাজার ৩৫০টি মামলা বিচারাধীন এবং বছরে গড়ে ৫১৬টি মামলা নিষ্পত্তি করে।’
‘অন্যদিকে বাংলাদেশে প্রত্যেক বিচারকের ঘাড়ে ২ হাজার ১২৫টি মামলা বিচারাধীন এবং বছরে গড়ে প্রায় ৭০০ মামলা নিষ্পত্তি করে। বিচারধীন মামলার আসামীর কারণে বাংলাদেশের কারাগারগুলোও জনাকীর্ণ।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ২০১৩ সালে জিআইজেড পাঁচটি জেলায় জাস্টিস অডিট সিস্টেম চালু করেছিল। এতে তারা সফলতা পেয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় জাতীয়ভাবে এই পদ্ধতি চালু করা হলো। এর মাধ্যমে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার সঠিক কারণ বিশ্নেষণ করে মামলাজট কমানো সম্ভব হবে।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন ঢাকায় নিযুক্ত জার্মানির উপ-রাষ্ট্রদূত মিকায়েল এসচুলথেইস, যুক্তরাজ্যের উন্নয়ন সংস্থা ডিএফআইডির বাংলাদেশ প্রধান জেন এডমন্ডসন, আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, জিআইজেড-এর রুল অব ল বিভাগের বাংলাদেশ প্রধান প্রমিতা সেনগুপ্ত, যুক্তরাষ্ট্রের জাস্টিস ম্যাপিং সেন্টারের পরিচালক জোসেফ এরিক ক্যাডোরা প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব উম্মে কুলসুম।
সভাপতির বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থার গুণগত মানোন্নয়নে এবং বিদ্যমান মামলাজট নিরসনে ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট কার্যকর ভূমিকা পালন করবে। মামলাজটের কারণ সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে সহযোগিতা করবে এবং সরকারি নীতি প্রণয়নে তা সহায়ক হবে।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘জাস্টিস অডিট’ শুধু নীতি প্রণয়ন ও নীতিনির্ধারণেই নয়, বরং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন পরিমাপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার ১৬তম লক্ষ্য- ‘শান্তি, ন্যায়বিচার ও কার্যকর প্রতিষ্ঠান’ অর্জনে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত প্রদান করবে, যা শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজব্যবস্থা প্রচলন এবং সবার জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তির পথ সুগম করতে পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে।
অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আইনমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার দুই খুনির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে সর্বোচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। কিছু আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তাদের ফিরিয়ে আনা হবেই।