করোনায় আক্রান্ত আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক (ফাইল ছবি)

সড়ক পরিবহন আইনে তিনটি ধারা জামিন অযোগ্য: আইনমন্ত্রী

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮-এর ৮৪, ৯৭ ও ১০৩ ধারায় সংঘটিত অপরাধগুলো জামিন অযোগ্য।’

আজ সোমবার (৬ আগস্ট) আইনমন্ত্রী তার নিজ দফতরে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন। এর আগে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদের নিয়মিত বৈঠকে সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮-এর খসড়ার অনুমোদন হয়।

এরপর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজ দপ্তরে প্রস্তাবিত আইনের ব্যাখ্যা দেন। আইনমন্ত্রী বলেন, ‘বেপরোয়া ও অবহেলা করে গাড়ি চালানোয় কেউ গুরুতর আহত বা কারও মৃত্যু হলো সে জন্য সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সাজা হবে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়, যদি তদন্তে ভিন্ন তথ্য পাওয়া যায় তাহলে দণ্ডবিধি ৩০২ এবং ক্ষেত্রমতে ৩০৪ এই আইনে প্রযোজ্য হবে। তার মানে, কোনো একটা দুর্ঘটনা হলো। কিন্তু দেখা গেল, তা শুধু সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে না, এখানে চালক ইচ্ছে করলে দুর্ঘটনা এড়াতে পারত এবং তিনি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। তখন দণ্ডবিধির ৩০২ অনুযায়ী বিচার হবে।’

আনিসুল হক বলেন, ‘কিন্তু মনে রাখতে হবে, তদন্ত ও তথ্যের ওপর নির্ভর করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এটা ঠিক করবে।’

এই আইনটি কোন প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হবে এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সংসদের আগামী অধিবেশনে আইনটি পাসের মাধ্যমে তা কার্যকর করা হবে।’

আইনটি পূর্ণাঙ্গ কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যদি কিছু বাকি থাকে তা বিধিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’

এ সময় তিনি বলেন, ‘এই আইনটি মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদনের মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি পুরোপুরি পূরণ হলো।’

এদিকে আইনটি অনুমোদনের পর মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বেলা দেড়টার দিকে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি জানান, সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ অনুযায়ী, সর্বোচ্চ শাস্তি পাঁচ বছরের জেল ও অর্থদণ্ড। অর্থদণ্ডের পরিমাণ আদালত নির্ধারণ করবেন। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে কেউ আহত হলে বা প্রাণহানি ঘটলে এই আইনে মামলা হবে।

তবে হত্যার উদ্দেশ্যে গাড়ি চালানো হয়েছে বলে মনে হলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ৩০২ ধারায় মামলা হবে। তদন্ত করে এবং তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন সাপেক্ষে নির্ধারণ করা হবে দুর্ঘটনার প্রকৃতি কী ছিল। ৩০২ ধারায় মামলা হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। আর যদি তদন্তে মনে হয়, হত্যার উদ্দেশ্যে নয়, বেপরোয়া চালানোর কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে, তাহলে সড়ক পরিবহন আইনের ১০৩ ধারায় মামলা হবে। এই ধারায় সর্বোচ্চ ৫ বছর জেল, অর্থদণ্ড, অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে।

তিনি আরও জানান, এই আইন অনুযায়ী মোটরযান মালিককে ২০০৬-এর শ্রম আইন অনুসারে মোটরযান চালকের সঙ্গে লিখিত চুক্তিপত্র করতে হবে। লাইসেন্স ও চুক্তিপত্র ছাড়া কেউ গাড়ি চালাতে পারবে না। পেশাদার চালককে কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাস ও ২১ বছর বয়সী হতে হবে। আর নিজের গাড়ি চালালে বয়স ১৮ বছর হতে হবে।

জানা যায়, এক বছর ঝুলে থাকার পর অবশেষে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে মন্ত্রিপরিষদের চূড়ান্ত অনুমোদন পেলো ‘সড়ক পরিবহন আইন’। গত বছর আইনটির খসড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনুমোদন পেলেও শ্রমিক সংগঠনগুলোর আপত্তি ও কর্মসূচির হুমকির মুখে আর বেশিদূর এগোয়নি। কিন্তু গত ২৯ জুলাই রাজধানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় রমিজ উদ্দিন ক্যান্টমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আইনটি আবারও মন্ত্রিসভায় তোলা হয়।