আইনজীবীদের তালিকাভুক্তি ও নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল। সংস্থাটির অধীনে লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশ হলেও গত সাড়ে চার মাস ধরে আটকে আছে নতুন আইনজীবীদের তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া। ফলে এক রকম হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হওয়া হাজার হাজার শিক্ষানবিশ আইনজীবী।
বার কাউন্সিল থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, সংস্থাটির অধীনে অ্যাডভোকেট তথা আইনজীবী অন্তর্ভুক্তিতে আইন শিক্ষার্থীদের নৈর্ব্যক্তিক, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়। তিন ধাপের ওই পরীক্ষার মধ্য দিয়েই তারা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের সদস্য হন এবং এ সংশ্লিষ্ট একটি সনদ পেয়ে থাকেন। আর সে সনদ লাভের পর থেকেই অ্যাডভোকেট তথা আইনজীবী হিসেবে দেশের অধস্তন আদালতে মামলা পরিচালনার অনুমতি পান আইনের শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হওয়া একাধিক শিক্ষানবিশ আইনজীবী হতাশা ব্যক্ত করে গণমাধ্যমকে জানান, আইন বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর তাদের লক্ষ্য আইনজীবী হওয়া। এজন্য তাদের অনেকেই দুই থেকে তিন বছর ধরে বার কাউন্সিলের পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করে আসছেন। পরীক্ষা প্রক্রিয়ার ধীর গতির কারণে তারা সামাজিকভাবে এবং পেশাগত দক্ষতা অর্জনে পিছিয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন।
এর আগে ২০০৭ সালের ২১ জুলাই বাংলাদেশ বার কাউন্সিলে আইনজীবী তালিকাভুক্তির জন্য নৈর্ব্যক্তিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ওইদিন রাতেই বার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে এ পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। ওই পরীক্ষায় ১১ হাজার ৮৪৬ জন পরীক্ষার্থী কৃতকার্য হয়। উত্তীর্ণরা লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন।
পরে ২০১৭ সালের ১৪ অক্টোবর বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পরীক্ষার প্রায় ৮ মাস পর চলতি বছরের ৪ জুন বিকেলে বার কাউন্সিলের ওয়েবসাইটে পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রকাশিত ফলে ৮ হাজার ১৩০ জন শিক্ষানবিশ আইনজীবী লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মৌখিক পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হন। এছাড়া ২০৮ জন পরীক্ষার্থীর খাতা থার্ড এক্সামিনারের (তৃতীয় বিচারের জন্য) সিদ্ধান্তের জন্য তাদের ফলাফল ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়। এরপর প্রায় সাড়ে চার মাস পেরিয়ে গেলেও মৌখিক পরীক্ষার বিষয়ে কোনও বিজ্ঞপ্তি আসেনি বার কাউন্সিলের পক্ষ থেকে। পরে গত ১৫ অক্টোবর ২০৮ জনের মধ্যে ১২৭ জনকে উত্তীর্ণ ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি জারি করে বার কাউন্সিল।
বশিরুল ইসলাম নামে এক পরীক্ষার্থী আক্ষেপ করে গণমাধ্যমকে বলেন, সাড়ে তিন বছর আগে এলএলবি পাস করেছি। এর মধ্যে নানা জটিলতার কারণে একটি মাত্র পরীক্ষা পেয়েছি। ওই পরীক্ষার প্রক্রিয়া দেড় বছর আগে শুরু হয়েছে, এখনও শেষ হয়নি। লিখিত পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। এরপরও সাড়ে চার মাস পার হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে হতাশাই শুধু বাড়ছে।
পরীক্ষার্থীদের হতাশ না হওয়ার কথা জানিয়ে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন গণমাধ্যমকে বলেন, কিছুদিন আগে আমরা সভা করেছি। সভার সিদ্ধান্ত অনুসারে অধস্তন আদালতে আইনজীবী অন্তর্ভুক্তির মৌখিক পরীক্ষা আগামী মাসে (নভেম্বরে) অনুষ্ঠিত হবে। তবে এ বিষয়ে এখনও নির্দিষ্ট তারিখ নির্ধারণ করা হয়নি। পাশাপাশি একই মাসে হাইকোর্টে অন্তর্ভুক্তির মৌখিক পরীক্ষাও অনুষ্ঠিত হবে। পরীক্ষার আগেই এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বার কাউন্সিল প্রকাশ করবে। বাংলা ট্রিবিউন