মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া আলোচিত প্রার্থীদের একাংশ

সারাদেশে ৩০০ আসনে ৭৮৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ দেশের ৩০০ আসনে ৭৮৬ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছ। খালেদা জিয়ার জমা দেওয়া তিনটি আসনেরই মনোনয়ন বাতিল করা হয়। প্রার্থীরা ঋণখেলাপি ও দুর্নীতি মামলার আসামি হওয়া ছাড়াও স্থানীয় সরকারের অন্যান্য পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ায় বেশিরভাগেরই মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। তবে, কমিশন থেকে দলভিত্তিক তালিকা প্রকাশ না করলেও বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি প্রার্থীর বলে জানা গেছে। এছাড়া, জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারসহ এ দলটির বেশ কয়েকজন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।

মনোনয়ন বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আজ সোমবার(৩ ডিসেম্বর) থেকে তিন দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আপিল করতে পারবেন। পরবর্তী তিন দিনে সিইসি কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন এসব আপিল নিষ্পত্তি করবে। কমিশন সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এর আগে, রিটার্নিং অফিসাররা যাচাই-বাছাই শেষে রোববার (২ ডিসেম্বর) এসব প্রার্থীর মনোয়নয়ন বাতিল করেন।

এদিকে, মনোনয়ন বাতিলের পর দেশের কোনও আসনেই এককপ্রার্থী পাওয়া যায়নি। এবার সবচেয়ে কম প্রার্থী হয়েছেন মাদারিপুর ১ আসনে। এই আসনে প্রার্থী দুই জন। আর সবচেয়ে বেশি হয়েছেন কুমিল্লা-৩ আসনে। এই আসনে প্রার্থীসংখ্যা ১৭ জন।

প্রসঙ্গত, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে তিন হাজার ৬৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী দুই হাজার ৫৬৭ জন, স্বতন্ত্র ৪৯৪ জন। ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৬৪ আসনে ২৮১ জন, বিএনপি দেশের ২৯৫ আসনে ৬৯৬ জন, জাতীয় পার্টি ২১০ আসনে ২৩৩ জন এবং অন্যান্য দলের এক হাজার ৩৫৭ জন। বাতিলের পর এখন প্রার্থীর সংখ্যা দাঁড়ালো ২ হাজার ২৯৭টিতে।

জমাপড়া মনোনয়নপত্রের মধ্যে রংপুর বিভাগে ৩৫৩টির মধ্যে ৯১টি, রাজশাহী বিভাগে ৩৫৫টির মধ্যে ৯৬টি, খুলনা বিভাগে ৩৯১টির মধ্যে ৯০টি, বরিশাল বিভাগে ১৮৩টির মধ্যে ৯০ টি, ময়মনসিংহ বিভাগে ২৩১টির মধ্যে ৬২টি, ঢাকা বিভাগে ৭৩১টির মধ্যে ১৯২টি, সিলেট বিভাগে ১৮৩ টির মধ্যে ৪৪টি এবং চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭৭টির মধ্যে ১৭৩টি বাতিল হয়।

এদিকে, ৩৫টি নির্বাচনি একাকায় কোনও প্রার্থিতা বাতিল হয়নি। এগুলো হলো ঠাকুরগাঁ-২, দিনাজপুর-৫, জয়পুরহাট-২, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩, নওগাঁ-৩, নাটোর-৩, পাবনা-২ ও ৪, কুষ্টিয়া-৩, বাগেরহাট-৩, খুলনা-১, ৩, ৪ ও ৫, সাতক্ষীরা-৩, পটুয়াখালী-৪, ভোলা-৩, বরিশাল-৪ ও ৫, পিরোজপুর-২, টাঙ্গাইল-৫, জামালপুর-২, নেত্রকোনা-৩, ঢাকা-১২ ও ১৩, নরসিংদী-৪, গোপালগঞ্জ-২, মৌলভীবাজার-৪, কুমিল্লা-৭, চাঁদপুর-৩, ফেনী-২, নোয়াখালী-৫, লক্ষ্মীপুর-৩ ও কক্সবাজার-১।

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, স্ব-স্ব রিটার্নিং অফিসারের কাছ থেকে বাতিল আদেশের সার্টিফায়েট কপি সংগ্রহ করে সোমবার, মঙ্গলবার ও বুধবার ইসিতে আপিল করতে পারবেন সংক্ষুব্ধরা। এক্ষেত্রে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের বৈধ ও অবৈধ উভয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই আপিল করা যাবে। তবে, বৈধ মনোনয়নপত্রের বিরুদ্ধে আপিল ইসি এখতিয়ারে নিতে পারবে কিনা, আইনে তা স্পষ্ট নয়।

বাতিল হওয়া আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, জাপার মহাসচিব রুহুল আমিনস হাওলাদার, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি কাদের সিদ্দিকী, বিএনপির আমানউল্লাহ আমান, এম রুহুল কুদ্দুস দুলু, গোলাম মাওলা রনি, ড. রেজা কিবরিয়া, মোর্শেদ খান, মির্জা আব্বাসের স্ত্রী আফরোজা আব্বাস, ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা (স্বতন্ত্র), গণজাগরণ মঞ্চের ইমরান এইচ সরকার, চিত্রনায়ক সোহেল রানা ও হিরো আলম।

এদিকে, প্রত্যায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরের সঙ্গে মিল না থাকার অভিযোগে মানিকনগঞ্জ জেলার তিনটি আসনের বিএনপির ৪ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে বলে দলটির পক্ষ থেকে কমিশনে অভিযোগ করা হয়। বাতিল হওয়ার পর মানিকগঞ্জ-১ আসনে দু’জন ও ৩ আসনে ১ জন প্রার্থী থাকলো। আর মানিকগঞ্জ-২ আসনে দলটির আর প্রার্থী থাকলো না।

চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ বগুড়া ৬ আসনে বিএনপির মনোনীত তিনজনেরই মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার মামলাজনিত কারণে এবং অন্য দুইজন স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ায় তাদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। ফলে এই আসনে বিএনপির আর প্রার্থী থাকলো না।