একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারিক হাকিমদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দল একটি ইতিবাচক মনোভাব (পজিটিভ অ্যাটিটিউড) নিয়ে নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এত বড় নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। বিচারকেরা মাঠে থাকলে আর কোনো সংঘাত ঘটবে না।’
আজ মঙ্গলবার (১১ ডিসেম্বর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের মিলনায়তনে বিচারিক হাকিমদের ব্রিফিংকালে তিনি এ কথা বলেন।
সিইসি বলেন, ‘এটা বলার এবং বোঝার অপেক্ষা রাখে না যে নির্বাচনের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে। শুধু আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে যে উত্তাপের এই পরিবেশ যেন উত্তপ্ত না হয়। উত্তপ্ত হয়ে নির্বাচনী পরিবেশ যেন ব্যাহত না হয়, ব্যাঘাত না ঘটে। সে কারণে আমাদের এই আয়োজন। আমাদের প্রস্তুতি।’
তিনি আরও বলেন, ‘একটা সময় সাধারণ মানুষ ও বিচারকদের মধ্যে একটা অদৃশ্য কৃত্রিম দেয়াল ছিল। সেটি ক্রমেই সরে যাচ্ছে। আমি মনে করি যারা বিচার করবেন এবং যাদের মধ্যে বিচার, তাদের মধ্যে এত বড় দেয়াল থাকার প্রয়োজন ছিল না। নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সেই দেয়াল আরও কিছুটা শিথিল হবে। মানুষের কাছাকাছি গিয়ে বুঝতে পারবেন তাঁরা কী চান। নিরপেক্ষভাবে দায়িত্বপালনের ক্ষেত্র আরও প্রশস্ত হবে।’
বিচারিক হাকিমদের উদ্দেশ্য করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমাদের কাজ শুধু ৩০ তারিখ। সেদিন ভোট হবে। সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ করা, যেন কোনো সংঘাত না হয়, ভুল বোঝাবুঝি না হয়। সবাই যেন নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলেন, সেটা বুঝিয়ে দেওয়া। এটাই আমাদের উদ্দেশ্য। বিচারকেরা বিচারক। কে সাদা, কে কালো, কে রঙিন—সেটা বিচারকদের দেখার বিষয়। বিচারকার্যটাকে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করবেন, এটাই আমাদের কামনা। বিচার করে একেবারে জেলে পাঠিয়ে দেবেন, এটাও কাম্য নয়। আমাদের উদ্দেশ্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করা। এর জন্য যতটুকু প্রয়োজন ঠিক ততটুকুই প্রয়োগ করবেন।’
সিইসি কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘সেই অনাদিকাল থেকে বিচারকদের মানুষ অগাধ শ্রদ্ধা করে। কাজীর আমল থেকেই বিচারকেরা যে সিদ্ধান্ত দিতেন, সেটা মানুষ মান্য করতো, এখনও করে। নির্বাচন কমিশন অত্যন্ত আশাবাদী। আপনারা যদি মাঠে থাকেন, আপনাদের পদচারণায় এই নির্বাচনের পরিবেশ সুন্দর হবে। মানুষের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। মানুষ যেন ভোট দিয়ে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, সে পরিবেশ তৈরি করতে হবে।’
সিইসি আরও বলেন, একটা জিনিস মনে রাখতে হবে নির্বাচনের পরের দিন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনের আগের দিন ও নির্বাচনের দিন যতটা না সংঘাত হয়, তার থেকে বেশি সংঘাত হয় নির্বাচনের পরের দিন। অতি উৎসাহী লোক ও প্রতিহিংসাপরায়ণতার কারণে এসব হয়ে থাকে। ভোটের পরের দিন মিছিলের কারণে অনেকের মনে আঘাত লাগে, অনেকে কষ্ট পায়। এতে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নষ্ট হয়। বিষয়টি খেয়াল রাখতে এবং সজাগ থাকতে বিচারিক হাকিমের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি।
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘নির্বাচনী আইনে আছে নির্বাচনের পরের দিন কোনো শোডাউন হবে না। এটা কঠোরভাবে পালন করতে হবে। নির্বাচনে সহিংসতা সৃষ্টির আগে আপনারা অবস্থান নেবেন, যাতে কেউ কোনো ধরনের সহিংসতার প্রস্তুতি না নিতে পারে। সেটাই যথেষ্ট। তড়িৎগতিতে আপনাদের উপস্থিতি, সারা দেশে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ বজায় রাখবে। ওটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
এর সঙ্গে তিনি যোগ করেন, ‘বিচারকদের মানুষের সঙ্গে মিশলে কোনো ক্ষতি নেই। তবে মিশে যাবেন না (মিক্সড আপ)। আপনার ব্যক্তিত্ব কতটা শক্তিশালী, তার ওপর নির্ভর করে আপনি প্রভাবিত হবেন কি হবেন না। আইন, বিবেক, জ্ঞান, প্রজ্ঞা, ব্যক্তিত্ব প্রয়োগ করে আপনারা একটি সুন্দর ও সাবলীল নির্বাচন করতে পারবেন।’
সব রাজনৈতিক দল নির্বাচনে থাকবে বলে সিইসি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, হাজার হাজার মানুষ থাকবে। সব রাজনৈতিক দল একটি ইতিবাচক মনোভাব (পজিটিভ অ্যাটিটিউড) নিয়ে নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছে। এত বড় নির্বাচনে এখন পর্যন্ত কোনো সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। বিচারকেরা মাঠে থাকলে আর কোনো সংঘাত ঘটবে না বলে তিনি মনে করেন।