মেহেরপুরে এক যুবককে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে অন্তঃস্বত্তা স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। এই অভিযোগে আদালতে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে।
অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা লস্কর লাজুল ইসলাম জিয়া মেহেরপুর সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) হিসেবে কর্মরত।
মহেরপুরের জ্যেষ্ঠ বিচারিক দ্বিতীয় আদালতের বিচারকের কাছে করা মামলায় বলা হয়, মঙ্গলবার (২২ জানুয়ারি) দুপুরে মেহেদী হাসান বাকের নামের এক যুবককে ধরতে গিয়ে তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। এ সময় বাড়ির আসবাবপত্র ভাঙচুর, নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার ও মোটরসাইকেল লুট করা হয়।
বাকের হোসেনের স্ত্রী মারিয়া খাতুন বাদী হয়ে বিচারক হাদিউজ্জামানের আদালতে এই মামলা করেছেন। অভিযোগটি আমলে নিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শেখ জাহিদুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যর আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদেরকে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওবাইদুর রহমান ও আরেক কর্মকর্তা ফারুক হোসেন।
মামলার অভিযোগে মারিয়া খাতুন জানান, মঙ্গলবার দুপরে তিনি রান্না করছিলাম। এস আই জিয়া আরো দুই জন পুলিশ কনস্টেবল দরজায় ডাকাডাকি শুরু করেন। বাড়িতে কেউ নাই বলায় তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে টিনের দরজায় লাথি মারলে সেটি খুলে যায়।
জিয়া গালিগালাজ করে ঘরে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র তছনছ করা শুরু করেন। চেয়ার টেবিলসহ বিভিন্ন জিনিস ভাঙচুর এবং আলামারিতে থাকা নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করেন। পরে রান্না ঘরে মোটরসাইকেল দেখে চাবি চান। দিতে না চাইলে মারিয়াকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং বিভিন্ন হুমকি দেয়।
পরে চাবি দিলে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের অ্যাপাচি আরটিআর ব্রান্ডের মোটরসাইকেলটি নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান এবং বলেন টাকা নিয়ে গিয়ে মোটরসাইকেল ফেরত নিয়ে আসতে।
বাড়িতে থাকা নগদ ৮৫ হাজার টাকা, ৯১ হাজার টাকা মূল্যে স্বর্ণালংকার লুটের অভিযোগও করা হয় মামলায়।
মেহেদী হাসান বাকের বলেন, সোহেল নামের এক অটোচালকের সঙ্গে তার বিরোধ ছিল। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় একটি অভিযোগ করা হয়। সেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসআই জিয়া তাকে আটক করতে যান।
বাকের বলেন, ‘অপরাধ করলে আমি করেছি। আমার স্ত্রী কোন অপরাধ করেনি। আমার বাড়ি ঘর কোন অপরাধ করেনি। আমার বাবাও একজন পুলিশ কর্মচারী। পুলিশ কর্মকর্তা হিসেবে এ ধরনের ব্যবহার তিনি করতে পারেন না।’
প্রতিবেশী আনজিরা খাতুন বলেন, ‘তিন জন পুলিশ এসে বাড়ির ভেতরে সবকিছু ভেঙে চুরে মোটরসাইকেলটি নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার সময় আজে বাজে গালিগালাজও করে। বাকেরের পোয়াতি (অন্ত:স্বত্তা) বউকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে।’
বাকেরের নানি সফুরা খাতুন বলেন, ‘বার বার করে মোটরসাইকেলটি না নিয়ে যাওয়ার জন্য হাতজোড় করলাম। তবুও শুনলো না ওই পুলিশটা। মোটরসাইকেল নিয়ে গেল আবার টাকা নিয়ে গিয়ে ছাড়িয়ে আনতেও বলল।’
তবে এস আই জিয়ার দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে করা সব অভিযোগ মিথ্যা। তবে মোটর সাইকেল আনার কথা স্বীকার করেন তিনি। আর এর যুক্তি এভাবে দেন: ‘বাড়িতে একটি অনটেস্ট (লাইসেন্স বিহীন) মোটরসাইকেল ছিল। সেটি নিয়ে এসেছি।’
কোন ক্ষমতাবলে মোটরসাইকেলটি নিয়ে আসলেন- এমন প্রশ্নে অবশ্য এসআই জিয়া কোন জবাব দেননি।
মেহেরপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তদন্ত কমিটির প্রধান শেখ জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’