পুলিশ সদর দপ্তরের অধীনে থাকা ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ৯৯৯-এর পুলিশি সেবা নাগরিকদের কাছে আরো দ্রুত সময়ে পৌঁছাতে থানায় থানায় ডেসপাস সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে থানা পুলিশের টহল গাড়ি মনিটরিং করতে গাড়িতে যুক্ত হচ্ছে মোবাইল ডাটা টার্মিনাল (এমডিটি) নামে স্বয়ংক্রিয় ডিভাইস। এতে করে সহজেই জানা যাবে টহল গাড়ির অবস্থান। ৯৯৯-এ সহায়তা চেয়ে ফোন করলে আগের চেয়ে কম সময়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারবে পুলিশ।
জাতীয় জরুরি সেবার আওতায় এরই মধ্যে সারা দেশের ছয়টি মহানগর এলাকার ২০০টি থানায় ডেসপাস সেন্টার চালু করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ৫০টি থানার সবগুলোতে থাকছে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক বিশেষ এই সেবা। পাশাপাশি পুরো দেশের ৯২টি থানার একটি করে টহল গাড়িকে মোবাইল ডাটা টার্মিনাল বা এমডিটি সেবার আওতায় আনা হয়েছে। সেবা দুটি ভালোভাবে আয়ত্ত করতে থানার পুলিশ কর্মকর্তাদের এখন দেয়া হচ্ছে বিশেষ প্রশিক্ষণ।
ধীরে ধীরে পুলিশের এসব ডিজিটাল সেবা মহানগর ছাড়িয়ে জেলা পর্যায়েও ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা আছে বলে পুলিশ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে। জাতীয় জরুরি সেবার সহকারী পুলিশ সুপার মো. মিরাজুর রহমান পাটোয়ারী গণমাধ্যমকে বলেন, যেকোনো দুর্ঘটনায় পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা চেয়ে নাগরিকরা ৯৯৯-এ কল করেন। সাধারণত ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে টেলিফোন কনফারেন্সে সেবা প্রার্থীর সঙ্গে স্থানীয় পুলিশকে যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হতো। স্বাভাবিক পুলিশিংয়ের মতোই থানা থেকে প্রয়োজন হলে ফোর্স ঘটনাস্থলে পাঠানো হতো। তবে ডেসপাস সেন্টার ও টহল গাড়িতে এমডিটি চালু করার কারণে সংশ্লিষ্ট এলাকার নাগরিকরা আগের চেয়ে কম সময়ে ৯৯৯-এর সেবা পাবেন। তাছাড়া, জাতীয় জরুরি সেবার প্রধান কার্যালয়ে বসেই নজর রাখা যাবে স্বয়ংক্রিয় ডিভাইসযুক্ত এসব গাড়িতে।
মো. মিরাজুর রহমান পাটোয়ারী আরও জানান, কোনো ঘটনায় পুলিশ পৌঁছাতে দেরি হলে বা কেউ দায়িত্ব পালনে গাফিলতি করলে তা বোঝা যাবে এমডিটি থেকে। ৯৯৯ কার্যালয় থেকে এসব টহল গাড়িকে সরাসরি প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেয়া যাবে।
নাগরিকদের জানানো অভিযোগের ঘটনা খুব ভয়াবহ হলে গুরুত্ব বুঝে প্রয়োজনে টহল গাড়িকেই ঘটনাস্থলে পাঠানো যাবে। গত বৃহস্পতিবার সরজমিন কলাবাগান থানায় গিয়ে দেখা যায়, ডেসপাস সেন্টার ও এমডিটির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। থানার পরিদর্শক, উপ-পরিদর্শক ও সহকারী উপ-পরিদর্শকরা হাতে-কলমে ডেসপাস সিস্টেমের বিষয়ে বুঝে নিচ্ছিলেন।
জাতীয় জরুরি সেবার প্রশিক্ষক নূর মোহাম্মদ জানান, ওয়েবভিত্তিক প্যানেলের মাধ্যমে ৯৯৯-এর প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত থাকবে থানার একটি কম্পিউটারে চালু থাকা ডেসপাস সিস্টেমগুলো। কোনো গ্রাহক সেবা চেয়ে ফোন করে ঘটনার এলাকা ও বিবরণ জানালে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থানার ডেসপাস সিস্টেমে কল চলে যাবে। কল রিসিভ না করা পর্যন্ত বাজতে থাকবে রিংটোন। এতে করে কল গ্রহণ না করা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। কল গ্রহণ করার সঙ্গে সঙ্গে অভিযোগটি স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে কম্পিউটারের মনিটরে চলে আসবে। সেখান থেকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য অনুরোধ করা হবে। চাইলে সেখান থেকেও এমডিটিযুক্ত পুলিশের টহল গাড়িকে ঘটনাস্থলে পাঠাতে পারবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা। কল গ্রহণ করা থেকে অভিযোগের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত সময় গণনাও হবে ডেসপাস সিস্টেমে। ডিজিটাল পদ্ধতিতেই দেয়া হবে একটি অভিযোগ নম্বর, জানা যাবে তার আপডেটও। তবে সবকিছুতে তৎপর থাকতে হবে থানার কর্মকর্তাদের। এত সব প্রক্রিয়ার কারণে সেবা আরো সহজ হবে, জবাবদিহিও থাকবে অভিযোগের বিষয়ে। পাশাপাশি, ট্যাবলেট কম্পিউটারের মতো দেখতে মোবাইল ডাটা টার্মিনাল বা এমডিটি যুক্ত থাকবে জাতীয় জরুরি সেবার প্রধান কার্যালয়ের সঙ্গেও।
ডেসপাস সিস্টেম ও এমডিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেয়া কলাবাগান থানার উপ-পরিদর্শক মনসুর হোসেন মানিক বলেন, কল রেসপন্স, মেসেজ পাঠানোর পাশাপাশি টহল গাড়ির ডিভাইসের বিষয়ে জানতে পেরেছি। এতে করে এখন থেকে মানুষকে সেবা দেয়া আরো সহজ হবে। সরাসরি মনিটরিং থাকায় আমাদেরও দায়িত্বে অবহেলার কোনো সুযোগ থাকবে না।
কলবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আ ফ ম আসাদুজ্জামান মনে করেন ডিজিটাল বাংলাদেশের পুলিশি সেবাও শতভাগ ডিজিটাল হওয়া উচিত। তিনি বলেন, প্রত্যেক পুলিশ কর্মকর্তার ডেসপাস সিস্টেম ও এমডিটি সম্বন্ধে ধারণা থাকতে হবে। এসব সেবা চালুর কারণে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরো বাড়বে বলেও বিশ্বাস এই পুলিশ কর্মকর্তার।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১২ই ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রাজধানীর আব্দুল গণি রোডে পুলিশ কন্ট্রোল রুমে জাতীয় জরুরি সেবা ‘৯৯৯’ নম্বরের কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি পুলিশি সেবা দিতেই এমন উদ্যোগ নেয়া হয়। নাগরিকদের এই তিন ধরনের সেবা দেয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করছেন তারা। মানবজমিন