অ্যাডভোকেট মোঃ শামীম সরদার। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০১৯-২০ আসন্ন নির্বাচনে সদস্য পদপ্রার্থী। প্রথমবারের মতো দেশের সর্বোচ্চ আদালতের আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তিনি। নির্বাচনে বিজয়ী হলে আইনজীবী ও সমিতির কল্যাণে তার পরিকল্পনা বিষয়ে কথা বলেছেন ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমের বিশেষ প্রতিনিধিপ্রিন্স মাহামুদ আজিমের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলঃ-
পাবনা জেলার কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা এই তরুণ আইনজীবী বর্তমানে উচ্চ আদালতে আইন পেশায় জড়িত। স্থানীয় সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই আইনজীবীর লেখাপড়ায় হাতেখড়ি। ১৮৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত পাবনার প্রথম হাইস্কুল উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে তিনি মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেন এডওয়ার্ড কলেজ থেকে। এরপর বাংলা কলেজ থেকে ডিগ্রী পাশ করেন। অতঃপর ঢাকার একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশুনা সম্পন্ন করেন।
২০০৮ সালে তিনি বার কাউন্সিল সনদপ্রাপ্ত হন এবং ২০১২ সালে উচ্চ আদালতের আইনজীবী হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। পারিবারিকভাবে তরুণ এই আইনজীবী দুই সন্তানের জনক। জজ কোর্টের আইনজীবী তফিল উদ্দিনের জুনিয়র হিসাবে সর্বপ্রথম তিনি আইন পেশায় পদার্পণ করেন। পরবর্তীতে তিনি সুপ্রিম কোর্টের সিভিল আইনজীবী ফারুক আহমেদের জুনিয়র হিসাবে কাজ করেন। তরুণ এই আইনজীবী লেখালেখিতেও নিজের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। ইতিমধ্যে তার সম্পাদনায় ছয়টি বই প্রকাশিত হয়েছে। যে বইগুলো পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও তিনি ব্যক্তিগতভাবে কমিটমেন্ট ল’ একাডেমী নামক একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করেন।
নির্বাচিত হলে সমিতি ও আইনজীবীদের কল্যাণে পরিকল্পনার বিষয়ে তিনি বলেন, আইনজীবী সমিতিতে তিন ধরণের সমস্যা প্রকট।
প্রথমত, আইনজীবীদের কিউবিকেল (আইনজীবীদের বসার জায়গা) সমস্যা। বর্তমানে ৮১০০ ভোটার রয়েছে। এর বাহিরেও অনেকে বিভিন্ন কারণে এখনও ভোটার হতে পারেন নি। এই বৃহৎ সংখ্যক আইনজীবীদের বসার ব্যবস্থা সুপ্রিম কোর্ট বারে নেই। এই বৃহৎ সংখ্যক আইনজীবীদের বসার জন্য একটা অত্যাধুনিক বিল্ডিং এর প্রয়োজন।
দ্বিতীয়ত, উচ্চ আদালতের কর্মচারীদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুর্নীতি। এই দুর্নীতির কারণে অনেক আইনজীবী মামলা পরিচালনায় স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। এ জন্য দুর্নীতিরোধে বারে একটি সাব-কমিটি থাকা অত্যাবশ্যক। যাতে তারা ঘটমান দুর্নীতি সম্পর্কে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট করতে পারে। আদালতের কর্মচারীদের দুর্নীতির প্রতিবেদন প্রয়োজনে বিচারপতিদের নজরে আনা যেতে পারে। সেইসাথে বারের পক্ষ থেকে দুর্নীতি বিরোধী সেমিনারের আয়োজন করা উচিত।
তৃতীয়ত, প্রাথমিক অবস্থায় নবীন আইনজীবীরা আদালত প্রাঙ্গণে এসে মহাসমুদ্রে পড়তে হয়। কেননা, তারা জানেনা কীভাবে মামলা পরিচালনা করতে হবে, কীভাবে মক্কেলদের সাথে ডিল করতে হবে কিংবা কীভাবে মামলা লিখতে হবে ইত্যাদি বিষয়ে তারা সঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারেন না। এই ক্ষেত্রে আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে যদি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয় তাহলে নবীন আইনজীবীরা আইনাঙ্গনে নিজেদের মেলে ধরতে পারবেন। একইসাথে প্রথিতযশা আইনজীবীদের দিয়ে ড্রাফটিংসহ কীভাবে সাবমিশান রাখতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে মাসে অন্তত একটি সেমিনার আয়োজন করা যেতে পারে। সুপ্রিম কোর্ট নির্বাচনে আইনজীবী সমিতির কার্যকরি কমিটির সদস্য হিসাবে যদি আমি জয় লাভ করি এই সকল সমস্যা নিরসনে একজন সদস্যের অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা করার চেষ্টা করবো।
সমাজের বৃহত্তর কল্যাণে আইনজীবীদের ভূমিকা কি হতে পারে সে বিষয়ে জানতে চাইলে এই তরুণ আইনজীবী বলেন, সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে আইনজীবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কেননা আইনজীবীকে বাদ দিয়ে সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব। তবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে আদালত পাড়ার দুর্নীতি। আমি বিশ্বাস করি আদালত পাড়ার দুর্নীতি বন্ধ করা গেলে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে যায়। বাকি ২০ ভাগের ক্ষেত্রে বিচারব্যবস্থার কার্যকরি পদক্ষেপ বা অভিনব পরিকল্পনা প্রয়োজন। মোদ্দা কথা সমাজে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সর্বাগ্রে আদালত পাড়ার দুর্নীতি প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। একজন আইনজীবী হিসেবে আদালত পাড়ার দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমি অতীতেও সোচ্চার ছিলাম, ইনশাল্লাহ আমৃত্যু এসব দুর্নীতি প্রতিরোধে সচেষ্ট থাকব।
এছাড়া তরুণ আইনজীবীদের রাজনীতিতে অনাগ্রহের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের দেশের রাজনৈতিক যে সংস্কৃতি চলে আসছে সেখানে একজন তরুনের জায়গা সৃষ্টিতে সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক অনেক ধরণের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হয় প্রতিনিয়ত। তাই তরুণ আইনজীবীরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারাচ্ছে। এছাড়াও অন্য একটি কারণ হতে পারে মেধাবী তরুণ আইনজীবীরা প্র্যাকটিসে সময় দিতে গিয়ে রাজনীতিতে সময় দিতে পারেন না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।