মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার

ময়মনসিংহের ৫ আসামির বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ময়মনসিংহের পাঁচ আসামির বিরুদ্ধে চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

আজ রোববার (১০ মার্চ) রাজধানীর ধানমন্ডিতে তদন্ত সংস্থার প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ৪০ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেন সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মো. হান্নান খান।

আসামিদের মধ্যে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন— ময়মনসিংহের ধোবাউড়া পশ্চিম বালীগাঁও গ্রামের মো. কিতাব আলী ফকির (৮৫), মো. জনাব আলী (৬৮) এবং মো. আ. কুদ্দুছ (৬২)। মামলার অন্য দুই পলাতক আসামিকে গ্রেফতারের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করেনি সংস্থাটি।

আসামিদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অপহরণ, আটক, নির্যাতন, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও দেশান্তরিত হতে বাধ্য করাসহ দু’টি অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়।

২০১৮ সালের ৬ আগস্ট শুরুর পর গত ৭ মার্চ এ মামলার তদন্ত কাজ শেষ হয়। তদন্তে মোট ৪০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযযোগ দুটি হলো—

  • ১৯৭১ সালের ৩০ মে আসামিরা ময়মনসিংহের বর্তমান ধোবাউড়া থানার বালিগাঁও গ্রামে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তাকারী হিসেবে হাতেম আলী ওরফে গেন্দাকে আটকের জন্য তার বাড়িতে হামলা করে। এসময় হাতেম আলীকে তার বাড়ির উঠানে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। তার দুই স্ত্রী তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে এলে হাতেম আলীসহ তাদের তিন জনকে একসঙ্গে গাছে বেঁধে রেখে তাদের বাড়ির মূল্যবান জিনিসপত্র লুট করে। পরে তাদের তিন জনকে হত্যার উদ্দেশ্যে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজায় তালা দিয়ে আসামিরা চলে যায়। পরে ভারতের শিববাড়ী মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পের মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ পেয়ে উদ্ধার করেন। হাতেম আলী পরে তার স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে ভারতে চলে যান। আসামিরা এ সংবাদ জানতে পেরে হাতেম আলীর ঘরবাড়ি আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে দেয়।
  • ১৯৭১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর আসামিরা সশস্ত্র রাজাকর ও পাকিস্তান দখরদার বাহিনী সঙ্গে নিয়ে ময়মনসিংহের ধোবাউড়া থানার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় ও সহযোগিতা প্রদানকারী হিসেবে পরিচিত তারাইকান্দি গ্রামের শহীদ নূর মোহাম্মদ হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা চালায়। তারা নূর মোহাম্মদ ও তার দুই স্ত্রীকে হত্যা এবং নাতি-বউকে ধর্ষণের পর হত্যা করে। এরপর একই গ্রামের মো. ইছহাক আলী, মো. জমসেদ আলী (গুনা), মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. আব্দুল হেকিমসহ ওই গ্রামের পাশের এলাকার মো. সিরাজ আলী, মো. হাইদার আলী, মো. আব্দুল লতিফ, মো. মীর কাশেম, মো. রমজান আলীসহ অজ্ঞাত আরও ২৮ জন সহ মোট ৪১ জনকে অপহরণ, আটক, নির্যাতন এবং ৪৫ জনকে হত্যা করে।

এরপর একই হামলার ধারাবাহিকতায় তারাইকান্দি গ্রামের মাহমুদ হোসেন আকন্দ ও মিয়া হোসেন আকন্দের বাড়িতে হামলা, লুটসহ ২২টি টিনের ঘরে অগ্নিসংযোগ করে।