জামায়াতের বিচারে সংশোধিত আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদে

একাত্তরে সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার বিচারের পর দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারের দাবি ওঠে। কিন্তু সে বিচার নিশ্চিত করতে দরকার ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের সংশোধন। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার আশ্বাস পাওয়া গেলেও গত প্রায় পাঁচ বছরেও আইনটির সংশোধন সম্ভব হয়নি। অবশেষে সেই সংশোধিত আইনের খসড়া মন্ত্রিপরিষদে গেছে বলে জানা গেছে।

আজ সোমবার (২৫ মার্চ) আইনের খসড়াটির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘আইনের সংশোধনীর খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদে চলে গেছে।’

এর আগেও আইনটি সংশোধনের বেশকিছু নজির রয়েছে। ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনটির প্রথম সংশোধনী আনা হয়েছিল ২০০৯ সালে। প্রথম সংশোধনীতে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন আনা হয়েছিল। তারপর দ্বিতীয় সংশোধনী আনা হয় ২০১২ সালে। আসামির অনুপস্থিতিতে তাকে পলাতক ঘোষণা করে বিচার করা এবং এক ট্রাইব্যুনাল থেকে অন্য ট্রাইব্যুনালে মামলা স্থানান্তর নিয়ে এই সংশোধনী আনা হয়। এরপর দল হিসেবে জামায়াতের বিচারে সরকার উদ্যোগ নিলে আইনটির পুনরায় সংশোধনীর প্রয়োজন হয়।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খান গণমাধ্যমকে জানান, ‘২০১৩ সালের আগস্টে দল হিসেবে জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়। তদন্ত শেষে তা প্রতিবেদন আকারে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন কার্যালয়ে পাঠানো হয়। ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ ওই প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের পাঠানো হলেও এরপর আর জামায়াতের বিচারে কোন উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এরপর প্রায় ৫ বছর কেটে গেলেও বিচার শুরু করা সম্ভব হয়নি।’

এ বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, ‘সবার মতো আমরাও চাই আইনটি খুব দ্রুত সংশোধন করা হোক।’

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দল হিসেবে জামায়াতের বিচারে আইনটি সংশোধনে সরকারের উদ্যোগের কথা জানিয়েছিলেন। তবে এরপর গত পাঁচ বছর ধরে আইনের খসড়াটি মন্ত্রিপরিষদে তোলার আশ্বাস দেওয়া হলেও তা আর সম্ভব হয়নি। তবে দ্বিতীয় মেয়াদে আইনমন্ত্রী হওয়ার পর গত ১১ মার্চ আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, ‘রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশোধনী অনুমোদনের জন্য মন্ত্রিপরিষদের সভায় উত্থাপনের অপেক্ষায় রয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ‘জামায়াতের বিচার করতে সংশোধিত ট্রাইব্যুনাল আইনের সংশ্লিষ্ট ধারায় সংগঠন হিসেবে দোষী প্রমাণিত হলে সে সংগঠনকে নিষিদ্ধ করার বিধান যুক্ত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আইনটির বেশকিছু ধারায় ‘ব্যক্তি’ শব্দের পর ‘অথবা সংগঠন’, ‘দায়’ শব্দের পর ‘অথবা সাংগঠনিক দায়’, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তি’ শব্দের পর ‘অথবা সংগঠন’ যুক্ত করারও উদ্যোগ নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।