রাসেলকে ক্ষতিপূরণ না দিলে গ্রীনলাইনের সব গাড়ি নিলামে : হাইকোর্ট

আদালতের আদেশ সত্ত্বেও প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারকে ক্ষতিপূরণের ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘যত বড় বিজনেসম্যান হোক না কেন কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়।’

আদালত বলেন, একটা সীমা থাকা দরকার। ক্ষতিপূরণের টাকা পরিশোধ না করলে প্রয়োজনে গ্রীনলাইন পরিবহনের সব গাড়ির চলাচল বন্ধ করে দেয়া হবে। সব গাড়ি (সিজ) জব্দ করে নিলামে বিক্রির ব্যবস্থা করে রাসেলকে টাকা দেয়া হবে।’

ক্ষতিপূরণের অগ্রগতির বিষয়ে শুনানির সময় আজ বৃহস্পতিবার (৪ এপ্রিল) হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এসব কথা বলেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা। তার সঙ্গে ছিলেন অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি। অন্যদিকে গ্রীনলাইনের পরিবহনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ।

শুনানির শুরুতে আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা আদালতকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের আদেশের পর গ্রীনলাইন পরিবহনের কেউ কোনো যোগাযোগ করেনি, টাকাও দেয়নি। তাদের মালিককে স্বশরীরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন।’ এরপর আদালত গ্রীনলাইনের মালিকের বিষয়ে তথ্য জানতে ম্যানেজারকে তলব করেন।

গ্রীনলাইন পরিবহনের আইনজীবী মো. ওজি উল্লাহ বলেন, আদালতের আদেশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। গ্রীনলাইন পরিবহনের মালিক দেশের বাইরে আছেন। আদালত তখন জানতে চান, ‘পরিচালক কয়জন?’ জবাবে আইনজীবী বলেন, ‘একজনই মালিক, মো. আলাউদ্দিন।’ আদালত বলেন, ‘কোথায় আছেন, কবে গেছেন?’ তখন আইনজীবী বলেন, তিনি জেনে জানাবেন।

আদালত এ সময় আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘উনি (গ্রীনলাইনের মালিক) দেশের বাইরে থাকলেও ওনার ব্যবসা তো বন্ধ হয়নি। তার ম্যানেজারকে ডাকবেন। না হলে অ্যারেস্ট করার ব্যবস্থা করব। ইতিবাচক পদক্ষেপ না থাকলে গ্রীনলাইনের গাড়ি জব্দ করা হবে। গাড়ি নিলামে বিক্রির পর অর্থ পরিশোধ করবেন।’

জবাবে আইনজীবী বলেন, তিনি জেনে জানাবেন। আদালত তখন বলেন, ‘সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিত। যত বড় ব্যবসায়ীই হোন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন।’

পরে আদালত দুপুর ২টার মধ্যে গ্রীনলাইনের ব্যবস্থাপককে আদালতে হাজির হতে বলেন। দুপুর ২ টার পর এ বিষয়ে পুনরায় শুনানি হবে বলেও আদালত আদেশ দেন।

রাসেল সরকারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ গত ১২ মার্চ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এরপর হাইকোর্টের দেয়া ক্ষতিপূরণের ওই আদেশ স্থগিত চেয়ে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করে। গত ১৪ মার্চ আপিল বিভাগের চেম্বার জজ আদালত সেদিন হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত করেন। একই সঙ্গে গ্রীন লাইন কর্তৃপক্ষের করা আবেদনটি ৩১ মার্চ আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেন। পরে আপিল বিভাগে গত ৩১ মার্চ আবেদনটির ওপর শুনানি হয়।

বেপরোয়া বাসের চাপায় পা হারানো রাসেলকে দুই সপ্তাহের মধ্যে ৫০ লাখ টাকা দেয়ার পাশাপাশি রাসেলের অন্য পায়ে অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হলে এবং তার কাটা পড়া পায়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির কৃত্রিম পা লাগানোর খরচও তাদের বহন করতে বলা হয়। এ জন্য দুই সপ্তাহ সময়ও বেঁধে দেন আদালত।

৩১ মার্চ আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ। তাদের আপিলটি খারিজ হয়ে যাওয়ায় ক্ষতিপূরণের ওই অর্থ দিতেই হবে রাসেল সরকারকে।

গত বছর ২৮ এপ্রিল মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচালক প্রাইভেটকার চালক রাসেল সরকারের (২৩) ওপর দিয়েই গাড়ি চালিয়ে দেন। এতে রাসেলের দেহ থেকে বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এরপর অস্ত্রোপচার করে তার বাম পা কেটে ফেলা হয়। এ ঘটনায় রাসেলের বড় ভাই আরিফ সরকার বাসচালক কবির মিয়ার বিরুদ্ধে যাত্রাবাড়ী থানায় ওইদিনই মামলা করেন।

পা হারানো রাসেলের বাবার নাম শফিকুল ইসলাম, গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার পলাশবাড়িতে। ঢাকার আদাবর এলাকার সুনিবিড় হাউজিং এলাকায় তার বাসা। ওই দুর্ঘটনার পর সরকারি দলের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি আইনজীবী অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি গত বছরের ১৪ মে হাইকোর্টে ক্ষতিপূরণ চেয়ে একটি রিট আবেদন করেন।

রিটের শুনানিতে চলতি বছরের ৬ মার্চ রাসেল আদালতকে বলেছিলেন, পা হারানোর পর এখন পর্যন্ত গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ তাকে একটি টাকাও দেয়নি। খোঁজখবর নেয়নি, চিকিৎসার ব্যয়ও বহন করেনি। ওই রিটের শুনানি নিয়ে রাসেলকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।