দেশের তরুণ সমাজের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের লক্ষ্যে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়াতে সংসদ অধিবেশনে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনা হচ্ছে। আসন্ন সংসদ অধিবেশনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ঢাকা-৮ আসনের এমপি রাশেদ খান মেনন এ প্রস্তাব আনবেন।
জানা গেছে, প্রস্তাবে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করার প্রস্তাব করবেন রাশেদ খান মেনন। ইতোমধ্যে সংসদের আইন শাখা-২ সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি জমা দিয়েছেন। সংসদে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি গ্রহীত হলে এ বিষয়ে সরকারের কাজ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
এ বিষয়ে সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন গণমাধ্যমকে বলেন, সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবি তরুণ সমাজের দীর্ঘদিনের। এটি আমার কাছে একটি যৌক্তিক দাবি বলে মনে হয়, এ জন্য সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি আনা হবে। আমার সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি হলো- ‘সংসদের অভিমত এই যে, সরকারি-বেসরকারি চাকরিতে ঢোকার বয়সসীমা ৩৫ বছর ও অবসর গ্রহণের বয়সসীমা ৬২ বছর করা হউক।’
তিনি আরও বলেন, এছাড়া আমি আরও দুটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব এনেছি, এগুলো হলো- ‘সংসদের অভিমত এই যে, গ্রামীণ ক্ষেত মজুর নির্মাণ কর্মীসহ সকল স্তরের শ্রমজীবী মানুষের জন্য পেনশন স্কিম চালু করা হউক।’ আরেকটি হলো -‘সংসদের অভিমত এই যে, ব্যাংকিংখাতে আর্থিক নৈরাজ্য ও অব্যবস্থাপনা দূরীকরণার্থে উপায় উদ্ভাবন ও সুপারিশ গ্রহণের জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করা হউক।’
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদের দ্বিতীয় অধিবেশন শুরু হবে আগামী ২৪ এপ্রিল (বুধবার) বিকেল পাঁচটায়। এটি মাত্র পাঁচ কার্যদিবস চলতে পারে বলে সংসদের একাধিক সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। তবে অধিবেশন শুরুর এক ঘণ্টা আগে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। সংসদ চলাকালীন বৃহস্পতিবার বেসরকারি দিবস হিসেবে রাখা হয়। এ দিন মন্ত্রী নয়, শুধু এমপিদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব আনা হয়।
সংসদের আইন শাখা-২ এর সূত্র জানায়, এমপিদের আনা সিদ্ধান্ত প্রস্তাবে মন্ত্রী একমত না হলে তিনি (সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী) ব্যাখ্যা করে সেই সিদ্ধান্ত প্রস্তাবটি প্রত্যাহারের অনুরোধ করেন। আর গ্রহণ করার হলে গ্রহণ করেন। তবে সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গ্রহণ বা প্রত্যাখান-দুটোই হ্যাঁ বা না ভোটে দিয়ে পাস করে নিতে হয়। ফলে এটি এক ধরনের আইনও বলা যায়।
স্বাধীনতার পর সংসদে এমপিদের ভোটে ২৩টি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হলেও এগুলো তেমন বাস্তবায়ন হয়নি। বিগত দশম সংসদে সংসদে চারটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব গৃহীত হয়। কিন্তু যত সমারোহে সিদ্ধান্ত প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করা হয়, ততো গুরুত্ব দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আইন করা বা ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি ১৪৩ এর (২) ধারা অনুযায়ী, গৃহীত সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কোনো ব্যবস্থা নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী পরে সংসদে তা জানাবেন। কিন্তু দশম সংসদে চারটি সিদ্ধান্ত প্রস্তাব পাস হলেও এ সম্পর্কে মন্ত্রীরা কে কী করেছেন -তা সংসদে জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা সংসদে জানাবেন -এটাই আইন। সেটা না মানাটা সংসদীয় চর্চার বড় ব্যাঘাত।’
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিতে গত বছর ধরে আন্দোলন করে আসছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র পরিষদ নামের একটি সংগঠন। তাদের দাবি বর্তমানে বেঁধে দেয়া বয়স ৩০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫ করতে হবে। সংগঠনের নেতাদের দাবি বিশ্বের ১০৭টি দেশে চাকরির বয়সের ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইউরোপসহ এসব দেশে চাকরির বয়স হচ্ছে ৩৫ থেকে ৫৯ পর্যন্ত। ভারতেরও বিভিন্ন রাজ্যে চাকরির বয়সসীমা ৩৫ থেকে ৪৫ বছর। এ জন্য বাংলাদেশেও বয়সসীমা বাড়ানোর পক্ষে আন্দোলন করছেন তারা।