ফৌজদারি মামলায় গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী হচ্ছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক। অনেক ফৌজদারি মামলায় সমন ও জামিন অযোগ্য গ্রেপ্তারি পরোয়ানি জারি করার পরেও এসব সাক্ষীরা সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির হচ্ছে না। পুলিশ, চিকিৎসকসহ যে সব সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় সাক্ষী রয়েছেন তারা যদি সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির না হন তাহলে এদের বেতন আটকে দেওয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দিতে সংশ্লিষ্ট বিচারকদেরকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
২০ বছর আগের একটি হত্যা মামলার আসামির জামিন আবেদনের শুনানি শেষে বুধবার (৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এ সময় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ফরহাদ আহমেদ ও সহকারি অ্যাটর্নি জেনারেল ইউসুফ মাহমুদ মোর্শেদ উপস্থিত ছিলেন।
আদালত বলেন, অনেক ফৌজদারি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুতকারী পুলিশ সদস্য, ময়না তদন্তকারী চিকিৎসক বিভিন্ন সময়ে দীর্ঘদিন যাবত বিদেশে অবস্থান করেন। অনেক পুলিশ সদস্য শান্তি রক্ষা মিশনে, অনেক চিকিৎসক উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের জন্য বিদেশে যান। এদের মধ্যে যারা মামলার সাক্ষী হিসেবে থাকেন তাদের বিদেশে থাকার কারনে মামলার বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়। এ থেকে কিভাবে উত্তোরণ করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তাভাবনা সময় এসেছে।
ডেমরায় হযরত আলী ও মাসুদ হোসেন নামে দুই যুবককে কুপিয়ে শরীর থেকে দু’হাত বিচ্ছিন্ন করে দেয় সন্ত্রাসীরা। এর মধ্যে হযরত আলী মারা যাওয়ার ঘটনায় তার পিতা শওকত আলী ফকির ১৯৯৮ সালের ১৬ মার্চ ডেমরা থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় শীর্ষ সন্ত্রাসী জাহাঙ্গীর ওরফে কালা জাহাঙ্গীরসহ ১০ জনকে আসামি করে ২০০৩ সালে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। ২০০৪ সালের ৮ আগস্ট আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়। কিন্তু দুই দশক ধরে এই মামলার একজন সাক্ষীও আদালতে হাজির হননি।
এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে তলব আদেশে গতকাল বুধবার (৮ মে) হাইকোর্টে হাজির হন ঢাকার পঞ্চম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আলী। তিনি বলেন, গত এক বছর ধরে মামলাটি আমার আদালতে। এই সময়ে সকল সাক্ষীকে সমন ও পরোয়ানা জারি করেও হাজির করা সম্ভব হয়নি। এমনকি মামলার বাদিও সাক্ষী দিতে আসেননি।
এ সময় হাইকোর্ট বলেন, এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। একইসঙ্গে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট বিচারকে নির্দেশ দেয় আদালত। পাশাপাশি পুলিশ, চিকিৎসকসহ যে সব সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় সাক্ষী রয়েছেন তারা যদি সাক্ষ্য দিতে আদালতে হাজির না হন তাহলে এদের বেতন আটকে দেওয়ার পাশাপাশি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দিতে সংশ্লিষ্ট বিচারকদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
পরে আদালত ওই মামলার আসামি হেমায়েতের জামিন মঞ্জুর করেছে। তবে জামিনের শর্ত ভঙ্গ করলে তাৎক্ষণিক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।