পর্যটন রাজধানী খ্যাত কক্সবাজার জেলা জজশিপকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। এ দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে সুপ্রীমকোর্টও ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়কে অবহিত করেছে বলে জানা গেছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার প্রায় ১৪ বছরেও জেলা জজশিপকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়নি। আটটি উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার জেলা জজশিপসহ বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে ৭৬ হাজার মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
সূত্র জানায়, কক্সবাজার জেলাটি মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকহারে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটায় ইয়াবার চালান, মানবপাচার, মাদক, চোরাচালান, হত্যা, ডাকাতি, ধর্ষণ, অস্ত্র, সন্ত্রাসী কর্মকা- ও বৈদেশিক নাগরিকত্ব আইনে মামলার সংখ্যা এখানে খুব বেশি। দাম্পত্য বিরোধজনিত মামলার সংখ্যাও প্রচুর। রেল লাইন প্রকল্প, মহেশখালীর মাতারবাড়িতে তাপবিদ্যুত প্রকল্প, আন্তর্জাতিকমানের বিমানবন্দর সম্প্রসারণ প্রকল্পসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য ভূমি অধিগ্রহণ ও জমির মূল্য বৃদ্ধির কারণে মামলার সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বর্তমানে কক্সবাজার জেলা জজ আদালত ও এর আওতাধীন দেওয়ানী আদালতগুলোতে প্রায় ২২ হাজার মামলা বিচারাধীন আছে। এদিকে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১৯ হাজার। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে ফৌজদারি মামলার সংখ্যা প্রায় ২৬ হাজার। নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে প্রায় ৯ হাজার মামলাসহ জেলার বিভিন্ন কোর্টে বর্তমানে ৭৬ হাজার বিচারাধীন মামলা আছে।
স্থানীয়রা ছাড়াও রোহিঙ্গারা নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ায় প্রতিনিয়ত মামলার সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে কক্সবাজার জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট অ.জ.ম. মঈন উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের সর্ব দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত আড়াই হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের কক্সবাজার জেলার লোকসংখ্যা হচ্ছে ২৪ লাখ। এরমধ্যে মিয়ানমার থেকে অনুপ্রবেশ করে আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা।
তিনি বলেন, আটটি উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার জেলায় জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালত একটি। যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুটি, সিনিয়র সহকারী জজ আদালত একটি ও সহকারী জজ অদালত ছয়টি। এছাড়াও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতসহ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত একটি, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত তিনটি এবং জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আছে ছয়টি।
আইনজীবী সমিতির সভাপতি আরও বলেন, পর্যটন শহর কক্সবাজারে বিপুল পরিমাণ মামলার বিপরীতে আদালত ও বিচারকের সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। ফলে আশঙ্কাজনকহারে এখানে মামলা জট বৃদ্ধি পাচ্ছে। মামলার দীর্ঘ সূত্রতার কারণে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে।
সূত্র মতে, প্রায় ৭৬ হাজার মামলার ভারে জর্জরিত কক্সবাজার জেলা জজশিপকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করে আরও দুটি অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত, তিনটি যুগ্ম জেলা জজ আদালত, একটি অর্থঋণ আদালত ও সিনিয়র সহকারী জজ আদালত স্থাপন করা দরকার হয়ে পড়েছে। এতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ এবং ভৌত অবকাঠামো সুবিধাসহ লোকবল বৃদ্ধি করা গেলে দ্রুত আইনী সহায়তা ও বিচার পাবে স্থানীয়রা। প্রতিটি আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন বিচারকের পক্ষে একদিনে অসংখ্য মামলা পরিচালনা (বিচার কার্যক্রম) করা মোটেও সম্ভব নয়। তাই বর্তমানে বিচারক ও আদালতের সংখ্যা কম হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে বিচার প্রার্থীরা এসে শুধু পরবর্তী তারিখটা নিয়ে নিরাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ বাড়িঘরে।
কক্সবাজারের মোট বিশটি আদালতে ৭৬ হাজার মামলার জট কমাতে আদালতের ও বিচারকের সংখ্যা বৃদ্ধিকল্পে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মঈন উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবালুর রশিদ আমিন আইন মন্ত্রীর বরাবরে আবেদন জানিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনকে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করা হয়েছে। তবে জেলা জজশিপ এখনও বি ক্যাটাগরিতে রয়ে গেছে। এ অবস্থায় কক্সবাজার জেলার ক্রমবর্ধমান গুরুত্ব ও মামলার সংখ্যাধিক্য বিবেচনা করে জেলা জজশিপকে এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত করার জন্য আইনজীবী নেতাদের পাশাপাশি দাবি জানানো হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকেও।