চার মাসের সাজার আপিল নিষ্পত্তি হয়নি ৪৯ বছরেও
উচ্চ আদালত

বিচারক-আইনজীবীর নিরাপত্তায় গৃহীত পদক্ষেপ জানতে চান হাইকোর্ট

সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত, বিচারক ও আইনজীবীর নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে কুমিল্লায় আদালতের নিরাপত্তায় দায়িত্বরতদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে তাও জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

কুমিল্লার এক আদালতে বিচারকের খাসকামরায় খুনের ঘটনার প্রেক্ষাপটে দেশের আদালত ও বিচারকের নিরাপত্তার নির্দেশনা চেয়ে এক বিচারকের স্ত্রী অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে আজ বুধবার (১৬ জুলাই) বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মৌখিক আদেশ দেন।

শুনানিতে আদালত বলেন, কুমিল্লার পর গতকাল সুপ্রিম কোর্ট বারেও ঘটনা ঘটেছে। এ অবস্থায় কোর্টে আইনজীবী, জাজ ও কর্মকর্তাদের সিকিউরিটির জন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে? তখন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, কুমিল্লা এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের ২টি ঘটনাই ব্যক্তিগত।

এ সময় আদালত বলেন, ব্যক্তিগত হোক আর যাই হোক। কোর্টের ভেতরে ছুরি নিয়ে কিভাবে যায়? পুলিশ কি করে? ডেফিনেটলি এটা পুলিশের নেগলিজেন্স!

তখন রিট আবেদনকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান বলেন, নিরাপত্তা তো সবার জন্য। উনিও (রাষ্ট্রপক্ষের) এমন পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন। তাই আইনজীবী, বিচারকসহ সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

এরপর আদালত, বিচারক ও আইনজীবীর নিরাপত্তায় কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, তা জানতে হাইকোর্ট রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে মৌলিক নির্দেশ দেয়। সেই সাথে রিট আবেদনটি ৩০ জুলাই পর্যন্ত মুলতবি (স্ট্যান্ডওভার) করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী ইশরাত হাসান। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

এর আগে গত ১৫ জুলাই কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ফাতেমা ফেরদৌসের খাস কামরায় এক আসামি অপর আসামিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ওইদিন আসামি ফারুক হোসেনকে ছুরিকাঘাতের ঘটনায় তার ফুপাতো ভাই আবুল হাসানকে (২৫) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। একটি হত্যা মামলার আসামি ছিলেন ফারুক ও আবুল হাসান। তারা দুজন জামিনে থেকে মামলায় হাজিরা দিতে ওইদিন আদালতে আসেন। একপর্যায়ে ফারুক ও হাসানের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এরপর আবুল হাসান কুমিল্লার জেলা ও দায়রা জজ আদালত ভবনের তৃতীয় তলায় ছুরি নিয়ে ধাওয়া করেন ফারুককে। ফারুক আত্মরক্ষার্থে বিচারকের খাস কামরায় প্রবেশ করেন। সেখানে বেলা ১১টা ২০ মিনিটে ফারুক হোসেনকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়। তখন আদালতের লোকজন আবুল হাসানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। এরপর ফারুক হোসেনকে হাসপাতালে নেয়ার পথে তিনি মারা যান।

এদিকে এক হত্যা মামলায় গত মঙ্গলবার হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন পাওয়ায় বাদী পক্ষের মারধরের শিকার হয়েছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার বাজিতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হাওলাদার। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতির ভবনে মারধরের ওই ঘটনায় আইনজীবী ও বিচার প্রার্থীদের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ ঘটনায় মামলা করা হয়।

অন্যদিকে আজ সকাল থেকেই সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গণে বাড়তি নিরাপত্তা তদারকি লক্ষ্য করা যায়। হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগের বিভিন্ন গেটে আর্চওয়ের সামনে নিরাপত্তা তদারকি করেন পুলিশের এডিসি নাদিয়া ফারজানা।

সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তার বিষয়ে নাদিয়া ফারজানা চ্যানেল গণমাধ্যমকে বলেন, সম্প্রতি কুমিল্লার আদালতে একটি ঘটনা ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই সুপ্রিম কোর্টের নিরাপত্তার বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। তবে এটা আমাদের রুটিন ওয়ার্ক। সুপ্রিম কোর্টে কোন নিরাপত্তা ঝুঁকি দেখছি না।