বরগুনার চাঞ্চল্যকর রিফাত শরীফ হত্যার ঘটনায় অভিযুক্ত ৬ কিশোরকে সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি আসামিদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বরগুনার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. সিরাজুল ইসলাম গাজী এ আদেশ দেন।
ছয় কিশোর হলেন- রিশান ফরাজী, তানভীর, চন্দন, অলি, নাজমুল ও শ্রাবণ।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় গ্রেফতার ১৪ অভিযুক্তকে মঙ্গলবার সকালে আদালতে হাজির করে পুলিশ। অভিযুক্তদের মধ্যে ছয়জনের বয়স ১৮ বছরের কম হওয়ায় আদালত তাদের খুলনার শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন আদালত।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রিফাত হত্যার ৭ নম্বর আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বলেন, আজ এ মামলার ধার্য তারিখ থাকায় রিফাত হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত আসামিদের আদালতে হাজির করা হয়। এদের মধ্যে ৬ জনকে কিশোর সংশোধন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। বাকি অভিযুক্তদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, এ মামলায় অভিযুক্ত চন্দন ও টিকটক হৃদয়ের জামিনের জন্য আবেদন করা হয়েছে। তবে এই আদালতে মামলার মূল নথি না থাকায় কোনো আদেশ দেননি বিচারক। এছাড়া অভিযুক্ত শ্রাবণের স্বীকারোক্তি প্রত্যাহারের জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। পরে আদালতে এজন্য কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে যথাযথ প্রক্রিয়ায় আবেদন করার আদেশ দেন।
রোববার রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় রিফাতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ২৪ জনের বিরুদ্ধে বরগুনার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দেয় পুলিশ। একই সঙ্গে রিফাত হত্যা মামলার ১ নম্বর আসামি নয়ন বন্ড বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ায় তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
গত ২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পর দিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন, তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। পরে মিন্নির শ্বশুর তার ছেলেকে হত্যায় পুত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে ঘটনা নতুন দিকে মোড় নেয়।
গত ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।
পর দিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠান। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়।
তার আগের দিনই পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘মিন্নি হত্যাকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা এবং হত্যা পরিকল্পনাকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন। মিন্নিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গে মিন্নির যুক্ত থাকার প্রমাণ পেয়েছে পুলিশ।’
মিন্নি পরে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। মিন্নির বাবা অভিযোগ করে আসছেন, ‘নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে’ মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি।
বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর গত ৫ আগস্ট হাইকোর্টে জামিন আবেদন করেন তার আইনজীবীরা।