মো: রায়হানুল ওয়াজেদ চৌধুরী:
বাংলা ছায়াছবির আদালত কেন্দ্রিক দৃশ্যে সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণের পূর্বে পাঠ করানো ‘যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বৈ মিথ্যা বলিব না’ শপথ বাক্যটি বোধকরি সকলের মুখস্ত। বাস্তবতাও তাই, তবে আদালতে যেকোনো ধরনের জবানবন্দী বা সাক্ষ্য দেওয়ার কিছু সাধারণ নিয়ম রয়েছে। জবানবন্দী বা সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য এজলাসের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে জবানবন্দী দাতাকে বাধ্যতামূলক একটি শপথ বাক্য পাঠ করতে হয়। প্রতিদিন বহু মামলায় অসংখ্য মানুষ সাক্ষ্য/জবানবন্দী দিতে আসেন। কিন্তু সঠিকভাবে শপথবাক্য পাঠ করানো হচ্ছে কি? যদিও এই শপথ গ্রহণের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট আইন রয়েছে।
“The oath act 1873” নামের শপথ আইনে ৩ ধরনের শপথবাক্য পাঠ করতে বলা হয়েছে। একটি হচ্ছে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য, একটি নাস্তিকদের জন্য এবং আরেকটি হচ্ছে অন্যান্য। অর্থাৎ মুসলিম/ হিন্দু /বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের জন্য আলাদা করে আইনে কিছু বলা নেই। তবে ‘অন্যান্য’ দ্বারা সম্ভবত খ্রিস্টান ও নাস্তিক ব্যতীত বাকি সকল সাক্ষীর শপথের কথা বলা হয়েছে।
পাশপাশি আইনে এই তিনটি শপথবাক্য কেমন হবে সেটা নির্ধারণ করতে বলা হয়েছে সুপ্রীম কোর্টকে। সুপ্রীম কোর্ট সেটা নির্ধারণ করে দিয়েছেনও। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে কোন আদালতে/এজলাসে এই তিন ধরণের শপথবাক্য দেখা যায় না। সাধারণত সব আদালতের এজলাসের কাঠগড়ায় একটি শপথ বাক্য টাঙানো থাকে। যা জবানবন্দী/সাক্ষ্য দিতে আসা সবাইকে পড়ানো হয়। আইনে থাকলেও প্রচলিত নিয়ম (custom) হচ্ছে একটা শপথবাক্য পাঠ করালেই চলে বলে জনসাধারণের ধারণা।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হচ্ছে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৪র্থ আদালতে গিয়ে দেখা গেল কাঠগড়ায় তিনটি শপথবাক্য টাঙানো আছে। ওই আদালতের এজলাসে টাঙানো শপথবাক্য তিনটি নিম্নরূপ;
খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী সাক্ষীর শপথ
“আমি শপথ করিতেছি যে, এই মামলায় যাহা সাক্ষ্য দিব তাহা সত্য হইবে, আমি কিছুই গোপন করিব না, এবং সাক্ষ্যের কোন অংশই মিথ্যা হইবে না। ঈশ্বর আমাকে সাহায্য করুন।”
নাস্তিকদের সাক্ষীর জন্য ঘোষণা
“আমি গুরুত্ব সহকারে ঘোষণা দিতেছি যে, এই মামলায় আমি যাহা সাক্ষ্য দিব তাহা সত্য, আমি কিছুই গোপন করিব না, আমার সাক্ষ্যের কোন অংশই মিথ্যা হইবে না।”
অন্যান্য (মুসলিম/ হিন্দু/বৌদ্ধ বা অন্য কোন সম্প্রদায়ের) সাক্ষীর শপথ
“আমি শপথ করিতেছি যে ,এই মামলায় যাহা সাক্ষ্য দিব তাহা সত্য হইবে, আমি কিছুই গোপন করিব না, এবং সাক্ষ্যের কোন অংশই মিথ্যা হইবে না। আল্লাহ (আল্লাহ্ মুসলিম সাক্ষীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, ধর্ম ভিন্ন হলে রীতি অনুযায়ী স্রষ্টাকে যে নামে ডাকা হয়) আমাকে সাহায্য করুন।”
উল্লেখ্য, The oath act 1873 অনুযায়ী ১২ বছরের কম বয়সে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে শপথ নেওয়া বাধ্যবাধকতা নাই। তবে আদালত প্রয়োজন মনে করলে শপথবাক্য পাঠ করাতে পারেন।
সবশেষে একজন আইনজীবী হিসেবে দেশের সকল আদালতের এজলাসে বা কাঠগড়ায় আইনে উল্লেখিত ৩ ধরনের শপথবাক্য টাঙানোর যেন ব্যবস্থা হয় সে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি।
লেখক: অ্যাডভোকেট; জজ কোর্ট, চট্টগ্রাম।