বাংলাদেশের উচ্চ আদালত

নাতির খোঁজে হাইকোর্টের দ্বারস্থ নানা-নানি

অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক শায়ান মাসরুর আলমের বয়স এখন তিন বছরের কিছু বেশি। মায়ের সঙ্গে ছয় মাস বয়সে অস্ট্রেলিয়ায় যায় শিশুটি। তবে অস্ট্রেলিয়ায় থাকা শিশুটির মা গত ২৭ অক্টোবর থেকে শায়ানকে কাছে পাচ্ছেন না। শিশুটির বাবা দিদারুল আলম ও দাদি দালোয়ারা বেগম অস্ট্রেলিয়া থেকে শিশুটিকে নিয়ে দেশে চলে আসেন। দিদারুল গত ২৯ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ায় থাকা শিশুটির মা সাবরীনা বারীর বরাবরে ডিভোর্স নোটিশ পাঠিয়েছেন—এমন দাবি শায়ানের নানা ও নানির।

এই প্রেক্ষাপটে শিশুটিকে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়নি, তা নিশ্চিতে এবং তার মায়ের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়া নিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন তার নানা নাজমুল বারী ও নানি রফিকা আফরোজ। তাঁদের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ১৩ নভেম্বর হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুলসহ আদেশ দেন।

শিশুটিকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়নি—এ বিষয়ে সন্তুষ্টির জন্য শায়ানকে ২১ নভেম্বর আদালতে হাজির করতে শিশুটির বাবা ও দাদিকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। ধার্য তারিখে শিশুটিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়া হাইকমিশনে যোগাযোগ করে রাষ্ট্রপক্ষকে জানাতেও বলা হয়েছে। এ বিষয়ে ২৫ নভেম্বর পরবর্তী দিন রাখা হয়েছে।

২১ নভেম্বর আদালতে শিশুটির নানা ও নানির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মুহাম্মাদ আমিরুল হক। শিশুটির ফুফু হাসিনা বানুর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী বি এম ইলিয়াস ও বিভূতি তরফদার। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান।

শিশু শায়ানের নানা নাজমুল বারী মুঠোফোনে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ায় থাকা তাঁর মেয়ে শায়ানের জন্য এখন শয্যাশায়ী। মাকে না জানিয়ে তিন বছর বয়সী শিশুকে এভাবে অস্ট্রেলিয়া থেকে আনা কোনো আইনে সমর্থন করে না।’

শিশুটির ফুফুর আইনজীবী বিভূতি তরফদার বলেন, শিশুটির মা অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। শিশুটির নানা ও নানির রিট আবেদন করার আগেই ২ নভেম্বর শিশুটিসহ তার বাবা ও দাদি দেশ ত্যাগ করে ইন্দোনেশিয়ায় আছেন। ছুটি শেষে অস্ট্রেলিয়ায় যাবেন তাঁরা। যেহেতু শিশু ও তার বাবা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক, তাই বিষয়টি সেখানেই ফয়সালা হতে পারে।

রিট আবেদন থেকে জানা যায়, ২০১৫ সালের ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক দিদারুল আলম ও সাবরীনার পারিবারিকভাবে ঢাকায় বিয়ে হয়। ২০১৬ সালের ২৫ অক্টোবর শায়ানের জন্ম হয়। বাবা অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক হওয়ায় জন্মসূত্রে শায়ান অস্ট্রেলিয়ান পাসপোর্ট পায়। পরের বছরের ২৮ মার্চ শিশু শায়ানকে নিয়ে তার মা অস্ট্রেলিয়ায় যান। ভিজিটরস ভিসায় অস্ট্রেলিয়ায় যান শিশুটির মা। তবে স্ত্রী হিসেবে সাবরীনার পার্টনার ভিসার জন্য আবেদন করেন দিদারুল। এর পরিপ্রেক্ষিতে পার্টনার ভিসা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় সাবরীনাকে ব্রিজিং ভিসা দেওয়া হয়। গত ৭ আগস্ট শিশুটির দাদি অস্ট্রেলিয়ায় যান। গত ২৭ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় সময় বিকেল পাঁচটার দিকে কর্মস্থল থেকে ফিরে সাবরীনা বাসায় শায়ানসহ কাউকে দেখতে পাননি। তখন শিশুর বাবাকে ফোন করে সাবরীনা জানতে পারেন, শিশুটির দাদির এক বোনের বাসায় গেছেন তাঁরা, রাত আটটার দিকে ফিরবেন। আটটার পরে ফোন দিলে দিদারুল জানান, সকালে ফিরবেন। সন্দেহ হলে সাবরীনা ভিডিও কল দেওয়ার কথা বলেন। এরপর দিদারুলের ফোন বন্ধ পান। গত ২৯ অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ার সময় সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে শিশুটির বাবার খুদে বার্তা পান শিশুটির মা। খুদে বার্তায় বলা হয়, শায়ান ভালো আছে, ঘুমাচ্ছে। তবে কোথায় আছে, তা জানাননি। শিশুটির বাবা ও দাদির পারিবারিক কিছু বন্ধুর মাধ্যমে সেদিন সাবরীনা জানতে পারেন, মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসে করে শায়ানসহ তার বাবা ও দাদি বেলা ১১টা ২০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। পরে শিশুটির নানা-নানি তার বাবা, দাদিসহ অন্যদের সঙ্গে বিভিন্নভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও শিশুটি সম্পর্কে তথ্য জানতে পারেননি। এই অবস্থায় গত ৩১ অক্টোবর হাজারীবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন শিশুটির নানা। গত ৭ নভেম্বর শিশুটির নানা ও নানি হাইকোর্টে ওই রিট করেন বলে জানা গেছে।

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কাজী মাঈনুল হাসান বলেন, অস্ট্রেলিয়ান নাগরিক শিশুটি। এ বিষয়ে শিশুটির মা বাংলাদেশে থাকা অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে ই-মেইলও করেছেন। শিশুটির বাবার শিশুটিকে বাংলাদেশে নিয়ে আসার ক্ষেত্রে হাইকমিশনের কোনো পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন আছে কি না এবং এ ক্ষেত্রে কমিশন কী সহযোগিতা করতে পারে, তা জানতে রাষ্ট্রপক্ষকে অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনে যোগাযোগ করতে বলেছেন আদালত। ২৫ নভেম্বর পরবর্তী দিন রয়েছে।

শিশুটির নানা ও নানির আইনজীবী মুহাম্মাদ আমিরুল হক বলেন, ২১ নভেম্বর শিশুটিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। মায়ের সম্মতি ছাড়া বাবা একক সিদ্ধান্তে ও প্রতারণামূলকভাবে শিশুটি নিয়ে আসেন। একক সিদ্ধান্তে বাবা সন্তানকে মা থেকে আলাদা করতে পারবেন না বলে উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তও রয়েছে। শিশুটিকে বেআইনিভাবে আটকে রাখা হয়েছে, যা দেশের আইন ও সংবিধান দ্বারা সমর্থিত নয়—এসব যুক্তিতে রিটটি করা হয়। সূত্র- প্রথম আলো