আম বাগানের পাখির বাসা এবং হাইকোর্ট (ইনসেটে)

আমবাগানে পাখির অভয়াশ্রম সংরক্ষণে ২ মন্ত্রণালয়ের বক্তব্য চান হাইকোর্ট

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামের আমবাগানে পাখির অভয়াশ্রম সংরক্ষণ তথা বাসা না ভাঙার বিষয়ে কৃষি এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতামত জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) এই আদেশ দেন।

আগামী ১৫ জানুয়ারির মধ্যে এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে ওইদিন পরবর্তী শুনানি ও আদেশের জন্য দিন ধার্য করেছেন আদালত।

আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

এর আগে গত ৩০ অক্টোবর হাইকোর্ট এক আদেশে পাখির বাসা ভাঙার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে আদেশ দেন। একইসঙ্গে ওই গ্রামকে কেন পাখির জন্য অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন।

এছাড়া ওই গ্রামকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করলে আমবাগান মালিক বা ইজারাদার কী পরিমাণ ক্ষতিগ্রস্ত হবেন- তা নিরূপণ করে ৪০ দিনের মধ্যে আদালতকে জানাতে রাজশাহীর ডিসি ও বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) নির্দেশ দেয়া হয়।

এ নির্দেশের পর রাজশাহীর ডিসি লিখিতভাবে হাইকোর্টকে জানিয়েছেন, পাখির অভয়াশ্রম রক্ষা করতে হলে আমবাগানের মালিককে বছরে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা দেয়া প্রয়োজন। আর স্থায়ীভাবে অভয়াশ্রম করতে আমগাছসহ জমি সরকারের অনুকূলে স্থায়ী বন্দোবস্ত নিতে লাগবে দুই কোটি ১২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার এই প্রতিবেদন আদালতে উপস্থাপন করা হয়।

গত ৩০ অক্টোবর এ বিষয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দ বাউসা গ্রামে ২৫টি আমগাছে শামুকখোল পাখিরা বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চাগুলো এখনও উড়তে পারে না। গত চার বছর ধরেই পাখিগুলো সেখানে বাসা বাঁধছে। প্রতিবছর বর্ষার শেষে ওই আমগাছগুলোতে বাসা বেঁধে ডিম পাড়ে এবং বাচ্চা ফোটায়। শীতের শুরুতে পাখিগুলো চলে যায়।

এ কারণে বন অধিদফতরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের পক্ষ থেকে পাখিনিধন ঠেকাতে বাগানের পাশে সাইনবোর্ড লাগানো হয়। সাইনবোর্ডে লেখা আছে, বন্যপ্রাণী আটক, হত্যা, শিকার, পরিবহন ও কেনাবেচা দণ্ডনীয় অপরাধ। যার শাস্তি সর্বোচ্চ ১২ বছর ও ১৫ লাখ টাকা জরিমানা। ওই সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।

জানা যায়, প্রতিবছর পাখি বাসা বাঁধার কারণে আমবাগানের মালিক ও ইজারাদার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। গত বছর একই কারণে আমগাছের পরিচর্যা করতে পারেননি ইজারাদার। ফলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ আম না পেয়ে তিনি ক্ষতিগ্রস্ত হন। এ কারণে এ বছর আগেভাগেই গাছ থেকে পাখির বাসা সরিয়ে গাছের পরিচর্যা করার উদ্যোগ নেন বাগানের ইজারাদার আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান।

পাখির বাসা ভেঙে গাছে ওষুধ ছিটাতে চান। কিন্তু বাসায় বাসায় অসংখ্য বাচ্চা থাকায় স্থানীয় কয়েকজন পাখিপ্রেমিক এতে বাধা দেন। এ নিয়ে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদন আদালতের নজরে আনেন এক আইনজীবী। পত্রিকায় প্রকাশিত বিষয়টি উপস্থাপন করার পর আদালত বিষয়টি দেখে আদেশ দেন।