নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের এক কলেজছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করতেন সাইফুল ইসলাম ওরফে মাসুদ নামের এক যুবক। ওই ছাত্রী প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় ২০০২ সালের ১০ ডিসেম্বর সাইফুল তাঁকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় একই বছরের ১২ ডিসেম্বর ওই ছাত্রী বাদী হয়ে সেনবাগ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার পর দীর্ঘ ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও বিচার শেষ হয়নি ধর্ষণচেষ্টার ওই ঘটনার।
এ রকম অনেক ঘটনার মামলা বছরের পর বছর ধরে বিচারাধীন অবস্থায় পড়ে আছে নোয়াখালীর দুটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে। আদালত দুটিতে বর্তমানে প্রায় ৭ হাজার ১৩টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে অনেক মামলাই রয়েছে বছরের পর বছর পার হলেও বিচার শেষ হয়নি। এ অবস্থায় নতুন দুটি ট্রাইব্যুনাল চেয়ে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য আদালত–সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, সময়মতো সাক্ষী হাজির না হওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে বিচারকের শূন্যতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্যান্য জেলার তুলনায় এখানে মামলার সংখ্যাধিক্যকেও দায়ী করা হচ্ছে। বিচারে এই দীর্ঘসূত্রতার জন্য বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন আইনজীবী ও নারী অধিকারকর্মীরা।
নোয়াখালীর নারী অধিকার জোটের সভাপতি লায়লা পারভীন গণমাধ্যমকে বলেন, আদালতে মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতার কারণে মানুষ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এতে অপরাধপ্রবণতা বেড়েই চলেছে। এ পরিস্থিতিতে নারী ও শিশু নির্যাতন মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি তদারকির জন্য সরকারিভাবে বিশেষ সেল গঠন করা যেতে পারে।
আদালত সূত্রমতে, বর্তমানে দেশের প্রায় ৯৫টি ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীন করা প্রায় ১ লাখ ৬০ হাজার মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। ওই পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতিটি ট্রাইব্যুনালে গড় বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১ হাজার ৭০০। সেখানে নোয়াখালীর দুটি ট্রাইব্যুনালেই বিচারাধীন মামলার সংখ্যা সাত হাজারের বেশি।
মামলার এই সংখ্যাধিক্যের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে চিঠি লিখেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক মোহাম্মদ সামস্ উদ্দীন খালেদ। গত ২ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মাধ্যমে চিঠিটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, নয়টি থানার (উপজেলা) বিপরীতে দুটি ট্রাইব্যুনাল বিদ্যমান থাকায় মামলার জট সৃষ্টি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মামলার সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থাপনা ও দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আরও অন্তত দুটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, নোয়াখালীতে নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১-এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০০২ সালে। আর ট্রাইব্যুনাল-২-এর কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালের মে মাসে। ট্রাইব্যুনাল-২ প্রতিষ্ঠার আগ পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১-এ বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল প্রায় সাড়ে ছয় হাজার। নতুন ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠার পর মামলার মোট সংখ্যা বেড়েছে আরও প্রায় ৫০০।
জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১-এর অধীন সদর, কোম্পানীগঞ্জ, বেগমগঞ্জ, চাটখিল ও সেনবাগ উপজেলা। আর ট্রাইব্যুনাল-২-এর অধীন কবিরহাট, সুবর্ণচর, হাতিয়া ও সোনাইমুড়ী উপজেলা। নতুন ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর ট্রাইব্যুনাল-১ থেকে ডিসেম্বর ২০১৮ পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ট্রাইব্যুনাল-২-এ ২ হাজার ৪৭৭টি মামলা স্থানান্তর করা হয়।