সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী ব্যারিস্টার মো. রুহুল কুদ্দুস কাজলের বিরুদ্ধে অপর এক আইনজীবীর পেশাগত অসদাচরণের অভিযোগ গ্রহণ করেছে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল।
আজ সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিষয়টি ল’ইয়ার্স ক্লাব বাংলাদেশ ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম জুলফিকার আলী জুনু। তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক প্রার্থী রুহুল কুদ্দুস কাজলের সনদ বাতিলের অভিযোগ গ্রহণ করেছেন বার কাউন্সিল সেক্রেটারি।
আইনজীবী জুলফিকার আলী বলেন, বার কাউন্সিল অভিযোগ আমলে নিয়েছেন। যার রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৬০২। আশাকরি শিগগিরই এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এর আগে, গত ৪ ফেব্রুয়ারি বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বরাবর ব্যারিস্টার কাজলের বিরুদ্ধে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন এবং তার আইনজীবী সনদ বাতিলের আবেদন করেন অ্যাডভোকেট এস এম জুলফিকার আলী জুনু।
এ বিষয়ে সেদিন তিনি বলেছিলেন, দি বাংলাদশ লিগ্যাল প্র্যাক্টিশনার অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস, ১৯৭২ এর চতুর্থ অধ্যায়ের ৮ ধারা অনুযায়ী কোনো আইনজীবী সনদ বহাল থাকা অবস্থায় অন্য কোন প্রকার পেশা কিংবা ব্যবসা অথবা সরকারী চাকরিসহ অন্য কোন চাকরি করতে পারবেন না। তবে তিনি যদি চাকরি করতে চান সেক্ষেত্রে তাঁর আইনজীবী সনদ ও সমিতির সদস্যপদ স্থগিত করতে হবে।
আইনজীবী জুলাফিকার আলী আরও বলেন, কিন্তু জনাব ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল আইনজীবী সনদ ও সমিতির সদস্যপদ স্থগিত না করেই অন্য চাকরি করেছেন এজন্য তথ্য গোপন/পেশাগত অসদাচরণের দায়ে তাঁর আইনজীবী সনদ বাতিলসহ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বার কাউন্সিলে আবেদন করেছি।
আবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল (সদস্য নম্বর- ২১২৪, সদস্য পদ গ্রহণের তারিখ- ১২-১২-১৯৯৬, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল থেকে হাইকোর্ট পারমিশন প্রাপ্তির তারিখ- ০৭-০২-১৯৯৬) বার কাউন্সিলের সুনির্দিষ্ট অর্ডার এন্ড রুলস লঙ্ঘন করে আইনজীবী সনদ বহাল থাকা অবস্থায় বিগত বিএনপি সরকারের আমলে ২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সালের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সময় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকারি চাকরি গ্রহণ করে যুক্তরাজ্যের লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে একজন কূটনৈতিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সরকারি একজন চাকুরীজীবী হিসেবে সরকারের সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ও বেতন-ভাতা ভোগ করেছেন। অথচ দি বাংলাদশ লিগ্যাল প্র্যাক্টিশনার অ্যান্ড বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস, ১৯৭২ এর চতুর্থ অধ্যায়ের ৮ ধারা অনুযায়ী কোনো আইনজীবী সনদ বহাল থাকা অবস্থায় অন্য কোন প্রকার পেশা কিংবা ব্যবসা অথবা সরকারী চাকরিসহ অন্য কোন চাকরি করতে পারবেন না। তবে তিনি যদি চাকরি করতে চান সেক্ষেত্রে তাঁর আইনজীবী সনদ ও সমিতির সদস্যপদ স্থগিত করতে হবে। ফলে আইনজীবী সনদ ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সদস্য পদ বহাল রেখে সরকারি চাকরি করায় তিনি বার কাউন্সিল অর্ডার এন্ড রুলস এর সুনির্দিষ্ট নিয়ম ভঙ্গ করেছেন।
কিন্তু, বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মেম্বারশীপ ডিরেক্টরি অনুযায়ী ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ১৯৯৬ সালের ৭ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসেবে পেশায় নিয়োজিত আছেন। সে অনুযায়ী উল্লেখিত সময়ের (২০০৪ থেকে ২০০৬) মধ্যে তিনি একজন আইনজীবী হয়ে সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে কর্মরত থাকতে পারেন না এবং যদি করে থাকেন তাহলে তা বাংলাদেশ বার কাউন্সিল রুলস অ্যান্ড অর্ডার মতে আমলযোগ্য শাস্তিযোগ্য পেশাগত অসদাচরণ ও তথ্য গোপনের মত গর্হিত অপরাধ।
এজন্য উল্লেখিত বিষয়টি বিবেচনা পূর্বক গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলের লন্ডনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসে চাকরি কালীন সময়ে রেকর্ড ফাইল তলব করে বাংলাদেশ বার কাউন্সিল অর্ডার অ্যান্ড রুলস এর সুনির্দিষ্ট বিধান অনুযায়ী তথ্য গোপন/পেশাগত অসদাচরণের দায়ে তাঁর আইনজীবী সনদ বাতিল করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে আর্জি জানানো হয়।
অন্যদিকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল গণমাধ্যমকে বলেন, যারা এটা করেছেন তারা ইতিপূর্বও বিভিন্ন জায়গায় এই অভিযোগ করেছেন। এটা এমন কিছু নয়। এটা করে তারা আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।