সিরাজ প্রামাণিক:
একটি সংবাদ সারাদেশে চাউর হয়ে উঠেছে। পিরোজপুরের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ কে এম এ আউয়াল তিনটি মামলায় এবং তাঁর স্ত্রী লায়লা পারভীন একটি মামলায় পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। দুপুরে শুনানি শেষে বিচারক মো. আবদুল মান্নান জামিন নামঞ্জুর করে তাঁদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর কিছুক্ষণ পর জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নানকে বদলির চিঠি পাঠানো হয়। এরপর তিনি যুগ্ম ও জেলা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। ৩ মার্চ বিকেল পৌনে চারটার দিকে আউয়াল ও লায়লা পারভীনের আইনজীবীরা ভারপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ নাহিদ নাসরিনের কাছে পুনরায় জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিকেল চারটার দিকে বিচারক আসামিদের জামিনের আবেদন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে আবেগ-উত্তাপ ও যৌক্তিক তর্ক-বিতর্ক এখনো চলছে, চায়ের দোকান থেকে পত্রিকার কলাম পর্যন্ত। সন্দেহ নেই আরো কিছুকাল চলবে। বিচার বিভাগ, নির্বাহী বিভাগ, আইনবিভাগ, আইনজীবী, সাংবাদিক, সুধীজন সকল শ্রেণী-পেশার মানুষের মধ্যে এ নিয়ে বিরুপ মনোভাব সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে এ ঘটনার তীব্র সমালোচনা।
গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন কমিশনের বরিশাল সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আলী আকবর বাদী হয়ে আউয়ালের বিরুদ্ধে খাসজমিতে ভবন নির্মাণ, অর্পিত সম্পত্তি ও পুকুর দখলের অভিযোগে তিনটি মামলা করেন। একটি মামলায় আউয়ালের সঙ্গে তাঁর স্ত্রী পিরোজপুর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী লায়লা পারভীনকেও আসামি করা হয়েছে। গত ৭ জানুয়ারি আউয়াল ও লায়লা পারভীন হাইকোর্ট থেকে আট সপ্তাহের অন্তবর্তী জামিন নেন। ৩ মার্চ ওই জামিনের মেয়াদ শেষ হলে তাঁরা পিরোজপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন।
এর আগে দুপুরে আউয়ালকে কারাগারে পাঠানোর আদেশের পর পিরোজপুর হুলারহাট সড়কে গাছের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধের ঘটনা ঘটে। শহরের সার্কিট হাউস এলাকায় সড়কে আগুন জ্বালিয়ে প্রতিবাদ করা হয়। পরে পিরোজপুর-পাড়েরহাট সড়কের কয়েকটি স্থানে গাছের গুঁড়ি ফেলে ও আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করা হয়। এ ছাড়া শহরের গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব সড়কে প্রতিবাদ মিছিল করে আউয়ালের অনুসারীরা।
এছাড়া ওই একই দিন বিকেল সাড়ে ৩টায় জেলা আইনজীবী সমিতির উদ্যোগে জেলার সাবেক জজ মো. আব্দুল মান্নানের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংবাদ সম্মেলনে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি মো. বেলায়েত হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক মো. শহিদুল হক খান পান্না অভিযোগ করে বলেন, জেলা জজ মো. আব্দুল মান্নান একজন জামায়াত সমর্থিত ব্যক্তি ছিলেন। এ সময় জেলা আইনজীবীরা দাবি করেন, অভিলম্বে তাকে পিরোজপুর ছেড়ে যেতে হবে। নতুবা আইনজীবীদের এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।
পরদির ৪ মার্চ দুপুর ১২টার দিকে জেলা আ’লীগের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সাবেক এমপি আউয়াল অভিযোগ করেন, পিরোজপুর-১ আসনের এমপি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদক মন্ত্রী শ.ম রেজাউল করিমের প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাকে (আউয়াল) ও তার স্ত্রী জেলা মহিলা আ’লীগের সভাপতি লায়লা পারভীনের বিরুদ্ধে ৩টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছেন। আর ওই মামলায় তিনি উচ্চ আদালত থেকে ৮ সপ্তাহের জামিন নিলেও দুদক নজিরবিহীনভাবে (সাবেক এমপি আউয়ালের ভাষায়) ওই জামিনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আপিল বিভাগ রিভ টু আপিল দায়ের করেন, যা শুনানিতে খারিজ হয়।
এদিকে জজ প্রত্যাহারের আদেশের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন হাইকোর্ট। এই আদেশ কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত (অবৈধ) ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ের সচিব ও উপসচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে ৫ মার্চ বিচারপতি তারিক উল হাকিম ও ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রুল জারির আদেশ দেন।
প্রতিক্রিয়ায় আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, সাবেক এমপি একেএমএ আউয়ালের জামিনের সময় জেলা ও দায়রা জজ মো. আবদুল মান্নান অত্যন্ত অশালীন ও রূঢ় ব্যবহার করেছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই বিচারককে স্ট্যান্ড রিলিজ এবং পরে আউয়ালকে স্ত্রীসহ জামিন দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনায় দেশের বৃহত্তর একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সন্মেলন করে বলা হয়েছে, ওই জামিন কেলেঙ্কারি দেশের সাধারণ জনগণের বিচার বিভাগের ওপর আস্থা নষ্ট করেছে এবং বিচার বিভাগের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আইন সচিব, যুগ্ম সচিব ও জামিন দেয়া বিচারককে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়েরের দাবি জানানো হয়।
এদিকে একজন বিচারকের ৪০ দফা আচরণ বিধির কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-
১। ‘একজন বিচারকের আচরণ এমন উচ্চ মানের হতে হবে, যাতে বিচার বিভাগের সততা ও স্বাধীনতা সমুন্নত থাকে।’
২। ‘একজন বিচারক আইন ও সংবিধানকে সম্মান করবেন ও মেনে চলবেন এবং এমনভাবে কাজ করবেন যাতে বিচার বিভাগ সম্পর্কে জনগণের আস্থার উন্নতি ঘটে।’
৩। ‘বিচারিক কাজে বা রায়ে প্রভাব ফেলতে পারে, এমন কোনো পারিবারিক, সামাজিক বা অন্য সম্পর্ক রাখা একজন বিচারকের উচিত নয়। ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য একজন বিচারক যেমন তার পদ ব্যবহার করতে পারে না, তেমনি অন্য কোনো ব্যক্তি তার বিশেষ অবস্থান দিয়ে একজন বিচারককে প্রভাবিত করবে সেটাও ওই বিচারক করতে দিতে পারেন না।’
৪। ‘একজন বিচারক আদালতের বিচার কাজ দ্রুত শেষ করবেন এবং রায়/আদেশ দানের ক্ষেত্রে অযথা বিলম্ব পরিহার করবেন। ব্যতিক্রমী রায় ছাড়া অন্য রায় ঘোষণার ছয় মাসের বেশি নয়, এমন সময়ের মধ্যে স্বাক্ষর করতে হবে ।’
৫। ‘আদালতে বিচারাধীন মামলার বিষয়বস্তু নিয়ে বিচারক জনসম্মুখে মন্তব্য করতে পারবেন না।’
৬। ‘যদি যৌক্তিক কারণে কোনো মামলায় একজন বিচারকের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, তাহলে তিনি বিচার কাজ থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেবেন।’
৭।‘একজন বিচারপতিকে দলীয় স্বার্থ ও জনবিক্ষোভ বা সমালোচনার ভয়ের উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে।’
৮। ‘আগে যদি কোনো মামলার আইনজীবী হিসেবে কাজ করেন তাহলে ওই মামলা থেকে বিচারক নিজেকে সরিয়ে নেবেন অথবা আইনজীবীর সঙ্গে তিনি ওই মামলায় আগে থেকে যুক্ত ছিলেন।’
৯। ‘একজন বিচারক এমন কোনো পাবলিক ডিবেট বা রাজনৈতিক বিষয়ে জড়িত হবেন না বা মতামত দিবেন না, যে বিষয়গুলো পরে বিচারিক সিদ্ধান্তের জন্য তার সামনে আসতে পারে।’
১০। ‘একজন বিচারক নিজে বা কোনো ব্যক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবসা-বাণিজ্যে যুক্ত থাকতে পারবেন না। তিনি দেশে বা বিদেশে কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারবেন না।’
১১। ‘প্রধান বিচারপতি চাইলে বিচারককে তার সম্পদ ও দায় দেনার হিসাব বিবরণী দাখিল করতে হবে।’
১২। বিচার শুধু করলে হবে না, বিচার করা হয়েছে সেটা দেখাতেও হবে। বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস থাক, এমন আচরণ করতে হবে।
১৩। ‘আইনজীবীদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক থাকতে পারবে না, বিশেষ করে একই আদালতে প্র্যাকটিস করেন এমন বিচারক ও আইনজীবীর মধ্যে।’
১৪। ‘একজন বিচারকের পরিবারের সদস্য যেমন স্বামী/স্ত্রী, ছেলে-মেয়ে, জামাই-পুত্রবধূ বা কোনো ধরনের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যদি আইনজীবী হন, তাহলে তার পরিচালিত কোনো মামলা ওই বিচারক পরিচালনা করতে পারবেন না। এমনকি যদি ওই আইনজীবী কোনো মামলার সঙ্গে কোনোভাবে যুক্ত থাকেন, তাহলেও তার বিচার ওই বিচারক করতে পারবেন না।’
১৫। ‘বিচারকের পরিবারের কোনো সদস্য যদি আইনজীবী হন, তাহলে ওই আইনজীবী কোনোভাবে সেই বিচারকের বাসায় পেশাগত কাজ পরিচালনা করতে পারবে না। পরিবারের কোনো সদস্য জড়িত এমন কোনো মামলাও ওই বিচারক শুনতে পারবেন না।’
১৬। ‘বিচারক গণমাধ্যমে কোনো সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না। তিনি তার বক্তব্য রায়ের মাধ্যমে দেবেন।’
১৭। ‘বিচারক থাকাকালে আইনপেশার সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। বিচারক বা তার পরিবারের কোনো সদস্য কারও কাছ থেকে বিচারিক ক্ষমতার বিনিময়ে উপহার, অনুরোধ, ঋণ বা সুবিধা চাইতে পারবেন না।’
বিচারকদের এসব আচরণ বিধি মেনে চলার কথা থাকলেও বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে মামলা ব্যবস্থাপনা বিষয়ে তদন্তে আগাম জামিন ও দণ্ডিত অপরাধীদের গণজামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক অনিয়ম উদ্ঘাটিত হয়েছে। এ নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেকবার সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দুর্নীতিতে বিচার বিভাগ কয়েকবার শীর্ষেও উঠেছে।
আমরা সবাই জানি, আইনজীবী এবং বিচারকদের সম্বলিত প্রচেষ্টায় বিচার বিভাগ এগিয়ে যেতে পারে। এতে বিচারপ্রার্থী জনগণের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। বিচারক বা আইনজীবী কারোরই দায়িত্ব পালনে কোন অবহেলা কাম্য নয়। বিচারক ও আইনজীবী পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধ থাকা জরুরী। একজন আইনজীবী সম্পর্কে বেঞ্চের ভাল ধারণা থাকা ওই আইনজীবীর জন্য সম্পদ। একই কথা প্রযোজ্য একজন বিচারকের বেলায়ও। অর্থাৎ আইনজীবী ও বিচারকরা হচ্ছে একটি পাখির দুটি পাখার মতো। বাম হাত ও ডান হাতের মতো। তাদের পরস্পরের প্রতি আস্থার সম্পর্ক বিচার ব্যবস্থার গুণগত মান বৃদ্ধি পায়।
আইনজীবীদের সংগে আচরন সম্পর্কিত নিয়ম- ৭ বলা আছে ” বিচারকগন অবশ্যই আইনজীবীগনের সাথে সৌজন্যমূলক ব্যাবহার করিবেন এবং তাঁহাদের অধীনে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীগন যাহাতে বিচারপ্রার্থী জনগন, আইনজীবী, সাক্ষী প্রভৃতি ব্যাক্তিগনের সহিত সদ্ব্যবহার করেন সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখিবেন”।
এবার শেষ কথায় আসি। রাষ্ট্রের তিনটি বিভাগের সম্পর্র্কের অবনতি বিভিন্নভাবে দৃশ্যমান । গণতান্ত্রিক দেশে রাষ্ট্রীয় কার্য পরিচালনার দায়িত্ব কোনো বিভাগের একক অধিকার নয়। রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে তিন বিভাগের কার্যপরিধির পূর্ণ ব্যাখ্যাও সংবিধানে দেওয়া আছে। যেমন সংবিধান অনুযায়ী আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র সংসদের। অন্য কারো নয়। তবে এখানেও সীমারেখা হলো, সংসদ কর্তৃক প্রণীত যেকোনো আইন সংবিধানসম্মত হতে হবে। কোনো আইন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হলে তা অসাংবিধানিক ঘোষণা করার ক্ষমতা বিচার বিভাগ তথা উচ্চ আদালতের। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক বিদেশি কিছু রাষ্ট্রের নাগরিকদের বিষয়ে কিছু বিধিনিষেধ ওই দেশের আদালত বেআইনি ঘোষণা করেন। আদালতের এ রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন উচ্চ আদালতে আপিল করলেও তা সম্পূর্ণ সফল হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগ আদালতের রায় মেনে নিয়েছে। ওই দেশের ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্যরা তেমন কোনো বিতর্ক সংসদে করেননি। গণতান্ত্রিক চর্চায় এটা একটা দৃষ্টান্ত।
গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনার মূলমন্ত্র হলো আইনের শাসন। অর্থাৎ বিদ্যমান আইন সঠিক ও সমভাবে প্রয়োগ। এর ব্যত্যয় হলেই নাগরিক অধিকার বিঘ্নিত হয় বা সংশ্লিষ্ট নাগরিক সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। সংসদ আইন প্রণয়ন করলেও আইন প্রয়োগ করার ক্ষমতা বা দায়িত্ব নির্বাহী বিভাগের। বিদ্যমান আইন সঠিক ও সমভাবে প্রয়োগে নির্বাহী বিভাগ ব্যর্থ হলেই উচ্চ আদালত নাগরিকদের আইনি অধিকার সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আদেশ-নির্দেশ প্রদান করেন। ক্ষমতার এ ভারসাম্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক দেশেই স্বীকৃত। কিন্তু বিচার বিভাগের অধীনস্থ বিচারকদের পদায়ন, বদলি ও শৃঙ্খলাবিষয়ক ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের কর্তৃত্বের বিষয়টি দৃশ্যমান। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ আদালত ও নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতার বিভাজন নিয়ে বিতর্ক চলছে। এ বিষয়ে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি, যা সুপ্রিম কোর্ট অনুমোদন করেছেন, তা দীর্ঘ সময় ধরে গেজেটে প্রকাশ করা হয়নি। আইন মন্ত্রণালয়ের তথা নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্বের অন্য একটি বিষয়ও সাম্প্রতিককালে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। কিছুসংখ্যক বিচারকের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ যাওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের অনুমোদন গ্রহণ করা হয়নি। এ সত্ত্বেও এ বিষয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। জানা গেছে যে এ আদেশবলে সংশ্লিষ্ট বিচারকরা বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য দেশ ত্যাগ করেছেন। ২০০৮ সালে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা রদ করার পরই ধারণা হয়েছিল যে বিচার বিভাগ স্বাধীন। এখন বলা হচ্ছে যে বিচার বিভাগ সম্পূর্ণ স্বাধীন নয়।
লেখক: বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী, গবেষক ও আইন গ্রন্থ প্রণেতা। Email: seraj.pramanik@gmail.com