মোহাম্মদ মশিউর রহমান:
আইনিজীবি সমিতি কর্তৃক তার সদস্যদের বিশেষ লোন প্রদানের মাধ্যমে বর্তমান এই জরুরি পরিস্থিতিতে পাশে দাঁড়াতে পারে মর্মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথাবার্তা চলায় ও খবরের কাগজে খবর প্রকাশিত হওয়ায় এ নিয়ে কিছু কথা বলার দরকার মনে করছি।
আমি যেহেতু সুপ্রীম কোর্ট আইনিজীবি সমিতির সদ্য অনুষ্ঠিত নির্বাচনের মাধ্যমে সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছি তাই এ সমিতি নিয়ে আমার বক্তব্য সীমিত! সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির গঠনতন্ত্র মোতাবেক দু’ধরনের ফান্ড রয়েছে। বেনাভোলেন্ড ফান্ড ও কন্ট্রিবিউটরি বেনেফিট ফান্ড।
দুটো ফান্ডই সদস্যদের টাকায় গঠিত। সদস্যপদ লাভের সময় যাদের বয়স ৩৫ পুর্ন হয়েছে তারা বেনেভোলেন্ট ফান্ডের সুবিধা পাবে না, পাবে কন্ট্রিবিউটরি ফান্ডের সুবিধা। দুটো ফান্ডেরই উদ্দেশ্য, সদস্য ও তাদের পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা! কিন্তু নির্মম হলেও সত্যি, যে সদস্য নিয়মিত টাকা প্রদানের মাধ্যমে এসব ফান্ড গঠন করেন তিনি আইনজীবী হিসেবে বহাল থেকে আর এ সুবিধা পেতে পারেন না! হয়তো তাকে বার কাউন্সিলে সনদ প্রত্যাহার করতে হবে, নয়তো গুরুতর অসুস্থ হয়ে অবসরে যেতে হবে অথবা মারা যেতে হবে (ধারা ৩৮)!
যদিও বেনাভোলেন্ড ফান্ড রুলস ২০০৮ এর বিধি ৭ মতে, প্রত্যেক সদস্যকে হয়তো মারা যাওয়া পর্যন্ত অথবা অবসর নেয়ার আগ পর্যন্ত ফান্ডে টাকা জমা দিতে হবে! কন্ট্রিবিউটরি ফান্ডের ক্ষেত্রেও সুবিধা পেতে হলে হয়তো তাকে সনদ প্রত্যাহার করতে হবে নয়তো মারা যেতে হবে!
সামান্য হলেও আশার কথা হল, বেনেভোলেন্ট ফান্ড হতে লোন নেয়ার ক্ষেত্রে বেনেভোলেন্ট ফান্ড লোন রুলস ২০১১ রয়েছে। এতে শুধু মেডিকেল লোন এর কথা বলা আছে। কোন সদস্য যদি গুরুতর অসুস্থতায় ভোগেন তবে তাকে এ লোন দেয়া যেতে পারে। গুরুতর অসুস্থতা বলতে হার্ট এ্যাটাক, স্ট্রোক, ক্যান্সার এবং অন্যান্য গুরুতর অসুখকে বুঝানো হয়েছে। কন্ট্রিবিউটরি বেনেফিট ফান্ডের ক্ষেত্রেও শুধুমাত্র মেডিকেল লোনের বিধান আছে (ধারা ৪১)।
করোনা ভাইরাসের কারণে যখন সব কিছু বন্ধ, আয়ের পথ রুদ্ধ তখন আইনজীবীদের মধ্যে কাজ করছে হতাশা; বিশেষ করে তরুন আইনজীবীদের। এই পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের কল্যাণে সমিতির করনীয় কি সেটাও আলোচনা চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে। প্রায় সকলের অভিমত এই পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসুক আইনজীবী সমিতি। সম্প্রতি একটি জেলা বারের এমন চমৎকার একটি উদ্যোগ অনেকের নজর কেটেছে। বান্দরবন জেলা আইনিজীবি সমিতি বিগত মার্চ ২৪ তারিখের বিশেষ জরুরি সভায় বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সদস্যদের মিউচুয়াল বেনেফিট ফান্ড হতে আপদকালীন অর্থ বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মর্মে আইনজীবি ইকবাল করিম, যিনি বান্দরবন জেলা আইনিজীবি সমিতির সাবেক সম্পাদক তার ফেসবুকে পোস্ট করলে আমি নিজ পরিচয়ে তার সাথে ব্যাক্তিগতভাবে কথা বলি। তিনি আমাকে জানান, সমিতির গঠনতন্ত্রে এমন কোন বিধান না থাকলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশেষ সাধারণ সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
দেশের উচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে চলতি মাসের ১৩ তারিখ থেকে এমনিতেই চলছে অবকাশকালীন ছুটি; এই ছুটি শেষ হচ্ছে ২৮ মার্চ। তারমধ্যে নতুন করে তৈরি হয়েছে এই পরিস্থিতি। ফলে এখানকার অনেক আইনজীবীদের মধ্যে হতাশা-উদ্বেগ বিরাজ করছে। তবে এক্ষেত্রে আশার বানীও আছে। বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকার সাথে গতদিন এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন- ‘আইনজীবীদের যাতে সমস্যা না হয়, এ জন্য আপদকালীন লোন দেয়ার জন্য চিন্তাভাবনা আছে’।
সদস্যদের কষ্টে উপার্জিত টাকায় বেনেভোলেন্ট বা কন্ট্রিবিউটরি ফান্ড তাদের জীবদ্দশায় ফেরত পাওয়া, লোন হিসেবে পাওয়া এবং এ থেকে অন্যান্য সুবিধা পাওয়ার দাবী যোক্তিক। আমার নিজের জমানো টাকা আমি নিজে পাওয়ার অধিকারও গ্রহণযোগ্য। তবে তা কিভাবে ও কখন ফেরত পেতে পারে এবং লোন হিসেবে শুধুমাত্র অসুস্থতার বাইরে আরো কিভাবে পরিধি বাড়ানো যায় তা নিয়ে সকলের ভাবতে হবে। বলা যায় সে সময় এখন এসেছে।
সমিতির সদস্য থেকে জীবদ্দশায় কিভাবে ফান্ডগুলোর সুবিধা সদস্যরা পেতে পারে তা ভাবনা এবং সিদ্ধান্ত নেয়া এখন সময়ের দাবী!
লেখক- সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির কার্যকরী কমিটির নব নির্বাচিত সদস্য।