আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ আইনপেশায় ৩ মাস নিষিদ্ধ

দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করে পোস্ট দেয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দকে ৩ মাস আপিল বিভাগ এবং হাইকোর্ট বিভাগের কাজ থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে তাকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে ১৫ দিনের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।

আজ সোমবার (১২ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন সাত সদস্যের আপিল বিভাগের ভার্চুয়াল পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

আদালতে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ। এ সময় আরও যুক্ত ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন, অ্যাডভোকেট ওজি উল্লাহসহ অন্য আইনজীবীরা।

এর আগে, ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করে পোস্ট দেয়ায় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনুছ আলী আকন্দ গতকাল সশরীরে উপস্থিত হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে।

গতকাল সকাল সাড়ে ৯ টায় প্রধান বিচারপতির কোর্টে ডায়াসের উপর রাখা ল্যাপটপের সামনে হাজির হন আদালত অবমাননাকারী আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দ। তিনি নি:শর্ত ক্ষমা চেয়ে লিখিত আবেদন দেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন, এক হজারের মত জনস্বার্থমূলক মামলা করেছেন। তিনি জনস্বার্থ মামলা করার ক্ষেত্রে একজন ‘পাইওনিয়ার’। এরপর এ বিষয়ে শুনানি শেষে আদেশের জন্য আজকের দিন ঠিক করেছিলেন আপিল আদালত।

রোববারের শুনানিতে দেশের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, এই আইনজীবী (ইউনুস আলী আকন্দ) একজন হ্যাবিচুয়াল কনটেম্পনার (অভ্যাসগত আদালত অবমাননাকারী)। এর আগেও তিনি তিনবার একই ধরনের অপরাধ করেছেন, তাকে ছেড়ে দিয়েছি। আর কতবার তাকে ছেড়ে দেব? তিনি এবার যে কাজ করেছেন সেটা কি ক্ষমারযোগ্য? তার যে বয়স (৬১ বছর) তাতে প্র্যাকটিস থেকে অবসর নেয়ার সময় হয়েছে।

তার আগে দেশের বিচার বিভাগ নিয়ে ফেসবুকে বিরূপ মন্তব্য করে পোস্ট দেয়ায় গত ২৭ সেপ্টেম্বর তাঁকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী পেশা বা কাজ থেকে দুই সপ্তাহের জন্য বিরত (সাসপেন্ড) থাকার নির্দেশ দেন আদালত।

এই দুই সপ্তাহ তিনি সুপ্রিম কোর্টে কোনো ধরনের মামলা পরিচালনা করতে পারবেন না। এছাড়া, বিতর্কিত পোস্ট ফেসবুক থেকে রিমুভ করে তার একাউন্ট ব্লক করে দিতে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) নির্দেশ দেওয়া হয়।

একই সাথে তাকে ১২ অক্টোবর আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এছাড়া কেন ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার ব্যাখ্যা আগামী ১১ অক্টোবরের মধ্যে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী নির্ধারিত দিনে আপীল বিভাগে ক্ষমা চেয়েছেন ওই আইনজীবী।

প্রসঙ্গত, দেশে ভার্চ্যুয়াল আদালত শুরু হওয়ার পর বেশ কয়েকটি ফেইসবুক পোস্টে এ নিয়ে মন্তব্য করেন তিনি। ভার্চ্যুয়াল আদালতের ব্যাপারে তিনি তদন্তেরও দাবি জানান।

সিনিয়র আইনজীবী ইউনুস আলী আকন্দের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করা হয় অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস থেকে। অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস এ বিষয়ে আপিল বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।

ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আইনজীবীর পোস্টটি আদালতের নজরে আনেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। এ সময় সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজলও আদালতের সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন।