চট্টগ্রামের একটি হত্যা মামলার বিচার ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছিলো হাইকোর্ট। ঐ নির্দেশনার পর পেরিয়ে গেছে চার বছর। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে বিচার শেষ দূরের কথা, নতুন করে একজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহনও করতে পারেনি আদালত।
এমতাবস্থায় উচ্চ আদালতের দেয়া একাধিক নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায়ে উক্ত মামলায় চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা আদালত-৫ এর বিচারক শরিফুল হককে তলব করেছে হাইকোর্ট।
ওই মামলার এক আসামির জামিন শুনানিতে মলঙ্গবার (৮ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
আগামী ১২ জানুয়ারি সংশ্লিষ্ট বিচারককে ওই মামলার কেস ডকেটসহ (সিডি) আদালতে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।
আদালতের আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
জানা গেছে, ২০১৪ সালের মে মাসে দুই জনকে খুনের ঘটনায় আসামি মনির গ্রেফতার হন। পরে মনির খুনের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। একইসঙ্গে ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের নাম প্রকাশ করে।
২০১৭ সালে এই মামলার বিচার শুরু হয়। বিচার শুরুর পর রাষ্ট্রপক্ষে সাতজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করে আদালত। তখন মামলাটি চট্টগ্রামের অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-৪ এ বিচারাধীন ছিল। পরে মামলাটি ৫ নম্বর আদালতে আসে।
এ অবস্থায় মামলার আসামি মনির হাইকোর্টে জামিন চান। বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ২০১৭ সালে আসামির জামিন প্রশ্নে রুল জারি করেন। একইসঙ্গে বিচারিক আদালতকে মামলাটি ছয় মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়।
ঐ আদেশে হাইকোর্ট আরো বলেন, যদি প্রসিকিউশন পক্ষ আর কোন সাক্ষী হাজির করতে না পারে তাহলে যেসব সাক্ষীর সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে তার ভিত্তিতে মামলাটি নিষ্পত্তি করতে বলা হয়। কিন্তু উচ্চ আদালতের এই নির্দেশনা প্রতিপালন করেননি ঐ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
এমতাবস্থায় ২০১৮ সালের অক্টোবরে আবারো হাইকোর্টে জামিন চেয়ে আবেদন করেন আসামি মনির। তখন উচ্চ আদালতের আদেশ কেন বাস্তবায়ন করা হয়নি সেই বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা চায় হাইকোর্ট। এরপর ঐ আদালতের বিচারক একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেয়।
এরপর ঐ বছরের নভেম্বর মাসে আবারো জামিন চেয়ে আবেদন করে ঐ আসামি। তখন হাইকোর্ট বিচারিক আদালতকে ২০১৯ সালের ৩০ মার্চের মধ্যে মামলার বিচার সম্পন্নের নির্দেশ দেয়। একইসঙ্গে হাইকোর্টে বিচার সম্পন্নের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
ঐ নির্দেশের পর প্রায় দুই বছর শেষ হতে চলল কিন্তু হত্যা মামলার বিচার শেষ করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট নিম্ন আদালতের বিচারক। এরপরই উভয় পক্ষকে শুনে হাইকোর্ট সংশ্লিষ্ট বিচারককে তলবের আদেশ দেন।