দুর্নীতি মামলা নিয়ে যুগান্তকারী রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, দুর্নীতি অভিযোগে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) -এর দায়ের করা কোনো মামলা সরকার চাইলেই প্রত্যাহার করতে পারবে না। একইসঙ্গে দুদকের করা কোনো মামলা প্রত্যাহারে সুপারিশও করা যাবে না বলেও রায়ে উল্লেখ করেছেন উচ্চ আদালত।
হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল বেঞ্চ বৃহস্পতিবার (১০ ডিসেম্বর) রায় ঘোষণা করেন। আজ রোববার (১৩ ডিসেম্বর) রায়ের বিষয়টি প্রকাশ পায়।
এ ধরণের মামলা নিয়ে হাইকোর্টের দেয়া এটিই প্রথম রায়। উচ্চ আদালতের রায়ের ফলে দুর্নীতির মামলায় অনাকাঙ্ক্ষিত হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে বলে মনে করেন আইনজীবীরা।
সরকারি ত্রাণের টিন আত্মসাতে অভিযুক্ত সিলেটের এক ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুদকের একটি মামলা হঠাৎই প্রত্যাহার হয়ে যায়। জানা যায়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুপারিশের ভিত্তিতেই মামলাটি প্রত্যাহার হয়।
এর বিরুদ্ধে ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করে দুর্নীতি দমন কমিশন। ৪ বছর পর হাইকোর্ট রায় দিলেন দুর্নীতির কোনো মামলাই সরকার প্রত্যাহার করতে পারবে না। এমনকি করা যাবে না প্রত্যাহারের সুপারিশও।
এছাড়া ওয়ান ইলেভেনর সময় করা দুর্নীতির মামলাগুলোর বিষয়েও সুস্পষ্ট নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এসব মামলা প্রত্যাহার কিংবা প্রত্যাহারের সুপারিশের এখতিয়ার নেই সরকারের।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী একেএম ফজলুল হক বলেন, এই রায়ের ফলে বেগম জিয়াসহ অন্যদের বিরুদ্ধে হওয়া দুর্নীতি মামলা প্রত্যাহারের কোনো সুযোগ সরকারের নেই।
দুদকের আইনজীবী খুরশিদ আলম বলেন, সরকারের এই ব্যাপারে আর কোনো নাক গলানোর সুযোগ নেই। এই আইনে সরকারকে কোনো সুযোগ দেওয়া হয়নি।
হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে দুর্নীতি দমন কমিশন আরো স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে যেকোনো অভিযোগ তদন্ত করতে পারবে বলে মনে করেন দুদক আইনজীবী।
আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ রায়কে যুগান্তকারী অ্যাখ্যা দিয়ে বলেন, ‘রায়ের মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালত দুদকের মামলার বিষয়ে কোনো ধরনের নাক না গলানোর সর্তকবার্তা দিয়েছেন। দুদকের মামলা সরকার চাইলেও যে প্রত্যাহারের সুপারিশ করতে পারবে না’, এ নিয়ে হাইকোর্টের রায় এটাই প্রথম বলেও জানান তিনি।
মামলার বিবরণে জানা যায়, বিগত ১/১১ এর পর আওয়ামী লীগ সরকার যখন ক্ষমতায় আসে তখন ফৌজদারিসহ অসংখ্য মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী এ মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়।
সেই সময় দুদকের মামলাও প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। তখন অনেক ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার হলেও দুদকের মামলায় আইনী প্রশ্ন জড়িত থাকার কারণে কোনো মামলা প্রত্যাহার হয়নি।
কিন্তু ওই সময়ে সিলেটের ইউনিয়ন পরিষদের এক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ৫টি টিন চুরির অভিযোগে দুদকের মামলা প্রত্যাহারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে। আদালতও মামলাটি চূড়ান্তভাবে প্রত্যাহারের আদেশ দেন।
এ ঘটনায় ২০১৬ সালে হাইকোর্টে রিভিশন আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকের পক্ষ থেকে। আবেদনে বলা হয়, যে প্রক্রিয়ায় দুদকের মামলাটি প্রত্যাহার করা হয়েছে তা সঠিক আইন মেনে হয়নি। সে আবেদনের ওপর হাইকোর্ট চূড়ান্ত রায় ঘোষণা করেন ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার।
রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘২০০৪ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী দুনীতি দমন কমিশন একটি স্বাধীন ও স্বতন্ত্র সংস্থা। এর ফলে দুদকের অনুমোদিত কোনো মামলা প্রত্যাহারে কেউ কোনো হস্তক্ষেপ করতে পারবে না।’
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আসামির আইনজীবী এস এম শাহজাহান বলেন, ‘ভুক্তভোগী চেয়ারম্যানের সাথে কথা বলে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে কি না সে বিষয়ে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’