মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট সেন্সাস বা আদমশুমারি নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষে রায় দিয়েছেন। লোকগণনায় নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বাদ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনিক নির্দেশ জারি করেছিলেন।
প্রতি ১০ বছর অন্তর এই আদমশুমারি যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি ও সামাজিক ইস্যুসহ নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কংগ্রেসের আসনসংখ্যা নির্ধারিত হয় জনসংখ্যার অনুপাতে।
যুক্তরাষ্ট্রে আগের কোনো আদমশুমারিতে নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বাদ দেওয়ার এমন নির্দেশনা ছিল না। নাগরিক অধিকার সংগঠন ও উদারনৈতিক রাজ্যগুলো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নির্দেশনার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেছিল।
গত শুক্রবার (১৮ ডিসেম্বর) সুপ্রিম কোর্ট ৬-৩ সংখ্যাগরিষ্ঠতায় ট্রাম্পের নির্দেশনা বহাল রেখেছেন। রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা তাদের অবস্থান অনুযায়ী মতামত দিয়েছেন।
এর মধ্যে ছয়জন রক্ষণশীল বিচারপতি নির্দেশনার পক্ষে এবং তিনজন উদারনৈতিক বিচারপতি বিপক্ষে মতামত দেওয়ার মাধ্যমে সুপ্রিম কোর্টের স্পষ্ট বিভক্তির প্রতিফলন ঘটেছে।
এই রায়ের ফলে জানুয়ারি মাসে আদমশুমারির বিবরণ কংগ্রেসে গ্রহণ করা হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা নথিপত্রহীন অভিবাসীরা বাদ পড়বেন। ফলে অভিবাসীবহুল রাজ্যগুলোতে কংগ্রেসের আসনসংখ্যা কমে যাবে। ফেডারেল সুযোগ-সুবিধা ও অর্থ বরাদ্দে এর মারাত্মক প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের সিভিল লিবার্টি ইউনিয়ন বলেছে, ট্রাম্প প্রশাসন এই নির্দেশনা কার্যকর করার উদ্যোগ গ্রহণ করলে তারা আরও মামলা দায়ের করবে। এর আগে গত সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কের এক ফেডারেল বিচারক ট্রাম্প প্রশাসনের এমন নির্দেশনার বিপক্ষে রায় দিয়েছিলেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আপিল করা হয়।
আমেরিকান সিভিল লিবার্টি ইউনিয়নসহ নাগরিক ও অভিবাসী সংগঠনগুলো এ নিয়ে দেশজুড়ে আন্দোলন করেছে। সভা সমাবেশ করে নাগরিক-অনাগরিক মিলে সবাইকে গণনায় অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়ে আসছে। উদারনৈতিক রাজনীতিবিদরা জনগণনায় সবাইকে অন্তর্ভুক্ত করার পক্ষে।
শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের উদারনৈতিক তিন বিচারপতির পক্ষে বিচারপতি স্টিফেন ব্র্যায়ার ২১ পৃষ্ঠার অভিমত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, জনগণনায় নথিপত্রহীন অভিবাসীদের বাদ দিতে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন উদ্যোগ বন্ধ করার সুযোগ রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের।
ভিন্ন কোনো মামলায় সুপ্রিম কোর্ট অন্য কোনো নির্দেশনা না দিলে যুক্তরাষ্ট্রে কয়েক কোটি জনগণনায় বাদ পড়ে যাবে। সামাজিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বড়বড় রাজ্যগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় উদারনৈতিক রাজ্যগুলোতেই বেশি লোকের বসবাস।
প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণের পর ট্রাম্পের এই নির্দেশনা বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। জনগণনায় নথিপত্রহীন অভিবাসী বাদ পড়লে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ডেমোক্রেটিক দল। ডেমোক্র্যাট এলাকাগুলোতে কংগ্রেসের আসনসংখ্যা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সূত্র- প্রথম আলো