বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের লিখিত পরীক্ষায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির ঘটনায় মর্মাহত হয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম আমিন উদ্দিন।
আজ সোমবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন মন্তব্য করেন তিনি।
পরীক্ষায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের সম্পর্কে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বলেছেন, আমরা খুবই মর্মাহত তাদের আচরণে। বিশৃঙ্খলা করে নিজেরা পরীক্ষা দেননি। অন্যকেও পরীক্ষা দিতে দেননি। তারা আইনজীবী হবেন অথচ তাদের আচরণ এতো খারাপ হবে সেটা কোনোমতেই কাম্য নয়।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, আমরা বিশৃঙ্খলার ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে সেগুলো পুলিশকে দিয়েছি। পুলিশ দেখে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। যারা পরীক্ষা দিতে এসেও পরিস্থিতির কারণে পরীক্ষা দিতে পারেননি তাদের বিষয়টিও বিবেচনা করা হবে।
তবে এক্ষেত্রে তিনি এখনই কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারবেন না জানিয়ে বলেন, এসব কেন্দ্রে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটরা দায়িত্বে ছিলেন। তাদের কাছে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। পুলিশও রিপোর্ট দেবে। এসব রিপোর্ট পাওয়ার পরই আমরা নামধাম মিলিয়ে দেখব। তারপরই এ বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আদালতে যারা নিয়মিত প্রাকটিস করেছেন প্রশ্ন তাদের জন্য সহজ হয়েছে এমন মন্তব্য করে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরও বলেন, প্রশ্ন কঠিন হওয়ায় পরীক্ষায় অংশ নেয়া বা না নেয়া পরীক্ষার্থীর ব্যাক্তিগত বিষয়। কিন্তু অন্যের পরীক্ষা নষ্ট করার অধিকার কারও নেই।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (১৯ ডিসেম্বর) সকাল ৯টা থেকে ঢাকার পৃথক ৯টি কেন্দ্রে প্রায় ১৩ হাজার পরীক্ষার্থী আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু প্রশ্নপত্র হাতে পাওয়ার পর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন পরীক্ষার্থীরা। অনেকে পরীক্ষা বর্জন করে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যান। এদের মধ্যে দুইটি কেন্দ্রের একদল উচ্ছৃঙ্খল পরীক্ষার্থী অন্য পরীক্ষার্থীদের খাতা কেড়ে নিয়ে ছিঁড়ে ফেলে।
এদিকে বার কাউন্সিলের আইনজীবী তালিকাভুক্তির লিখিত পরীক্ষা কেন্দ্র করে ভাঙচুর-বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে পৃথক তিন মামলায় ২৪ জনের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
রোববার (২০ ডিসেম্বর) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম রিমান্ডের এ আদেশ দেন। একই অভিযোগে ২৫ জনকে রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আদালতের সংশ্লিষ্ট থানার সাধারণ নিবন্ধন (জিআর) শাখা থেকে জানা গেছে, নিউমার্কেট থানার রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, এস এম মনিরুজ্জামান, সৈয়দ জিগর সাদ আলম, মো. সোহাগ তালুকদার, সৈয়দ আনিসুর রহমান, মোহাম্মদ আউয়াল হাওলাদার, দেলোয়ার খাঁ, শাহিন মিয়া, হাবিবুর রহমান ওরফে সানি হোসেন, জাকারিয়া রায়হান, মো. খালেদ হাসান তুহিন ও তোফাজ্জল হোসাইন।
মোহাম্মদপুর থানার রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, মমতাজুর রহমান, মো. আরমান উদ্দিন, তৌহিদুল ইসলাম, জোবায়ের, সৈকত মালাকার, আশিস কুমার দাস, মিলন শামিম আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, নজিবুর রহমান, শহীদুল ও মো. আবুল কাশেম মাহমুদ ভূঁইয়া। সূত্রাপুর থানার রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামি হলেন শাহরিয়ার।
নিউমার্কেট থানার মামলায় কারাগারে যাওয়া আসামিরা হলেন, আতাউর রহমান ওরফে তাজ, শুভ ধর, মফিজুর রহমান, আবদুল হক চৌধুরী, আহসান হাবীব ওরফে হাবিবুর রহমান, হানিফ খান, আমিনুল ইসলাম, কামাল হোসেন, আব্দুল মমিন মিয়া, মাহমুদুর রহমান ভূঁইয়া, জয়নাল আবেদীন, আব্দুল জলিল, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল জলিল, মোশারফ হোসেন, মোহাম্মদ আসলাম হোসেন, মোহাম্মদ নাসির সিকদার, মনিরুজ্জামান, সুজানা ইসলাম সিন্ডা, শিরিন আক্তার, আতাউর রহমান, আব্দুর রহিম, রেজাউল করিম, ইমরান, ফিরোজ আলম ও মুরসালিন তালুকদার।
সূত্র জানায়, মোহাম্মদপুর থানার এক মামলায় ১১ জনের তিনদিন করে রিমান্ডের আবেদন করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক দুলাল হোসেন আসামিদের আদালতে হাজির করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক প্রত্যেকের একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
অপরদিকে নিউমার্কেট থানার এক মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক সাহেব আলী ৩৭ জনকে ৭ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। বিচারক ১২ জনকে একদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাকি ২৫ জনকে রিমান্ড নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
এছাড়া সূত্রাপুর থানার এক মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা একজনকে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে আদালতে হাজির করেন। বিচারক তার একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এছাড়াও নিউমার্কেট থানার আরও দুটি মামলা রয়েছে। প্রতিটি মামলায় এজাহারনামীয় আসামি ছাড়াও অজ্ঞাতনামা ৪০০/৫০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।