অ্যাডভোকেট রাম চন্দ্র দাশ

পরীক্ষাকেন্দ্রে চরম বিশৃংখলার আসল কারণ অনুসন্ধান প্রয়োজন

রাম চন্দ্র দাশ: ঘটনাটি দু:খজনক ও লজ্জাকর; আইনজীবী সমাজের সদস্য হিসেবে মাথা হেট হয়ে যাওয়ার মত। যারা প্রকৃত দোষী তাদের বিচার হওয়া প্রয়োজন। অভিযোগের তীর যেহেতু আমাদের শিক্ষানবীশদের কতিপয় সদস্যদের দিকে, তাই এর আসল কারণ অনুসন্ধান অতি জরুরি। খবরে প্রকাশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলা হয়েছে; আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনার তদন্ত করবেন। কিন্তু তারা হয়তো ঘটনার বাহ্যিক উপসর্গের ভিত্তিতে অপরাধীর প্রাথমিক সংশ্লষ্টতা নির্ণয় করবেন এবং আদালত সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে বিচার করবেন।

অন্যদিকে, আমাদের বার কাউনিসলের বিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ নি:সন্দেহে এর প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে সচেষ্ট হবেন যাতে পরবর্তীতে আর এ জাতীয় ঘটনা না ঘটে। কারণ এর সাথে আমাদের আইনজীবী সমাজের মান সম্মান ও পরবর্তী প্রজম্মের আশা আকাঙ্খা জড়িত।

এ ব্যাপারে আমার মনের মধ্যে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছে, যা আমি বার কাউন্সিলে বিজ্ঞ নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সদয় বিবেচনার জন্য উত্থাপন করছি-

১) প্রশ্ন কি আসলেই অন্যান্য বছরের তুলনায় প্রথা-বহির্ভূত বা কঠিন হয়েছে? যদি হয়ে থাকে তার কারণ বা কি; এটা কি বার কাউন্সিল আগে জানিয়েছে?
২) এ জাতীয় বিশৃংখলা কি বিচারাঙ্গনে বা আইনজীবীদের মধ্যে এই প্রথম হয়েছে, না আগে আরো হয়েছে?
৩) ২০১২ সালের আগ পর্যন্ত বিধি মোতাবেক ৬ মাস পর পর পরীক্ষা নেওয়ার বিধান পরিবর্তন করে অনির্ধারিত সময়ে পরীক্ষার বিধান করার কারণ কি ছিল?
৪) ২০১৭ সালের আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিবছর পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছেনা কেন?
৫) ২/৩ বছর পরীক্ষা না নেওয়ার ফলে শিক্ষানবীশদের কি কোন ক্ষতি হচ্ছে না? শিক্ষানবীশদের প্রতি বছর পরীক্ষা নেওয়ার দাবীকে আমলে নেওয়া হচ্ছে না কেন? এই দাবী কি অযৌক্তিক বা বেআইনী?
৬) করোনার মধ্যে এতো কম সময়ের নোটিশে পরীক্ষা নেওয়ার কারণ কি? তাহলে ২৬ সেপ্টেম্বর যখন করোনার প্রকোপ কম ছিল তখন পরীক্ষা নেওয়া হলো না কেন?
৭) করোনাকালে বিশেষ বিবেচনায় একটি উন্নত মানের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে কি সঠিক আইনজীবী বাছাই করা যেতনা? একসময়তো শুধু মৌখিক পরীক্ষা, পরবর্তিতে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে আইনজীবী নির্বাচন করা হতো, তখন কি গুণগত মানসম্পন্ন আইনজীবী বের হন নাই?
৮) যে শিক্ষানবীশরা পরীক্ষার জন্য দাবি জানালো তাদের অনেকেই কেন বিদ্রোহী হয়ে উঠলো বা পরীক্ষা দিতে অনাগ্রহী হয়ে উঠলো?
৯) শিক্ষানবীশদের কষ্ট ও যন্ত্রণার কথা কি বার কাউন্সিল পদ্ধতিগতভাবে শোনার ব্যবস্থা করেছে বা আদৌ এরকম কোন পদ্ধতি আছে?
১০) সময়ের বিবর্তনের সাথে সাথে বার কাউন্সিল কি শিক্ষানবীশী ও এনরোলমেন্ট প্রক্রিয়াকে ঢেলে সাজিয়েছে এবং আইন শিক্ষাকে বাস্তবধর্মী করার কোন উদ্যোগ নিয়েছে?
১১) পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষানবীশীকালকে সুচারু করা কি বার কাউন্সিলের ও বিজ্ঞ আইনজীবী সমাজের দয়িত্ব নয়?

উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর যদি অনুসন্ধান করা যায় তাহলে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের শিক্ষানবীশরা যেমন মানসম্পন্ন আইনজীবী হিসাবে গড়ে উঠার সুযোগ পাবেন; তেমনি এ জাতীয় অনাকাঙ্খিত ঘটনাও ভবিষ্যতে আমরা এড়াতো পারবো। তাছাড়া আইনজীবী ও শিক্ষানবীশদের মধ্যে যে কাঙ্খিত সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক তাও বজায় থাকবে।

পরিশেষে, একটি কথাই বলবো বিভিন্ন পরিবেশ পরিস্থিতিতে সম্মুখীন হয়ে আমাদের সন্তান বা ছোটভাই ভুল করলে আমরা কিন্তু তাদেরকে তাড়িয়ে দিতে বা তাদের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব পোষে রাখতে পারিনা; অভিভাবকসুলভ দায়িত্ব নিয়ে তাদেরকে সংশোধন করাই আমাদের দায়িত্ব।

রাম চন্দ্র দাশ: আইনজীবী, ঢাকা জজ কোর্ট ও শিক্ষাবনীশ, হাইকোর্ট বিভাগ, বাংলাদশ সুপ্রিম কোর্ট।