মোঃ আমিনুর রশিদ: জীবন নামক সময় ঘড়ি কি কোনভাবে থামিয়ে পুঞ্জিভূত করে রাখা সম্ভব? পৃথিবীর যেকোন দ্রাঘিমায় এটা অসম্ভব ব্যাপার। তবে বাংলাদেশের বার কাউন্সিলের স্কেলে সম্ভবত শিক্ষানবিসদের জীবন থামিয়ে দেওয়া সবচেয়ে সহজ কাজ! এই জীবন গুলোর অপচয় যেন হিসেবের বাইরে! যেন ওরা সমাজের কোন বিচ্যুত অংশ! কেন এরকম একটা দমবন্ধ সময় আমরা পার করছি? কার কাছে উত্তর চাইব? তবে আসুন দেখি বার কাউন্সিলের সনদ আমাদের জন্য কতটা ভীষণ জরুরি?
অনেকের ধারণা বার কাউন্সিলের সনদ মানেই কোর্ট প্রাক্টিস! সনদের ব্যাপ্তি আপনারা এত সংকুচিত করে ফেলেছেন দেখেই আমি কিংকর্তব্যবিমুঢ়। অথচ সঠিক সময়ে সনদ পেলে আমরা ছড়িয়ে পরতে পারতাম দেশের সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানে। ব্যাংক, এনজিও, ফাইনান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক উপদেষ্টাসহ সব জায়গায় আমাদের সুযোগ আছে। কিন্তু সবকিছু আটকে আছে সনদ নামক ঐ সোনার হরিণের পায়ের তলায়।
সনদ ছাড়া কেউই আমাদের মূল্যায়ন করতে রাজি নয়। যেমন দেশের যেসব প্রতিষ্ঠান আইন কর্মকর্তার নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয় তাদের প্রায় সবাই বার কাউন্সিলের সনদ ওয়ালা গ্রাজুয়েট চায়। কেবল এই সনদের অভাবে আমরা পরীক্ষা দিয়ে নিজেদের প্রমাণের সুযোগ দূরে থাকুক আবেদন করে মূল ধারায় দাঁড়ানোর সুযোগও পাচ্ছি না। কিংবা আমাদের মধ্য যে ছেলে বা মেয়েটি সনদ পেয়ে নিম্ন আদালতে দুই বছরের প্রাক্টিসের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বার ট্রান্সফার করে অভিজাত ডিগ্রী বার এট ল করার স্বপ্ন দেখছে সেটাও সনদের যাতাকলে মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। একইভাবে ল গ্রাজুয়েটরা সনদের অভাবে পরিবারের স্বপ্নকে কবর দিয়ে উলটো বোঝা হয়ে গেছে!
অনেককে বলতে শুনি এত এডভোকেট দিয়ে কী হবে? অথচ এভাবে না ভেবে আমরা বলতে পারতাম দেশের যুব সমাজকে আমরা কাজে লাগাতে ব্যর্থ হচ্ছি যার ফলাফল রাষ্ট্রকে আঘাত করছে। এমনকি আমরা সিনিয়রদের চেম্বার এমনভাবে সাজাতে পারতাম যেখানে জুনিয়রদের সঠিকভাবে ইউটিলাইজ করা যায়। যেহেতু আইন ছাড়া কিছুই চালানো সম্ভব নয় তাই সব জায়গায় ল গ্রাজুয়েটদের স্পেস তৈরি করতে পারতাম।
তারপরও যুক্তির খাতিরে ধরলাম দেশে এখন চাহিদার তুলনায় ল গ্রাজুয়েট বেশি। কিন্তু এই প্রশ্ন আপনারা এখন তুলছেন কেন? বার কাউন্সিলের আইন শিক্ষা কমিটি এটা আগেভাগে উপলব্ধি করতে পারল না কেন? তবে কি তারা দূরদর্শী নয়? তারা দেশের আইন শিক্ষার মান বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে নিশ্চিত করতে পারছেন না কেন?
অতএব, সময় হয়েছে বার কাউন্সিলের পরীক্ষা পদ্ধতিকে নতুন করে সাজানো। আর সময়মত পরীক্ষা নেওয়া তো একটা রুটিন কাজ। দুঃখজনক হল, এই রুটিন কাজেও আমাদের রাজ্যের সকল ভয়। তিন বছর পর একটা পরীক্ষাতে বসার আগেই আমাদের বুক ধুরপুক করে এই ভেবে যদি কোনক্রমে একটা পরীক্ষা মিস বা ফেইল হয়ে যায় তো আগামী আরও তিনটা বছরের দুঃসহ প্রতীক্ষা।
আইনে স্নাতক সম্পন্নের মোটে ছয় বছর শেষ! যৌবনে এত সময় একটা পরীক্ষার নামে অপচয় করা জীবন যৌবন নিয়ে হোলিখেলার সমান। পরীক্ষা কঠিন হোক আপত্তি করি না দয়া করে প্রতি বছর পরীক্ষা নিশ্চিত করুন যেন চরম দুর্ভাগাও দুই তিনবার ফেল করে অন্তত তিন বছরের মধ্যে সনদটা পেয়ে যায়।
অন্যথায় আমাদের আইন জীবন থেমে যায় কিংবা আপনারা থামিয়ে দেন। আপনারা আমাদের অভিভাবক। দয়া করে আমাদের এইটুকু সর্বনাশ থেকে রক্ষা করুন।
মোঃ আমিনুর রশিদ: শিক্ষানবিশ আইনজীবী