দেশের কারাগারগুলোতে মাদকদ্রব্যের সরবরাহ বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণসহ বিভিন্ন বিষয়ে আটটি নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। ওকালতনামায় স্বাক্ষর ছাড়া জামিন নিয়ে আসামি কারাগার থেকে বের হওয়ার মামলায় উচ্চ আদালত এসব নির্দেশনা দিয়েছেন।
এর আগে করোনা পরিস্থিতিতে ওকালতনামায় ডেপুটি জেলারের স্বাক্ষর ছাড়া হাইকোর্ট থেকে জামিন এবং পরবর্তী সময়ে আসামি জামিনে থাকা অবস্থায় আসামি জেলে আছে বলে ডেপুটি জেলার স্বাক্ষর দেন।
ওই ঘটনায় গত ১৯ অক্টোবর বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ দেশের সব জেল সুপারকে আসামির ওকালতনামায় স্বক্ষরের জন্য আসামি ভিতরে কি বাহিরে আছে, তা নিশ্চিত হয়ে ওকালতনামায় স্বাক্ষর ও রেজিস্ট্রিভুক্ত করার নির্দেশ দেন।
ওই মামলায় আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন (মানিক) ও সহকারী অ্যাটর্নি মাহজাবিন রাব্বানী দীপা।
অন্যদিকে ডেপুটি জেলারের পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মোহাম্মদ আলী আজম। আর আসামি পক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. রুহুল কুদ্দুস কাজল ও শামীমা আক্তার।
আজ রোববার (২৭ ডিসেম্বর) হাইকোর্টের দেয়া আদেশের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশিদ আলম খান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনাগুলো হলো-
- বিচারাধীন মামলায় বা দণ্ডিত কারাবন্দিদের নাম, ঠিকানা, মামলার নাম্বার, মামলার ধারা, কোন আদালতে মামলা বিচারাধীন বা কোন আদালতের রায়ে কি দণ্ড হয়েছে, কারা মহাপরিদর্শক, জেলার, সহকারী জেলারকে সেসব তথ্য রেজিস্ট্রারে রাখতে হবে।
- কারা কর্তৃপক্ষকে দণ্ডিত বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির কারাগারে আসা এবং বের হওয়ার তারিখ রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
- যথাযথভাবে যাচাইয়ের পর নিশ্চিত হয়ে কারাকর্তৃপক্ষ বা কারা কর্মকর্তাকে দণ্ডিত ব্যক্তি বা বিচারাধীন মামলায় কারাবন্দির ওকালতনামায় সই করতে হবে বা সিল দিতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষ অথবা কারা কর্মকর্তা ওকালতনামার যেখানে সই ও সিল দিবেন তার পাশে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার পুরো নাম, কারাগারের ল্যান্ডফোন ও মোবাইল ফোন নাম্বার উল্লেখ করবেন।
- কোনো অশোভন, অযাচিত পরিবেশ-পরিস্থিতি যাতে তৈরি না হয় সে জন্য যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পাশাপাশি কারাগার ও কারা প্রাঙ্গণের শান্তি, নিরাপত্তা বজায় রাখতে কারা কর্তৃপক্ষকে সবসময় সতর্ক এবং সজাগ থাকতে হবে।
- কারাগারের ভেতরে সব ধরনের অবৈধ মাদকদ্রব্যের সরবরাহ বন্ধে কারা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ পদক্ষেপ ও ব্যবস্থা নিতে হবে।
- দর্শনার্থীদের কঠোরভাবে তল্লাশি করতে হবে এবং দর্শনার্থী কারও কাছে কোনো মাদকদ্রব্য বা অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় এবং যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে।
- কারা আইন, ১৮৯৪, কারাবন্দি আইন, ১৯০০ এবং বাংরাদেশ জেলকোডসহ সংশ্লিষ্ট সব আইনের বিধান কারা কর্তৃপক্ষকে কঠোরভাবে প্রতিপালন করতে হবে।
প্রতি তিন মাস পর পর এ রায় বাস্তবায়নের প্রতিবেদন সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল বরাবরে দাখিল করতে হবে বলে রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাশাপাশি এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, র্যাবের মহাপরিচালক, আইজি প্রিজন, সকল জেলার ও ডেপুটি জেলারের কাছে আদেশটি পাঠাতে বলা হয়েছে।
একইসঙ্গে, জামিন পেয়ে বের হওয়ায় আসামিকে চার সপ্তাহের মধ্যে পুনরায় বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণেরও নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত।