১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতের ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নাম দিয়ে দানবের মতো ঝাঁপিয়ে পড়ে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ২৬ তারিখেও কেউ ঘর ছেড়ে বের হতে পারেনি। ২৭ তারিখ সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য কারফিউ তুলে নেওয়া হলে যে যার গন্তব্যে ছুটে যায়। বাংলার মানুষ ২৭ তারিখ জানতে পারে ২৫ মার্চ রাতে দেশের ওপর দিয়ে চালানো হয় নারকীয় হত্যাযজ্ঞ।
শহরের ভীতসন্ত্রস্ত মানুষ সেদিন কিছু সময়ের জন্য মুক্ত হয়ে ছোটে নিকটজনের সন্ধানে। কেউ খুঁজে পান জীবিতদের। কেউ পান স্বজনের গুলিবিদ্ধ কিংবা পোড়া লাশ।
বিদেশি গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, কেমন বিভৎস নারকীয় হত্যাকাণ্ড ঘটেছে সে রাতে। পথে পথে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে লাশ। রাজারবাগ পুলিশ লাইনস বিধ্বস্ত। পুলিশ ব্যারাক-বাজার-বস্তি থেকে তখনও বেরুচ্ছে ধোঁয়া। তিল ধারণের জায়গা নেই হাসপাতালগুলোতে।
ইতিহাসের এই দিনে বাংলার অসংখ্য মানুষ প্রথমবারের মতো শরণার্থী হয়। মানুষ কোথায় যাবে সেটা ঠিক না করেই ঢাকা ছাড়ে। হাতের কাছে যা পেয়েছে তা নিয়েই রিকসা বা পায়ে হেঁটে ছুটে গেছে গ্রামের দিকে।
এদিন New York Times, The Daily Telegraph, Hindustan Times-সহ বিশ্বের প্রধান খবরের কাগজে প্রথম পাতার উপরের অংশে স্থান পায় বাংলাদেশের গণহত্যার খবর। খবরে বলা হয়, ‘২৫ মার্চ দিবাগত রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর তৎপরতার কারণে পাকিস্তানের রাজনৈতিক সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আশা শেষ হয়ে যায়। শেখ মুজিব বাংলাদেশ নামে পাকিস্তানের পূর্বাংশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং পাকিস্তানি সেনাবাহিনী শেখ মুজিবকে গ্রেফতার করে।’
এদিন গভীর রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থানরত বিদেশি সাংবাদিকদের বিমানবন্দরে এনে পিআইএ-র একটি বিমানে উঠিয়ে ঢাকা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয় অনেকটা জোর করেই।
জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম তার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে জানান, ২৫ তারিখ গোলাগুলির সময় তিনি সপরিবারে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নিজ বাসভবনে খাটের নিচে ছিলেন। পরের দিন ২৬ তারিখেও গুলির আওয়াজ পান থেকে থেকে।
২৭ মার্চ কারফিউ কিছু সময়ের তুলে নেওয়া হলে জাহানারা ইমামের সন্তান রুমি (শহীদ রুমি) তাদের উদ্ধার করেন। তিনি বলেন, এই দিনে দুপুরে কারফিউ পুনরায় বলবৎ হবার পর সন্ধ্যা থেকে আবারও ঢাকা ও শহরতলীর বিভিন্ন এলাকায় গুলির আওয়াজ শোনা যেতে থাকে।