হামলার আশঙ্কায় পুলিশের সতর্ক অবস্থান, সারাদেশে বিজিবির মোতায়েন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফর ঘিরে প্রতিবাদে নেমে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন ইসলামি দলগুলোর নেতাকর্মীরা। শুক্রবার (২৬ মার্চ) জুমার নামাজের পর প্রথমে বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে সংঘর্ষ শুরু হয়। এরপর সন্ধ্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার সড়ক অবরোধ করে রাখে ওই এলাকার কুতুবখালী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা। ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশসহ (ডিএমপি) দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত পুলিশ সদস্যদের সতর্ক থাকতে বিশেষ নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে।

শুক্রবার রাতে পুলিশ সদর দফতর ও ডিএমপি থেকে বিশেষ এ নির্দেশনা দেয়া হয় বলে পুলিশের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে রাজধানীতে কর্মরত ৮টি বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি), অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) ও সহকারী পুলিশ কমিশনারদের (এসি) সতর্ক থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, ডিএমপির থানাগুলোতে পুলিশ ফাঁড়ি ও বক্সে যেকোনো সময় হামলার ঘটনা ঘটতে পারে। এজন্য এসব স্থানে পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতি বাড়াতে হবে। এছাড়া যেকোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে শুক্রবার দিবাগত রাতে ও শনিবার (২৭ মার্চ) সকালে পুলিশ সদস্যদের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে।

পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়েছে।

রাজধানীকে নিরাপদ রাখতে রাতে পুলিশের পেট্রোলিং বাড়ানোসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মর্যাদার এক কর্মকর্তা বিশেষ এ নির্দেশনার কথা নিশ্চিত করেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাতে ডিএমপির কন্ট্রোল রুম থেকে তাদের নিজস্ব ওয়াকিটকিতে এই বার্তা দেয়া হয়। ডিএমপির সিনিয়র অফিসারদের মাঠে থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই মেসেজ পাওয়ার পরপরই আমরা এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

সূত্র জানায়, পুলিশ সদর দফতর থেকে সারাদেশে কর্মরত এসপিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একই ধরনের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোনো মহল যেন নাশকতার জন্য জমায়েত না হতে পারে সেজন্য পুলিশকে কঠোর অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে। এছাড়া পুলিশের সব থানা এবং সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তার নিরাপত্তা জোরদারেরও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে ঢাকা জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘শুক্রবার দিবাগত রাতে আমরা পুলিশ সদর দফতর থেকে নির্দেশনা পেয়েছি। পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী ইতোমধ্যে আমরা যেকোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়ানোর জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি।’

এ ছাড়াও পুলিশের সতর্কতার পাশাপাশি সারাদেশে বিজিবি মোতায়েনের বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন বিজিবির জনসংযোগ কর্মকর্তা বিজিবির মুখপাত্র পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল ফয়জুর রহমান। সারাদেশে কত প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কত প্লাটুন মোতায়েন করা হয়েছে এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। তবে সারাদেশেই মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা মসজিদকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। মুসলিম ও মুসলমানদের পবিত্র জায়গা হচ্ছে মসজিদ। পুলিশ মসজিদের পবিত্রতা রক্ষার্থে ভেতর প্রবেশ করেনি। যদি এটা মসজিদ না হতো তাদেরকে আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসতে পারতাম। আজকে যে পরিমাণ ইট-পাটকেল পুলিশের ওপর নিক্ষেপ করা হয়েছে, তা কয়েক ট্রাক হবে। মসজিদের ভেতরে এতো ইট কিভাবে আসলো সেটা তদন্ত করে দেখা হবে।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এসেছেন এটি আমাদের জন্য মর্যাদার। সেই মর্যাদাকে নষ্ট করতে তারা সংঘর্ষে জড়িয়েছে। সত্যিকার অর্থেই তারা রাষ্ট্রের মযার্দা চায় কি-না, সে বিষয়ে আমার মনে সন্দেহ আছে। বাংলাদেশের মযার্দা তারা চায় না। বাংলাদেশ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হতে চলছে, এটাও তারা চায় না। তারা চায় তালেবান ধরনের একটি রাষ্ট্র।’

পুলিশ কর্মকর্তা সৈয়দ নুরুল ইসলাম বলেন, আপনারা জানেন- বায়তুল মোকাররমে প্রায় প্রতিদিনই বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। তারা নানা ধরনের ব্যাঙ্গাত্মক আচরণ করে। এখান থেকে জুতা-স্যান্ডেল দেখানো হয়, কালো পতাকা, ঝাড়ু দেখানো হয়। যেহেতু আজ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মোদি বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আমন্ত্রিত অতিথি। সুতরাং আজকে যেন কোনো বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয় সে কারণে আমাদের নিরাপত্তা বেষ্টনি ছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভেতরে যখন মুসল্লিরা নামাজ পড়ছিল, তখন কিছু মুসল্লি মিছিল শুরু করে। তারা জুতা-স্যান্ডেল দেখাচ্ছিল। এতে অন্য মুসল্লিরা বাধা দেয়। এতে দু’দলের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। একটা পর্যায়ে যারা জুতা স্যান্ডেল দেখাচ্ছিল, তারা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেয় এবং ভেতর থেকে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। অন্য মুসল্লিরা ইটপাটকেলের আঘাতে আহত হয়। অনেকে আহত হয়ে চলে যায়। এমনকি পুলিশের ওপর তারা চড়াও হয়।’

পুলিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা আন্দোলনকারীদের প্রতিরোধ করতে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছিল, তারা এটা কিভাবে করল এমন প্রশ্নের জবাবে মতিঝিল জোনের ডিসি বলেন, ‘একদল মুসল্লি মসজিদের ভেতর থেকে স্লোগান দিচ্ছিল, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে জুতা, ঝাড়ু দেখাচ্ছিল। তাদের এমন কর্মকাণ্ডকে বিরোধিতা করছিল আরেকদল মুসল্লি। তারপর থেকে এই সংঘর্ষ শুরু হয়। যারা জুতা দেখিয়েছে তারা মসজিদের ভেতরে অবস্থান নেয়। আর যারা তাদের এগুলোর বিরোধিতা করছিল, তারা তাদের হাতে আক্রান্ত হয়ে রাস্তার বিভিন্ন যায়গায় অবস্থান নিয়েছে। আমরা বলেছিলাম আপনারা যারা মসিজেদের ভেতরে আছেন তারা বের হয়ে যান। তখন অনেকে আমাদের কথা শুনেছেন। আর যারা অতি-উৎসাহী তারা এখনও অবস্থান করছেন।’

এদিকে শুক্রবার সকালেই দুইদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে বাংলাদেশে পৌঁছেছেন নরেন্দ্র মোদি। তার সফর ঘিরে কোনো অপচেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না বলে আগেই সতর্ক করেছিল পুলিশ।