মোঃ জিশান মাহমুদ: অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

আব্দুল মতিন খসরু এবং সুপ্রিম কোর্ট বারের সাংবিধানিক শূন্যতা প্রসঙ্গে

জিশান মাহমুদ:

মৃত্যু এমন এক সত্যি, যা আমাদের সবাইকে একদিন বরণ করে নিতে হবে। ধর্মমতে প্রত্যেক প্রাণই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। তবুও কিছু মৃত্যু সহজেই মেনে নেয়া বেদনাদায়ক!

তারপরও জীবনের বাস্তবতায় মৃত্যুকেও আমাদের স্বাভাবিক বলে মেনে নিতে হয়।

মুসলিমদের ইবাদতের মাস রমজানের প্রথম দিন অর্থাৎ গত ১৪ এপ্রিল, ২০২১ তারিখে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, সংসদ সদস্য, সাবেক আইন মন্ত্রী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নব-নির্বাচিত সভাপতি জননেতা আব্দুল মতিন খসরু।

জানামতে আব্দুল মতিন খসরু বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির একমাত্র সভাপতি যিনি নির্বাচিত হয়েছেন, দায়িত্বও পেয়েছেন, কিন্তু একদিনের জন্যও তা পালন করার সুযোগ পাননি অথবা দুর্ভাগ্যবশত আমরা তার সেবা থেকে বঞ্চিত হয়েছি! তার অকাল প্রয়াণে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাংবিধানিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়।

এখন তার অনুপস্থিতিতে সভাপতির শূন্য পদ পূরণ করার একটি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা আছে। বর্তমান নব-নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির জন্য এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জও বটে!

The Constitution and the Rules of the Bangladesh Supreme Court Bar Association এর আর্টিকেল ১৬ এর বিধান মোতাবেক, “In the case of casual vacancy occurring on account of the removal, resignation or death of any office bearer or other member the vacancy shall be filled within a month by election in a Special General Meeting of the Association to be held for the purpose and the manner of this election shall be decided by the meeting itself.

Provided that the office-bearer or other member who has submitted his resignation, shall have to carry on his duties until the vacancy caused by his resignation has been filled up”.

আর্টিকেল ১৬ এর বিধান অনুযায়ী অবশ্যই একমাস অর্থাৎ আগামী ৫ এপ্রিল তারিখের মধ্যে সভাপতির শূন্য পদ পূরণ করতে হবে। এখন সভাপতির শূন্য পদ পূরণ করার নিমিত্তে Special General Meeting করে সে মিটিংয়ে সভাপতির শূন্য পদ পূরণ করতে হবে।

আর্টিকেল ১৭(২)(বি) এর বিধান মতে, ‘Special General Meeting may be convened with seven days notice ‘. কিন্তু আসা যাক Special General Meeting এ কারা উপস্থিত থাকতে পারবেন। আর্টিকেল ১৭(৪)(এ) এর বিধান মতে, ‘Seventy five members shall form the quorum in Special General Meeting’ অর্থাৎ বর্তমান The Constitution and the Rules of the Bangladesh Supreme Court Bar Association অনুযায়ী Special General Meeting শুধু মাত্র সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ৭৫ জন বিজ্ঞ সদস্য এর উপস্থিতিতে কোরাম পূর্ণ করে সভা শেষ করা যাবে।

ইতিপূর্বে কখনো এইরুপ সাংবিধানিক শূন্যতা সৃষ্টি না হওয়ায় বিষয়টি নিয়ে হয়তো পূর্বের কোন কমিটি সেভাবে চিন্তা করে নাই। কিন্তু বর্তমান ২০২১-২২ মেয়াদি কার্যনির্বাহী কমিটিকে শুরুতেই এ ধরনের একটি সাংবিধানিক সংকটের মধ্য দিয়েই যাত্রা শুরু করতে হচ্ছে।

যেহেতু বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি কোন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান নয়, শুধু মাত্র নির্বাচনের খাতিরে বিজ্ঞ আইনজীবীরা বিভিন্ন দল বা প্যানেলের মাধ্যমে নির্বাচন করে থাকেন এবং যেহেতু আর্টিকেল ১৭(৪)(এ) এর ক্রাইটেরিয়া অনুযায়ী Special General Meeting এর আয়োজন করা কোভিড-১৯ এর ২য় ঢেউ বিবেচনায় ওপেনলি করা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ কাজ হবে এবং সর্বোপরি ১৭(৪)(এ) অনুযায়ী ৭৫ জন বিজ্ঞ আইনজীবী কে একটি প্লাটফর্মে এনে Special General Meeting আয়োজন করলেও তা সাধারণ আইনজীবীদের মূল্যবান মতামত পরিস্ফুটিত হবে না।

এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত প্রস্তাব, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিগত দিনের সকল নির্বাচিত সভাপতি মহোদয়দের দায়িত্ব দেয়া হউক, ওনারা একটি ভার্চুয়াল সভার মাধ্যমে ঠিক করে দিক, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ২০২১-২২ মেয়াদে কে সভাপতির দায়িত্ব পালন করবে।

আমরা আমাদের সকল সাবেক সভাপতির প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখতে চাই। তারা আমাদের সঠিক নেতৃত্ব ঠিক করে দিবেন বলে প্রত্যাশা রাখছি।

আমরা আমাদের আর কোন শ্রদ্ধেয়জনদের হারিয়ে সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতিকে আরও অভিভাবক শূন্য করতে চাই না। আশা করছি, আমাদের বারের বর্তমান কার্যকরী কমিটি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করবেন।

(বিঃদ্রঃ এটা আমার ব্যক্তিগত মতামত। কাউকে হেয় করার উদ্দেশ্যে এটি লিখিত নয়। বাস্তবতার আলোকে সাংবিধানিক সংকট উত্তরণের একটি প্রস্তাবনা মাত্র।)

লেখক- আইনজীবী; বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টবাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আইনজীবী সমিতির সদস্য সচিব