কাজী শরীফ
কাজী শরীফ

ডাক্তার, পুলিশ অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় প্রতিক্রিয়া

কাজী শরীফ:

গতকালের ঘটনা নিয়ে ভেবেছিলাম কিছুই লিখব না। কিন্তু অভ্যাস বড় খারাপ জিনিস। শুধু এটুকুই বলব গতকাল ডাক্তার ম্যাডাম যেভাবে উত্তেজিত হয়েছেন সেটা শুধু গতকালের ঘটনার জন্য নয়৷ রবি ঠাকুরের ভাষায় তাই বলি “দিনে দিনে বহু বাড়িয়াছে দেনা শুধিতে হইবে ঋণ।”

গতকালের ঘটনা ভুলে শুধু নিজেকে প্রশ্ন করুন একজন ডাক্তার কি একজন পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট বা সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যের মত সমাজে মর্যাদা পান? জেলার সবচেয়ে বড় পদের ব্যক্তি জেলা জজ স্যার, ডিসি মহোদয়, এসপি মহোদয়কে আমরা যে সমীহ করি তার কত শতাংশ সমীহ একজন সিভিল সার্জনকে করি? সমীহ না বলে যদি শ্রদ্ধাও বলি আসলেই কি বাকি তিনজনের মত শ্রদ্ধা আপনি কিংবা আমি একজন সিভিল সার্জনকে করি? শুধু ডাক্তার কেন একজন সরকারি কলেজের অধ্যাপক কি তার পদানুযায়ী প্রাপ্য মর্যাদা পান? আমার মতে পান না! কারণ তার ইউনিফর্ম সমীহ জাগানিয়া নয়। তার আদেশে নড়ে ওঠে না পুরো জেলা।

আমাদের সমাজ যতদিন জ্ঞান দিয়ে মূল্যায়ন করবে না ততদিন এ সমস্যা থাকবেই। আজ ইনি রেগে যাচ্ছেন তো কাল উনি রেগে যাবেন! কারণ মানুষ না পেলে কষ্ট পায় না। বোঝে সবাই দরিদ্র আমিও তাই! কিন্তু কেউ পেলে আর কেউ না পেলে মানুষ মানতে পারে না৷ বঞ্চিত মানুষের বিস্ফোরণ ভয়াবহ।

তবে ডাক্তার ম্যাডাম যেভাবে তুই, তোকারি, হারামজাদা বলেছেন এটা আমি সমর্থন করি না। মানুষ রেগে গেলেও শব্দচয়নে সতর্ক হতেই হবে৷ শিক্ষা আমাদের এটাই শেখায়। “ডাক্তার হতে না পেরে পুলিশ হওয়া” তত্ত্বটি অনেকাংশে ঠিক তবে এটা অহম হয়ে যায়। আল্লাহ ছাড়া কারোরই অহংকার মানায় না।

পাশাপাশি পুলিশও গাড়িতে লোগো, ম্যাডামের এপ্রন দেখার পর এমনভাবে জেরা না করলেও পারত। একজন ডাক্তার এ সময়ে জীবন রাজি রেখে মানুষের সেবায় হাসপাতালে যান। আমাদের অনেকেই বাসায় বসে মাসশেষে বেতন পাচ্ছি আর একজন ডাক্তার করোনার আশংকাকে মাথায় রেখে হাসপাতালে যাচ্ছেন। তার প্রতি আমাদের আচরণ হওয়া উচিত মানবিক, ভালোবাসার ও শ্রদ্ধার।

তিনজনই নিজেদের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান দাবি করে মহান মুক্তিযুদ্ধে তাদের পিতার অবদানকে নিয়ে গতকাল থেকে যে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তা আমার কাছে শোভন মনে হয়নি। পিতার অবদান শ্রদ্ধার, সেটা রাজপথে ব্যবহারের নয়।

আমি আবারও বলছি একজন চিকিৎসক ও একজন শিক্ষক সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পেশার প্রতিনিধিত্ব করেন। নিঃসন্দেহে তাঁদের সমমর্যাদার অন্য পেশার মানুষের তুলনায় কম সমীহ/ শ্রদ্ধা করা হয়। যা অনুচিত।

যতদিন এ তথাকথিত ক্ষমতার লড়াই থাকবে ততদিন এসব ঘটতেই থাকবে। আসুন আমরা প্রত্যেক মানুষকে মর্যাদা দিই। আর প্রত্যেক পেশার মানুষের ভাবা উচিত সরকারি চাকুরি কোন ক্ষমতা নয় এটা একটা দায়িত্ব মাত্র৷ একসময় আমাদের ৫৯ পূর্ণ হবে। ক্লাব সিক্সটিতে ঢুকব৷ তখন এগুলোর কিছুই থাকবে না। সুতরাং আজ থেকে বিনয়ী হলে ক্ষতি কী!

লেখক- সহকারী জজ, নোয়াখালী।