বাঁশখালী সংঘর্ষ: বিচারিক তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ নিয়ে সোমবার হাইকোর্টে শুনানি

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গণ্ডামারায় এস আলম গ্রুপের নিমার্ণাধীন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সংঘর্ষের বিচারিক তদন্ত হবে কিনা এবং হতাহত শ্রমিকদের পরিবারের জন্য আপাতত ২০ লাখ টাকা করে ক্ষতিপূরণ পাবে সে বিষয়ে সোমবার হাই কোর্টে শুনানি হবে।

এই দুটি বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে করা রিট আবেদন বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সরদার মো. রাশেদ জাহাঙ্গীরের ভার্চুয়াল বেঞ্চ শুনবে বলে আবেদনকারী আইনজীবী জানান।

মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন।

গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, “আজকে আবেদনটি আদালতে মেনশন করেছিলাম। আদালত আবেদনটি সোমবার শুনানির জন্য রেখেছেন।”

নিহত প্রত্যেক শ্রমিকের পরিবারকে তিন কোটি টাকা করে এবং আহতদের প্রত্যেককে দুই কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিতে গত ১৮ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবসহ সাত সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শকসহ ১৬ কর্মকর্তা বরাবর ই মেইলের মাধ্যমে আইনি নোটিস পাঠায় আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
এজন্য রোববার পর্যন্ত সাত দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে তার আগেই বৃহস্পতিবার রিট আবেদনটি করা হয়। রোববার সেটি উপস্থাপন করা হলে তা শুনানির জন্য গ্রহণ করে উচ্চ আদালত।

১৭ এপ্রিল গণ্ডামারা ইউনিয়নে এস আলম গ্রুপের নির্মাণাধীন ১৩২০ মোগাওয়াট ক্ষমতার ‘এস এস পাওয়ার প্ল্যান্টে’ বিভিন্ন দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের উপর গুলি চালায় পুলিশ। তাতে ঘটনাস্থলেই চারজনের মৃত্যু হয়। পরে হাসপাতালে আরও দুজনের মৃত্যু ঘটে। এছাড়া ওই ঘটনায় অন্তত ২০ জন শ্রমিক এবং তিন পুলিশ সদস্য আহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী ও আহত শ্রমিকদের ভাষ্য, বকেয়া বেতন ও রোজায় কাজের সময় পরিবর্তনের দাবিতে বিক্ষোভ থেকে সেদিন সংঘাত ঘটেছিল। রিট আবেদনে বলা হয়, দরিদ্র শ্রমিকদের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় বিবাদিরা কর্তৃপক্ষ হিসাবে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে এই নৃশংসতার সাথে জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আদালত বিবাদীদের প্রতি নির্দেশ দিতে পারেন।

আবেদনে আরও বলা হয়, প্রভাবশালী মহলের হাত থেকে সুবিধাবঞ্চিত দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জান-মালের রক্ষা এবং তাদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে বিবাদীদের বিশেষ করে সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক ও আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

“কিন্তু এ ঘটনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রশাসন দরিদ্র শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মালিক পক্ষের হয়ে সহায়তা করেছে এবং সংশ্লিষ্ট শীর্ষ কর্তৃপক্ষ নীরব থেকেছে। এটি সম্পূর্ণভাবে আমাদের সাংবিধানিক চেতনার পরিপন্থী। এটি মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন।”

সেই কারণে বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং নিহত শ্রমিকদের প্রত্যেকের পরিবারকে তিন কোটি ও আহত শ্রমিকদের প্রত্যেককে দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বিবাদীদের কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, সেই রুল চাওয়া হয়েছে আদালতের কাছে।

ক্ষতিপূরণ, বিচারিক তদন্ত কমিটির নির্দেশনা ছাড়াও হতাহত শ্রমিকদের তালিকা তৈরি করে তা আদালতে দাখিল করার নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে।

স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, শিল্প সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, বাণিজ্য সচিব, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ সচিব, পরিবেশ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও এস এস পাওয়ার আই লিমিটেডসহ ১৯ ব্যক্তি ও দপ্তরকে বিবাদী করা হয়েছে এতে।