ছাগলটি মুক্তি পেল ১০ দিন পর

মোহাম্মদ সেলিম মিয়া :

আইনের কথা বলতে গেলে আমার বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের অনেক ইউএনও বন্ধু এবং কিছু ইউএনও ছোট ভাই আবার মাইন্ড করতে পারে, তাদেরকে ছোট করা বা অসম্মান করা লেখার উদ্দেশ্য নয়।

মালিকের অনুপস্থিতিতে উপজেলা চত্ত্বরে লাগানো ফুল গাছের পাতা খেয়ে ফেলায় বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করে ছাগলকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেছেন, বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সীমা শারমিন। তথ্যসুত্র ইত্তেফাক

আমরা যারা আইনে লেখা পড়া করেছি তারা কম বেশি একটা বিষয় জানি, আইনি ফাক ফোকরে প্রকৃত দশ জন অপরাধীও যদি কোন অভিযোগ থেকে খালাস/মুক্তি পায় তবুও একজন নিরপরাধ ব্যক্তিও যাতে শাস্তি না পায় তা বিচারককে নিশ্চিত করতে হয় কিন্তু আইনে অনার্স না পড়া আমাদের ইউএনও বন্ধুগন প্রায়ই আইন বহির্ভূত ভাবে বিচারিক ক্ষমতা প্রয়োগ করেন কিন্তু তারা এটাও বলতে চান যে তারা জনকল্যাণে এবং দ্রুত অপরাধ দমনে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি তাদের সাথে একমত কিন্তু একজন ইউএনও কোন ভালো কাজও আইন বহির্ভূতভাবে করতে পারেন না যার কারনে তারা প্রায়ই পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হচ্ছেন অথচ আপনি কতজন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদেরকে বিচার কাজ নিয়ে পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হতে দেখেছেন?

বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করতে হলে অভিযুক্তকে অবশ্যই আনিত অভিযোগ স্বীকার করতে হয়, স্বীকার না করলে কোনভাবেই দন্ড দেওয়া যাবে না। ভ্রাম্যমাণ আদালতের যদি মনে হয় অভিযোগের সত্যতা আছে কিন্তু স্বীকার করছে না তাহলে অভিযোগটি বিচারার্থে উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে প্রেরণ করিবেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তি অভিযোগ স্বীকার করলে তাহার স্বীকারোক্তি লিপিবদ্ধ করিয়া উহাতে অভিযুক্তের স্বাক্ষর বা ক্ষেত্রমত, টিপসই এবং দুইজন উপস্থিত স্বাক্ষীর স্বাক্ষর বা ক্ষেত্রমত টিপসই গ্রহণ করিতে হইবে; এবং অতঃপর মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট তাহার বিবেচনায় যথোপযুক্ত দন্ড আরোপ করিয়া লিখিত আদেশ প্রদান করিবেন এবং উক্ত আদেশে স্বাক্ষর করিবেন।

অভিযোগ অস্বীকার করিয়া আত্মপক্ষ সমর্থনে অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হইলে, মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট তাহাকে অভিযোগ হইতে অব্যাহতি প্রদান করিবেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তি কর্তৃক প্রদত্ত উক্ত ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হইলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকারী এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বা ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট অভিযোগটি বিচারার্থে উপযুক্ত এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে প্রেরণ করিবেন।

এই ক্ষেত্রে কতজন অপরাধী ইউএনও/নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয় এর সামনে অপরাধ স্বীকার করে/করেছে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে!

যাইহোক উক্ত ঘটনায় ছাগল মালিক জরিমানার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ইউএনও মহোদয় জরিমানা উসুল করতে ৫ হাজার টাকায় ছাগলটি বিক্রি করে দিয়েছিলেন!

মোট কথা হলো এডমিন ক্যাডারদের হাতে বিচারিক ক্ষমতা একেবারেই বেমানান, যার যে কাজ তাকেই করা উচিৎ যার কারনে আইন না জানা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মাধ্যমে বারংবার এই বিচারিক ক্ষমতার অপপ্রয়োগ হচ্ছে আর এতে কস্ট পাচ্ছে সাধারণ মানুষ।

লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট।