মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে আসামি হিসেবে প্রায় পাঁচ বছর জেল খাটা আরমানকে গ্রেফতারের ঘটনায় সাত পুলিশ সদস্যের অবহেলা খুঁজে পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
উচ্চ আদালতের নির্দেশে পিবিআইয়ের অনুসন্ধান কমিটির এমন প্রতিবেদন হাইকোর্টে দাখিল করা হয়েছে।
১৫ জুন (মঙ্গলবার) এ বিষয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন রিটের পক্ষের আইনজীবী মো. হুমায়ন কবির।
একটি জাতীয় দৈনিকে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত শাহাবুদ্দিন বিহারির পরিবর্তে আসামি হিসেবে কারাগারে ‘নির্দোষ’ আরমান।
প্রকাশিত এ প্রতিবেদন যুক্ত করে রিটের পর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। সেই রুলের চূড়ান্ত শুনানির ৩১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে কারাগারে থাকা আরমানকে অবিলম্বে মুক্তির নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে ৩০ দিনের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে তাকে ২০ লাখ টাকা দিতে পুলিশের আইজিপিকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এ ছাড়া আরমানের ঘটনায় দায় নিরূপনে নতুন করে অনুসন্ধানের জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা নিযুক্ত করে তিন মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে পিবিআইয়ের উপমহাদরিদর্শকে (ডিআইজি) নির্দেশ দেওয়া হয়।
পরে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে আপিল বিভাগ ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত করেন। এদিকে কারাগার থেকে মুক্তি পান আরমান। অপরদিকে অনুসন্ধন করে পিবিআই।
কমিটির প্রধান পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটি এ অনুসন্ধান করেন।
প্রতিবেদনে যাদের দায়ী করা হয়েছে তারা হলেন- পল্লবী থানার সে সময়কার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিদর্শক মো. নজরুল ইসলাম, আরেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক মো. দাদন ফকির, মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক এসআই বর্তমানে পরিদর্শক সিরাজুল ইসলাম খান, আরমানকে গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনাকারী টিম প্রধান সাবেক এসআই (বর্তমানে পরিদর্শক) মো. রাসেল, সাবেক এএসআই (বর্তমানে এসআই) হযরত আলী, তৎকালীন ডিউটি অফিসার সাবেক এসআই (বর্তমানে পরিদর্শক, এপিবিএন) মনিয়ারা আক্তার এবং সাবেক এএসআই (বর্তমানে অবসরে) খান ইমদাদুল হক। এ সাত জন কীভাবে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন তা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ ধরণের ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে ৪ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। সুপারিশে বলা হয়েছে,(১) আসামির নামের সঙ্গে তার পিতা-মাতার নাম সঠিকভাবে লিখতে হবে। (২) আসামিকে গ্রেফতারের পর তার ছবি ধারণ করতে হবে। (৩) আসামির সঠিক নাম-ঠিকানা যাচাইয়ের জন্য অনুসন্ধান স্লিপের (ই/এস) সঙ্গে আসামির ছবি সংযুক্ত করতে হবে। বর্তমানে প্রচলিত অনুসন্ধান স্লিপের পরিবর্তে তদন্ত কমিটির প্রস্তাবিত ফরম ব্যবহার করতে হবে। এজন্য ওই ফরম ছাপিয়ে সকল থানায় সরবরাহ করতে হবে। এবং (৪) আসামির জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট (যদি থাকে), ড্রাইভিং লাইসেন্স (যদি থাকে) এবং জন্মনিবন্ধন সংযুক্ত করতে হবে।
আরমানের বিষয়ে ওই পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হয়, পল্লবীর বেনারসি কারিগর মো. আরমান নির্দোষ হয়েও ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে ২০১৬ সালের ২৭ জানুয়ারি থেকে কারাভোগ করছেন। রাজধানীর পল্লবী থানার একটি মাদক মামলায় ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্ত আসামি মাদক কারবারি শাহাবুদ্দিন বিহারি এ মামলার প্রকৃত আসামি। কিন্তু ওই পরিচয়ে তার পরিবর্তে সাজাভোগ করছেন আরমান।
শুধু বাবার নামে মিল থাকায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে শাহাবুদ্দিন নামে আদালতে সোপর্দ করেছে বলে জোর অভিযোগ করেছে তার পরিবার।
অন্যদিকে প্রকৃত আসামি শাহাবুদ্দিন কারাগারের বাইরে দিব্যি মাদক কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন।