১০ বছর আগে দুই বাংলাদেশি নাগরিককে হয়রানির ঘটনায় ইতিহাদ কর্তৃপক্ষকে প্রত্যেককে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়ে হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়েছে।
দুই বাংলাদেশি নাগরিককে হয়রানির ঘটনায় ইতিহাদ এয়ারওয়েজ কর্তৃপক্ষকে এক কোটি টাকা করে মোট দুই কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। রায় পাওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে এ অর্থ পরিশোধ করতে হবে। এখন রায় হাতে পাওয়ার পরে এ প্রক্রিয়া শুরু হবে।
২০২০ সালের ৮ অক্টোবর ওই রায় ঘোষণা করেছিলেন হাইকোর্ট। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। তাকে সহায়তা করেন অ্যাডভোকেট রিপন বাড়ৈ। ইতিহাদের কান্ট্রি ম্যানেজারের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট আজমালুল হোসেন কিউসি ও মো. আজিজ উল্লাহ ইমন।
২০১১ সালের ২৮ জুন আবুধাবি এয়ারপোর্টে বাংলাদেশি দুই নাগরিককে হয়রানি/নির্যাতন/আটকের ঘটনায় ইতিহাদ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট আবেদন করার পরে ওই বছরের ১৪ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ঘটনা তদন্ত করে একটি রিপোর্ট দাখিল করার জন্যে নির্দেশ দেন।
দীর্ঘদিন রুল শুনানি শেষে গত বছরের ৮ অক্টোবর রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। রায়ে বাংলাদেশি যাত্রী তানজিন বৃষ্টি ও নাহিদ সুলতানা যুথীকে এক কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য বলা হয়।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ জানান, ১৯২ পৃষ্ঠার ওই রায়ে আদালত বেশকিছু নির্দেশনা দিয়েছেন।
এক. বৈশ্বিক মহামারি কোভিড-১৯ সংকটজনিত কারণে ইতিহাদ এয়ারওয়েজের অবস্থা বিবেচনায় আবেদনকারী এবং তার মা প্রত্যেককে মাত্র ১ (এক) কোটি টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেয়ার জন্য ইতিহাদ এয়ারওয়েজ এর বাংলাদেশ প্রতিনিধির মাধ্যমে ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
দুই. এ রায় ও আদেশের অনুলিপি পাওয়ার পরবর্তী মাস থেকে ২০টি সমান মাসিক কিস্তিতে ক্ষতিপূরণের টাকা ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে প্রদান করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
তিন. নারী যাত্রীদের সঙ্গে অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে সম্মানজনক আচরণ করার জন্য ইতিহাদ এয়ারওয়েজকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
চার. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বাংলাদেশি নাগরিকরা আকাশপথে চলাচল করেন। এ ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী বাংলাদেশি রফতানিকারকদের পণ্য প্রতিনিয়তই আকাশপথে পরিবহন করা হয়। তাই বাংলাদেশি প্রবাসী সকল কর্মজীবি ও রফতানিকারদের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং তাদের অধিকার আদায়ে বাংলাদেশের সকল দূতাবাসে এ মামলার রায় অনুসারে সভা, সেমিনার আয়োজন করে বিমান সংস্থার দায়বদ্ধতার বিষয়ে তাদের ওয়াকিবহাল করতে হবে। যাতে আকাশপথে যাতায়াতের সময় ক্ষতিগ্রস্ত হলে যথাযথ ক্ষতিপূরণ তারা আদায় করতে সক্ষম হন।
পাঁচ. আকাশপথে যাত্রী এবং যাত্রীর লাগেজ, পণ্যের মালিকের অধিকতর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য International Civil Aviation Organization (ICAO) কে আরও বেশি তৎপর হতে হবে। বর্তমান ICAO এর কার্যক্রম যতটা যাত্রীবান্ধব তারচেয়ে বেশি পরিবহন সংস্থা বান্ধব। যেহেতু বর্তমান বিশ্বে যাত্রী এবং পণ্য দ্রুত পরিবহনের অন্যতম তথা প্রধান মাধ্যম আকাশপথ, সেহেতু আকাশ পরিবহন সংস্থা এবং যাত্রী সাধারণের মধ্যেকার দায় দায়িত্বসমূহ আরও বেশি সহজ সরল, সুনিার্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট উচিত। বিশেষ করে সাধারণ যাত্রী এবং সাধারণ পণ্য মালিককে সুরক্ষা প্রদান সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ বিশাল বিমান সংস্থার সামনে সাধারণ যাত্রী নিতান্তই অসহায়। সেহেতু ICAO এর প্রধান উদ্দেশ্য এবং কাজ হবে সাধারণ যাত্রীরা যেন তার অধিকার আদায়ে কিংবা তার ক্ষতিপূরণ আদায়ে কোনো প্রকার বাধা বিপত্তির সম্মুখীন না হয় সেটি দেখা। আকাশ পরিবহন কার্যক্রম পরিবহন সংস্থার লাভের জন্য নয়। বরং এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়ের ভ্রমণকারীদের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পরিচালিত।