চন্দন কান্তি নাথ:
আদালতের অধিবেশন নিয়ে অনেক কথা হয়। আইনজীবী এবং বিচারকগণের মধ্যে অনেক বোঝাপড়ায় সমস্যা হওয়ার ইতিহাস ও আছে। উচ্চ আদালত আলাদা রুলস নিয়ে পরিচালিত হয়। কিন্তু সেশন জজ এর অধিন ফৌজদারি আদালতের অধিবেশন সাধারণত ৯.৩০ ঘটিকায় বসার কথা আছে। কিন্তু কোথাও এটা হয় না। বিশেষ করে অনেক জায়গায় দূরবর্তী থানা হতে আসামি আদালতে ৯.৩০ ঘটিকার এর মধ্যে আসতে পারে না। আবার মামলায় বিভিন্ন স্টেপ নেয়ার বিষয়ও থাকে। তাই বিজ্ঞ আইনজীবীরা চান না আদালত নয়টা ত্রিশ ঘটিকায় বসুক। সে ক্ষেত্রে অনেক জায়গাতেই আদালত ১০.৩০ ঘটিকায় বসে থাকে। কিন্তু আদালতগুলো তাদের ডায়েরিতে ৯.৩০ ঘটিকা লিখে থাকেন। সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্যে আদালত। অথচ একটি আদালত শুরুতে মিথ্যে তথ্য দিয়ে শুরু করে। সেক্ষেত্রে মাননীয় হাইকোর্ট চাইলে একটি সার্কুলার দিয়ে বলে দিতে পারে যে, আদালতে ১০.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত রায় লিখন সহ অন্যান্য আদেশের কাজ সম্পন্ন করবে এবং ১০.৩০ ঘটিকায় আদালত বসবে। সেক্ষেত্রে ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডার ২০০৯ এর ৩(১) আছে, “ The ordinary hours of sitting for all Courts on week days shall be 9:30 a.m. to 4:30 p.m. or the hours prescribed by the High Court Division from time to time.”
উপরের “ or the hours prescribed by the High Court Division from time to time.” দ্বারা বুঝা যায়, মাননীয় হাইকোর্ট এর এ বিষয়ে ক্ষমতা আছে।সেক্ষেত্রে মাননীয় হাইকোর্ট ৯.৩০এর এর জায়গায় ১০.৩০ করতে পারে। কিন্তু অফিসটাইম নটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত অবশ্যই থাকবে।
আবার আদালতের সময় ৯.৩০ ঘটিকা হতে ৪.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত নির্ধারণ থাকলেও কোনো কোনো সময় কোনো মামলায় সময় ৪.৩০ ঘটিকায় শেষ নাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে রুল ৬ অনুসারে কোন মামলা রাত আটটা পর্যন্ত কিংবা জরুরী হলে তার ও বেশি সময় চলতে পারে। রুল ৬ তে আছে, “ The hearing of a case taken up before the closing hour of the Court may be continued for a short period after that hour, but no new case should be taken after the hour fixed for rising of the Court :
Provided that the hearing of case shall not be ordinarily continue after 8 p.m. save and except that a presiding judge may, in case of urgent necessity, for reasons to be recorded by him in the order sheet and the court diary, continue his sitting beyond that hour.”
তাছাড়া সাক্ষি একবার শুরু হলে প্রতিদিন চলতে হয়।ফৌজদারী কার্যবিধির ২৪৪(১) ধারা অনুসারে ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে বিচার মামলায় এক দিনে সকল সাক্ষী নিতে হয়। আর সেশন মামলায় সাক্ষিদের জবানবন্দি গ্রহণের জন্য ফৌজদারী কার্যবিধির ২৬৫চ ধারায় একটি তারিখ ধার্য করার কথা আছে। ২৬৫ছ ধারায় রাষ্ট্রপক্ষ এর সমর্থনে উপস্থিত সমস্ত সাক্ষ্যগ্রহণ করে অগ্রসর হওয়ার কথা আছে। ক্রিমিনাল রুলস এন্ড অর্ডার ২০০৯ এর রল ৩৩ অনুসারে সাক্ষি শুরু হলে প্রতিদিন লাগাতার নিতে বলেছে।খন্ড খন্ড সাক্ষ্য নিতে আইন বারন করেছে। পরের দিনের বাইরে অন্য তারিখ দিলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় কারন আদেশে উল্লেখ করতে হয়। রুল ৩৩ এ আছে, “When examination of witness has once begun in an enquiry or trial, the same shall continue from day to day until all witnesses in attendance have been examined. The court must avoid examining witnesses piecemeal unless the court finds the adjournment thereof beyond the following day to be necessary for reasons to be recorded in the order-sheet.” এমনকি মুলতবি রাস্ট্র পক্ষের বা আসামির দরখাস্ত এবং পর্যাপ্ত কারণ ছাড়া দেয়া যায় না।আর দিলে ও তা সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য দিতে আইন বলেছে।রুল ৩৪(২) বলা হয়েছে, “ No adjournment should be given in any case without a proper application by the prosecution or the defence and except on sufficient ground, and when an adjournment is granted, it should be for a brief period and, as far as possible, a short date should be fixed.”
শুক্রবার বা শনিবার অথবা বন্ধের দিনে আদালত বসে না৷কিন্তু পক্ষরা অনুমতি দিলে এবং অতীব প্রয়োজন হলে তাও সম্ভব। পক্ষের অনুমতি ব্যতীত এবং জরুরী প্রয়োজন ব্যতীত কোনো বিচার বা এনকোয়ারি বন্ধের সময় হয়না। তবে বিষয়টি বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট জরুরী মনে করলে এবং উক্ত বন্ধ বিচার বা ইনকোয়ারি এর অগ্রগতিতে ব্যাপকভাবে প্রভাব বিস্তার করলে আদেশে কারণ উল্লেখপূর্বক উক্ত বিচারক বা ম্যাজিস্ট্রেট পক্ষদের সম্মতি ছাড়াই বা ইনকোয়ারি বন্ধের সময় চালাতে পারেন। এমনকি ফৌজদারি আদালত ডিসেম্বরে ও বন্ধ হয় না। তার জন্য তাঁরা অন্য সময় এক মাসের বেতন অথবা এক মাসের ছুটি পেয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে সেশন আদালত মাননীয় হাইকোর্টের অনুমোদন ব্যাতিত ছুটিতে যেতে পারেন না।রুলসময় -৮,৯,১০
আবার আদালতের সকল পিটিশন টাইপ করে দিতে হয়।টাইপ না করলে সুন্দরভাবে এবং পড়া যায় মত করে লিখতে হয়। দরখাস্তের পাতার একদিকে লিখতে হয়। বাম পাশে চারভাগের একভাগ মার্জিন রাখতে হয়। উপরে এবং নিচে কমপক্ষে দেড় ইঞ্চি জায়গা থাকতে হবে ও তারিখ থাকতে হবে। আইন অনুযায়ী বিজ্ঞ আইনজীবীর সীল ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। যার দরখাস্ত তার সাক্ষর থাকতে হয়। আর আইনজীবী মুহুরী কিছু লিখে থাকলে সেখানে তার স্বাক্ষর ও লাইসেন্স নং থাকতে হবে এবং সর্বদা মনে রাখতে হবে কোন পিটিশন পরিষ্কারভাবে লিখিত না হলে বিজ্ঞ আইনজীবী কে তা ফেরত দেয়া যাবে এবং পিটিশন দাখিল করার সময় বিজ্ঞ আইনজীবী নিশ্চিত হবেন যে সঠিকভাবে পিটিশন লিখা হয়েছে। ব্যত্যয় ঘটলে বিজ্ঞ আইনজীবী ব্যক্তিগতভাবে দায়ী থাকবেন। একাধিক বিষয় একটি পিটিশনে উল্লেখ করা যাবে না। এমনকি একাধিক প্রার্থনা ও এক পিটিশনে থাকতে পারবে না।
তবে পিটিশন কোন আইনে দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই থাকবে। রুল ১৮(৩) বলা হয়েছে, “A petition shall, in addition to the particulars required by law, also contain the Acts and Sections or Rules or other authority under which it is presented.” আর ফৌজদারি কার্যবিধি সমর্থন না করলে কোন পিটিশন আদালত গ্রহণ করতে পারেন না। কাটাকাটি থাকলে বিজ্ঞ আইনজীবী তাতে ইনিশিয়াল দেবেন। পিটিশনে সিরিয়ালে পার্টিদের সকল নাম ও ঠিকানা এবং বর্ণনা অবশ্যই থাকতে হবে। সাধারণত সকল দরখাস্তের কপি, ডকুমেন্টের লিস্ট, বিশেষ করে মুলতবি দরখাস্ত অপরপক্ষকে দিতে হয়।না দিলে কপিসহ আদালতে জমা দিতে হয়।রুল ২২ এ আছে, “No adjournment petition, list of documents or applications which the Court may consider material shall ordinarily be filed unless copies thereof have previously been served on the Advocate for each set of parties whose interests are joined.”
আর মনে রাখতে হয় সকল পিটিশন আদালতের ১৫ মিনিট আগে অবশ্যই জমা করতে হবে। ভাল কারন না থাকলে আদালত আর পিটিশন গ্রহণ করে না।
আদালতে মুলতবি সংক্রান্ত আইন মেনে চলা উচিত। সংবিধানে দ্রুততার সাথে নিয়ে বিচার করার কথা উল্লেখ আছে।এটা বলবদযোগ্য মৌলিক অধিকার। সংবিধান, মুলতবি, অধিবেশন ও পিটিশন সংক্রান্ত আইন মেনে আদালত পরিচালনা হলে স্বচ্ছতা, পরিছন্নতা এবং দ্রুততার সাথে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হবে বলে আশা করা যায়।
লেখক- সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট, কুমিল্লা।