বোনের চরিত্র নিয়ে মিথ্যা দুর্নাম রটনার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সাবেক প্রসিকিউটর সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ভাই শাহনেওয়াজ আহমেদ শিশিরের বিরুদ্ধে বিচার শুরু করেছেন আদালত।
২০১৭ সালের আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ২০১৯ সালের ১৪ জুন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের মা ও ভাই, তুরিন আফরোজের উত্তরাস্থ বাস ভবনে জোর পূর্বক প্রবেশ করার চেষ্টা করে। ভবনের নিরাপত্তা কর্মীরা বাঁধা প্রদান করলে, তুরিনের ভাই শাহনাওয়াজ শিশির ও মা শামসুন্নাহার দিলু, তুরিন আফরোজকে প্রাণনাশসহ নানারূপ অশালীন হুমকি প্রদান করে। সংবাদ সম্মেলনে করারও হুমকি দেন।
ওই দিনেই আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে তুরিন আফরোজের বাস ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করতে চাওয়ার জন্য এবং তুরিন আফরোজকে প্রাননাশসহ নানারূপ অশালীন হুমকি দেয়ার কারণে উত্তরা পশ্চিম থানাতে নিজের মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে একটি পালটা জিডি করেন তুরিন আফরোজ।
২০১৭ সালে পিতার মৃত্যুর ৫৮ দিন পরে তুরিনের ভাই ও মা তুরিনকে তার উত্তরাস্থ বাসভবন থেকে উৎখাত করার লক্ষ্যে একটি উৎখাত নোটিশ প্রদান করে এবং নিজেরা ও লোক মারফৎ নানারূপ ভয় ভীতি ও বর্ণনাতীত অত্যাচার করতে থাকে তুরিনের পরিবারের ওপর। তুরিন আদালতের শরণাপন্ন হলে, ২০১৭ সালের মে মাসে আদালত তুরিনের মা ও ভাইয়ের ওপর তুরিনের উত্তরাস্থ বাসভবনে প্রবেশের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী করে।
আদালতের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে সম্পূর্ণভাবে অবহিত হওয়ার পরও তুরিনের মা ও ভাই তুরিনের উত্তরাস্থ বাসভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করার চেষ্টা করে এবং তুরিনকে অপরাধমূলক ভয় ভীতি প্রদর্শন করে। ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের মা ও ভাই একটি সংবাদ সম্মেলন করে জাতির সামনে মিথ্যা দাবি করেন যে, উচ্ছৃঙ্খল ও বেপরোয়া জীবন-যাপনে বাঁধা প্রদান করায় ২০১৯ সালের ১৪ জুন তারিখে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তার মা ও ভাইকে তার উত্তরাস্থ বাড়ি থেকে মারধোর করে বের করে দিয়েছেন। সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারটি সকল মূলধারার গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। বেশ কয়েকটি ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে লাইভও দেখানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনের বিষয়টি নিয়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি সেই সময় গণমাধ্যমকে বলেন, বিষয়টি পারিবারিক এবং সংবেদনশীল। আমি আইনের উপর আস্থাশীল। দেখা যাক, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলে কি তদন্ত প্রকাশ করে। তবে আমি আমার মা ও ভাইকে নিয়ে কোন বিরূপ মন্তব্য করতে চাইনা। তারা আমার পরিবার। তাদের মান-সম্মানের সাথে আমার মান-সম্মান জড়িত।
পরবর্তীতে তদন্তে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের করা জিডির (জিডি নং – ৭৭৯/১৯) সত্যতা প্রমাণিত হয়। ফলে তদন্তকারী কর্মকর্তা ২০১৯ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তুরিন আফরোজের মা ও ভাইএর বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম থানার নন এফ আই আর নং-১১৯/১৯ মামলা রজু করেন। ঢাকার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট মামলাটি আমলে নেয়। ২০২০ সালের ২৭ নভেম্বর আসামি শাহ নাওয়াজ শিশিরের বিরুদ্ধে এরেস্ট ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়।
শাহনাওয়াজ শিশির পলাতক থাকায় ঢাকার বিজ্ঞ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট ২০২১ সালের ১০ জানুয়ারী আসামি শাহনাওয়াজ শিশিরের বিরুদ্ধে প্রক্লেইমেশন এবং আটাচমেন্টের (P/A) অর্ডার ইস্যু করে। বর্তমানে মামলাটি চার্জ শুনানির জন্য ধার্য করা আছে আগামী ৭ ডিসেম্বর।
আদালতের কার্যক্রম থেকে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ তাঁর মা ও ভাইকে নিজ বাসভবন থেকে মারধোর করে কখনই বের করে দেন নি। বরং তার মা ও ভাই তুরিন কে তাঁর বাসভবন থেকে অন্যায়ভাবে উৎখাত করার অপচেষ্টা করেন। অসফল হলে মিথ্যা জিডি করেন এবং সংবাদ সম্মেলন করে তুরিনের চরিত্র নিয়ে জাতীয় গণমাধ্যমে কুৎসা রটনা করে তাকে সামাজিক ভাবে হেয় প্রতিপন্ন করেন।
এখানে উল্লেখ্য যে, দণ্ডবিধির ৫০৬ ধারা অনুযায়ী কোন ব্যাক্তি যদি অন্য কাউকে প্রাণনাশের হুমকি বা কোন স্ত্রীলোকের সতীত্ব নষ্ট হয়েছে বলে দুর্নাম করার হুমকি প্রদান করে, তবে সেই ব্যাক্তি সাত বছর পর্যন্ত যে কোন বর্ণনার সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে অথবা অর্থদণ্ডে কিংবা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবে।