বনানীর রেইন্ট্রি হোটেলে ধর্ষণ মামলার রায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি বলে জানিয়েছে নারীরা। তাই আগামী রবিবার সকালে আদালত প্রাঙ্গনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ জানাবে তারা। বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) দিবাগত রাতে রাজধানীতে যৌন নিপীড়ন এবং ধর্ষণবান্ধব সাক্ষ্য আইনের ১৫৫(৪) ধারা বাতিলের দাবিতে ‘শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা’র পর সংসদ ভবনের সামনে এক প্রতিবাদ সমাবেশে এই কর্মসূচি ঘোষণা করে তারা।
এদিন রাতে শাহবাগ জাদুঘরের সামনে থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। পরে এটি সিটি কলেজ, কলাবাগান হয়ে মানিক মিয়া এভিনিউতে গিয়ে শেষ হয়। গৃহ, কর্মস্থল, গণপরিবহনে নারীর জন্যে নিরাপদ বাসযোগ্য পরিবেশ নিশ্চিত করতে ‘শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা’ নামক ওই প্রতিবাদ কর্মসূচি আয়োজন করেন বিভিন্ন শ্রেণী পেশার নারীরা। এ সময় তারা নানা স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
সমাবেশে নারীরা ৭২ ঘন্টার মধ্যে ধর্ষণের ঘটনা রিপোর্ট না হলে মামলা না নেওয়ার পরামর্শের সমালোচনা করেন। এ সময় আদালতের রায়ে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয়নি এমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে রবিবার আদালত প্রাঙ্গনে অবস্থান করে প্রতিবাদ জানানোর ঘোষণা দেওয়া হয়।
পদযাত্রা শুরুর আগে ‘শেকল ভাঙ্গার পদযাত্রা’র সংগঠক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী প্রাপ্তী তাপসী বলেন, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, রাজনৈতিক মতাদর্শ নির্বিশেষে শুধুমাত্র লৈঙ্গিক পরিচয় ‘নারী’ হওয়ার কারণে যে জুলুম, অত্যাচার, বৈষম্য সহ্য করতে হয় প্রতিনিয়ত, নিপীড়নের বিচার চাইতে গেলে যেখানে ক্যারেক্টার সার্টিফিকেট দেখাতে বলে এই রাষ্ট্র। তার বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রতিবাদ। অনতিবিলম্বে সাক্ষ্য আইন ১৮৭২-এর ১৫৫(৪) ধারাটি বাতিল করার সুস্পষ্ট দাবি নিয়ে নারীদের এই পদযাত্রা।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই ধরণের অবমাননাকর এবং বিদ্বেষমূলক চর্চা আমরা দেখতে পাই যেগুলোর মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি নিপীড়নের বৈধতা দান করা হয়। আমাদের এই পদযাত্রা এই চর্চাকে আঙুল দেখানোর জন্য। এই ব্যারিকেড আমরা ভাঙতে চাই।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে ধর্ষণ হলো একমাত্র অপরাধ, যেখানে অপরাধ ঘটার পর অপরাধের বিচারের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় অপরাধের শিকার নারীর চলন-বলন ও পোশাকের দিকে। প্রতিটা ধর্ষণের অভিযোগের পর সমাজের আচরণ দেখে মনে হয়, যেন এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার বৈষম্যমূলক মানদণ্ড অনুযায়ী নারীর চলন-বলন ঠিক না থাকলে তার সঙ্গে অন্যায় হওয়াটাই স্বাভাবিক।
প্রতিবাদ সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী শিরীন হক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ, সঙ্গীতশিল্পী কৃষ্ণকলিসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।