প্রতিষ্ঠার পর গত এক বছরে সাইবার অপরাধের শিকার ৮ হাজার ২২১ নারীকে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা প্রদান করেছে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন। এ সময় ১৭ হাজার ২৮০ জন ভুক্তভোগী নারী যোগাযোগ করেছেন। যার মধ্যে ১২ হাজার ৬৪১ জন নারী ভুক্তভোগী হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন।
পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের হল অব ইন্টেগ্রিটিতে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গতকাল মঙ্গলবার (১৬ নভেম্বর) এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
পুলিশের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ১৬ নভেম্বর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের যাত্রা শুরু হয়। সম্পূর্ণ নারী পুলিশ পরিচালিত এ সার্ভিসে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১৭ হাজার ২৮০ জন ভুক্তভোগী নারী যোগাযোগ করেছেন। যার মধ্যে ১২ হাজার ৬৪১ জন নারী ভুক্তভোগী হয়রানির শিকার হয়ে যোগাযোগ করেছেন। এর মধ্যে ৮ হাজার ২২১ জনের অভিযোগের বিষয়ে প্রযুক্তিগত ও আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
প্রাপ্ত অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া আইডি ব্যবহার করে হয়রানি করার অভিযোগ সবচেয়ে বেশি যা মোট অভিযোগের ৪৩ ভাগ।
নারীর প্রতি সাইবার স্পেসে অপরাধের ধরণ পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ভুয়া আইডি থেকে মেসেজ/তথ্য প্রকাশ করে হয়রানি, আইডি হ্যাক করে হয়রানি, ভুক্তভোগীর ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইলিং, মোবাইলে কল করে হয়রানি, আপত্তিকর ছবি/ভিডিও/ মেসেজ পাঠিয়ে হয়রানি ইত্যাদি।
ভুক্তভোগী নারীদের বয়স পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ভুক্তভোগীদের শতকরা ১৬ ভাগের বয়স ১৮ বছরের কম। শতকরা ৫৮ ভাগ ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী। ২৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ভুক্তভোগী শতকরা ২০ ভাগ এবং ৬ ভাগ ভুক্তভোগীর বয়স ৪০ বছরের বেশি।
আর অভিযোগসমূহ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, প্রাথমিক তথ্যানুসন্ধানে অভিযুক্তদের শনাক্ত করা সম্ভব হলেও অধিকাংশ ভুক্তভোগী পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ হিসেবে মামলার প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হতে আগ্রহী হননি। তারা শুধু আইডি বন্ধ করে বা মেসেজ ডিলিট করে সমস্যা সমাধান করতে চেয়েছেন।
এছাড়া ভুক্তভোগীদের মধ্যে মাত্র ১২ ভাগ আইনগত ব্যবস্থা হিসেবে জিডি বা মামলা করেছেন যার মধ্যে মাত্র ১৩ ভাগ ভুক্তভোগী অভিযুক্তের পরিচয় ও অবস্থান শনাক্ত করার পর অভিযুক্তের বিরুদ্ধে পরবর্তী আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
এ সময় পুলিশ প্রধান বলেন, সাইবার ওয়ার্ল্ড আমাদের জীবন সহজতর করেছে। পাশাপাশি এ কথাও সত্য টেকনোলজি ব্যবহার করে অপরাধীরা এর সুযোগ নিয়ে নানা অপরাধ করছে।
তিনি বলেন, এখন শুধু শহরের মানুষ নয়, গ্রামের মানুষও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করছেন। এতে করে অনেকে সাইবার বুলিং বা সাইবার অপরাধের শিকার হচ্ছেন। শুধু ব্যক্তি বা সমাজ নয়, অনেক সময় রাষ্ট্রও এর ভিকটিম হচ্ছে।
আইজিপি বলেন, নারীরা বেশীরভাগ ক্ষেত্রে সাইবার বুলিংয়ের শিকার হচ্ছেন। এটা দিন দিন বাড়ছে। একজন নারী যখন সাইবার হামলার শিকার হন তখন ওই নারী এবং তার পরিবারে কী বিপর্যয় নেমে আসে তা ভুক্তভোগীই জানেন।
তিনি বলেন, আমরা সাইবার অপরাধের শিকার নারীদের সেবা দেয়ার জন্য এ সার্ভিস চালু করেছি। ইতোমধ্যে এ সার্ভিসের মাধ্যমে অনেক নারীকে সেবা প্রদান করা হয়েছে।
ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে অধিকতর সতর্ক হওয়ার আহবান জানিয়ে ফেসবুকসহ অন্যান্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত বা স্বল্প পরিচিত বা পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কোন ব্যক্তিকে অ্যাকসেস না দেয়ার আহবান জানান।
অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্বল্প পরিচয়ের সূত্র ধরে কারো সাথে বাইরে বের হলে এর ঝুঁকিও রয়েছে বলে উল্লেখ করেন। ড. বেনজীর পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসের মাধ্যমে ভুক্তভোগী নারীদের সহযোগিতা দেয়ার জন্য ইউনিটকে ধন্যবাদ জানান।
অনুষ্ঠানে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের অতিরিক্ত আইজিগণ, ঢাকাস্থ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের প্রধানগণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিস থেকে সেবা পাওয়া কয়েকজন নারী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সেবা পাওয়া ভুক্তভোগী নারীরা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলেন, একজন মেয়ে বা নারী যখন সাইবার হামলার শিকার হয়, তখন ওই পরিবারের কী অবস্থা হয় তা ভুক্তভোগীরাই জানেন।
তারা বলেন, পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন সার্ভিসে সাপোর্টের জন্য যোগাযোগের পর তারা অনেক দ্রুত সেবা পেয়েছেন এবং তাদের সমস্যার সমাধান হয়েছে। এ সার্ভিস থেকে শুধু আইনি সহায়তাই নয়, তাদেরকে মানসিক সহায়তাও দেয়া হয়েছে।